173748

পরিষ্কার বিবির সেই ১৫ লাখি রাজা বাবু কি বিক্রি হয়েছে?

সাটুরিয়ার সেই দেড় টনের ওজনের ষাঁড় গরুটির উপযুক্ত দাম না পাওয়ায় এবারের ঈদে বিক্রি হয়নি। স্কুল ছাত্রী ইতি আক্তার ও তার মা পরিষ্কার বিবির আলোচিত রাজা বাবু বিক্রি না হওয়ায় কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তবে পরিষ্কার বিবির খান্নু মিয়াআগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, দেড় টনের ওজনের এ ষাঁড়টি অন্তত ১৫ লাখ টাকা না পেলে এ বছরও বিক্রি করবেন না। তিনি তার ঘোষণায় অনড় ছিলেন। শেষ দিন শুক্রবার ১৪ লাখ পর্যন্ত দাম ওঠেছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। পরিষ্কার বিবি এবং ইতি আক্তার বিক্রির ব্যাপারে নিমরাজি থাকলেও খান্নু মিয়া অনড় থাকায় অবিক্রিতই রয়ে গেল।

মানিকগঞ্জে দেড় টন ওজনের ষাঁড় গরু লালন করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন জেলার সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রামের পরিষ্কার বিবি ও তার স্কুল পড়ুয়া কন্যা ইতি আক্তার। এ শিরোনামে নয়া দিন্তন অনলাইন ১৪ আগস্ট ও প্রিন্ট পত্রিকায় ১৫ আগস্ট প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ১ সেপ্টেম্বর নয়া দিগন্ত অনলাইনে আবার প্রকাশিত হয়। ষাঁড়টি নিয়ে খবর প্রকাশিত হওয়ার পরই সারা দেশেই এ সংবাদটি ভাইরাল হয়ে যায়। ১৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশের জনপ্রিয় টিভি, প্রিন্ট পত্রিকা ও অনলাইনে প্রকাশিত হয়।

এর পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক্ এবং ইউটিউব ব্যাপক প্রচারের পর সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্জল থেকে ৩৯ মণ ওজনের ষাঁড়টি দেখার জন্য ভিড় করে।

সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলীয়া ইউনিয়নের দেলুয়া গ্রামের পরিষ্কার বিবি ও তার স্কুল পড়ুয়া কন্যা ইতি আক্তার। গরু লালন পালন করেই তাদের সংসার চলে। গেল বছর কোরবানি ঈদে ২৭ মন ওজনের একটি ষাঁড় ১০ লাখ টাকা বিক্রি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। অবশ্য ১০-১২ বছর আগে থেকেই পরিষ্কার বিবি ও তার স্বামী খান্নু মিয়া গরু লালন-পালন করতেন। কিন্তু তার কন্যা ইতি আক্তার দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণ করা শুরু করেন। আর ১ম বছরেই লাভবান হওয়ায় এ বছর তিনি আরো বড় আকৃতির গরু কিনে মোটাতাজকরণ শুরু করেন।

এ ব্যাপারে ইতি আক্তার জানান, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে রাজা বাবুকে লালন করেছি। রাজা বাবু লম্বায় ৭ ফুট ৩ ও ৯ ফুট ১ ইঞ্চি বেড়ের এ ষাঁড়টির দাঁত আছে ৪টি। বর্তমান ওজন ১৫৬৬ কেজি (৩৯ মণ)। প্রাণী সম্পদ অফিসের ডাক্তার এসে ওজন করেছেন।

ঈদের আগের দিন ইতি আরো জানান, আমাদের রাজা বাবু লিখে ফেসবুক, গুগল ও ইউটিউবে সার্চ দিলেই শত শত লিংক চলে আসে। ১৫/১৬ দিন ধরে সারা দেশি বিদেশ থেকে অসংখ ফোন আসে। প্রতিদিন বিভিন্ন জেলা থেকে যানবাহন ভাড়া করে একবার দেখতে আসছে রাজা বাবুকে দেখার জন্য।

অন্তত ৫০টির মতো বড় বড় কোম্পানির লোক রাজা বাবুকে দেখে দাম বলে গেছে এবং মোবাইল নাম্বার নিয়ে যায়। কিন্তু ভালো দাম পাচ্ছি না বলে বাবা রাগ করে ষাঁড়টিকে বিক্রি করবেন না বলে জানিয়েছেন।

ষাঁড়ের মালিক খান্নু মিয়া জানান, গাজীপুর থেকে একটি কম্পানি ১৩ লক্ষ টাকা দাম বলে গেছে। সে এখনো নিতে চাচ্ছে কিন্তু ১৫ লক্ষ টাকা না হলে সে বিক্রি করবেন না। তিনি শুক্রবার বিকেলে জানান, একজন তাকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ১৪ লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি রাজি হননি।

এ ব্যাপারে পরিষ্কার বিবি জানান, আমার পরিবারের ৪ জন সদস্য ৩ বছর বয়সী ফিজিয়ান জাতের এ ষাঁড়টি এক বছর ধরে অনেক কষ্ট করে লালন পালন করেছি। গ্রাম থেকে চড়া সুদে টাকা এনে রাজা বাবুকে লালন পালন করেছি। তাই কম দামে কেমনে দেই?

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা মোঃ খুরশেদ আলম বলেন, ঈদকে সামনে রেখে সাটুরিয়া ইতি ও পরিষ্কার বিবির লালিত এ ষাঁড়টির ওজন আমি নিজে মেপেছি। ১৩ আগস্ট পযন্ত ষাঁড়টি ওজন ১৫৬৬ কেজি, যা ৩৯ মণ ও দেড় টনেরও বেশি ছিল। আমরা নিয়মিত এ গরুটির দেখভাল করেছি। কিন্তু এ আলোচিত ষাঁড়টি বিক্রি না করতে পারলে তাদের অনেক বড় লোকসান হয়ে যাবে বলে মনে করছেন এ প্রাণী সম্পদের কর্মকর্তা।

ইতি আক্তার ও পরিষ্কার বিবি তার শখের ফিজিয়ান জাতের ষাঁড় “রাজা বাবু”-র শুক্রবারও বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন। তবে উপযুক্ত দাম না পেলে আরো একটি বছর রাজা বাবুকে লালন পালন করবেন।

ad

পাঠকের মতামত