‘সৃষ্ট বন্যার জন্য ভারতেরও দায় আছে, প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া হবে’
নিউজ ডেস্ক।। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমির ডা. শফিকুর রহমান সাম্প্রতিক বন্যা নিয়ে বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক নদীর মধ্যে বাঁধ দেওয়া অন্যায়।
বাঁধ দিয়ে তারা (ভারত) শুকনা মৌসুমে পানি আটকিয়ে রেখে সুবিধা নেয়, আবার বর্ষার সময় পানি জমিয়ে একসঙ্গে ছেড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ভাসিয়ে দেয়। এটা চলতে দেওয়া হবে না। সৎসুলভ প্রতিবেশী হিসেবে আমরা তাদের কাছে এটি আশা করি না।
তিনি বলেন, সৃষ্ট বন্যার জন্য প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও দায় আছে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া হবে। এ দেশ সিকিম-ভুটান নয়, এখানে কারো জমিদারি চলবে না।
শনিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নে বন্যার্ত মানুষের মাঝে উপহার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘বছর বছর আমাদের নদীর এই বাঁধ ভাঙে কেন, চোর-ডাকাত-প্রতারকদের কারণে ভাঙে। জনগণের কষ্টের ট্যাক্সের টাকা নদী শাসন রক্ষার জন্য দেওয়া হয়। কিন্তু সঠিকভাবে কাজ না করে ডাকাতদের পকেটে বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা চলে যায়। এ কারণে নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঠিকমতো দেওয়া হয় না।
ওপরের ডাকাতনি থেকে শুরু করে নিচের সব ডাকাত পর্যন্ত একটা চেইন সিন্ডিকেট ছিল। যার কারণে বছরে বছরে নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যা হলে জনগণের কপালে প্রতিবছর দুর্ভোগ আসে। যদি নদী খনন ও বাঁধ নির্মাণ ঠিকমতো করা হতো, তাহলে আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না। যার কারণে মানুষের জানমালের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘১৮ কোটি মানুষের দেশ সম্প্রীতির বাংলাদেশ।
এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের মধ্যে সম্প্রীতি রয়েছে। কোনো অপশক্তি সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পারবে না। সংখ্যাগুরু, সংখ্যালঘু বলে জাতিকে বিভক্ত করা যাবে না। আমরা সবাই মিলে এ দেশটাকে নতুন করে গড়ে তুলব। ৫ আগস্ট হিমালয় পর্বত কিভাবে ধসে পড়ল, কিভাবে পরিবর্তন হলো। আমরা বলি আল্লাহর ইচ্ছায় সব কিছু সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগের লম্পট মন্ত্রী-এমপি এত কুকর্ম করেছে যে তারা এখন বন-জঙ্গলেও আশ্রয় পাচ্ছে না, এখন খালে-বিলে লুকিয়ে থেকেও রেহাই পাচ্ছে না। মানুষ জাল দিয়ে যেভাবে মাছ ধরে সেসব দুষ্কৃতকারীকে এখন পলো দিয়ে ধরা হচ্ছে। ইতিমধ্যে তাদের অনেকের পাপের বিচার শুরু হয়েছে। আগামীতে আরো হবে। আল্লাহ জালিমদের ছাড় দেনৎ, কিন্তু ছেড়ে দেন না।’
তিনি দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘৫ আগস্ট জালিম সরকার বিদায় নিয়েছে। আমরা এখন দেশটাকে গঠন করব। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সহযোগিতা করব। গত সাড়ে ১৫ বছর একটি দলের ওপর যে রকম জুলুম-নির্যাতন করা হয়েছে, সে জুলুম বাংলাদেশের অন্য কোনো দলের ওপর করা হয়নি। সেই দলটার নাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এই দলের দায়িত্বশীল শীর্ষ ১১ জন নেতাকে অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথায় হত্যা করা হয়েছে।
ছাত্রলীগ ও পুলিশ অতীতে যা করেছে তার জন্য তারা শিক্ষা পাচ্ছে। পুলিশ, ছাত্রলীগসহ অন্যান্য লীগ দিয়ে জালিম আওয়ামী সরকার সবচেয়ে বেশি নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের ওপর। তাদের পতনও হয়েছে সেভাবে। আমাদের দলের নেতৃবৃন্দের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়ি লুটপাট করেছে এবং বুলডোজার দিয়ে ভেঙে চুরমার করেছে। এর পরও আপনারা কোনো প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা করবেন না। আমরা কারো ওপর প্রতিশোধ নেব না। এক জলুম তন্ত্রের পরে আরেক জুলুমতন্ত্র চাই না।’
তিনি বলেন, ‘আমার জন্মমাটি কুলাউড়া আজ ভালো নেই। সব কিছু পানির নিচে। মৃত মানুষের দাফনের কোনো জায়গা নেই। সব দিকে পানি আর পানি।’ তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটাবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে বিভিন্ন এলাকায় যাওয়া এবং ঢাকায় হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সঙ্গে বৈঠকের কারণে কুলাউড়ায় বন্যাদুর্গতের খোঁজখবর নিতে দেরিতে আসায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।