টাকার বালিশে ঘুমাতে পারবে না পাচারকারীরা
নিউজ ডেস্ক।। অর্থ পাচারকারীরা শান্তিতে থাকতে পারবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, তাদের এখন আর টাকার বালিশে ঘুমাতে দেয়া হবে না। বুধবার দা?য়িত্ব নেয়ার প্রথম দিন বাংলাদেশ ব্যাংকে বোর্ড মিটিংয়ে সংবাদ সম্মেলনে অর্থ পাচারকারীদের এ হুঁশিয়ারি দেন গভর্নর। তিনি বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় সব খাতের মতো বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকিং খাতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এতে পুরো অর্থনীতি খারাপ তো হয়েছে ব্যাংকিং খাত অধঃপতনে গেছে রাজনীতির মতো।
নতুন গভর্নর বলেন, শুধু সরকার, বাংলাদেশ ব্যাংক একা নয়, আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তা নিয়ে অর্থ পাচারকারীদের ধরতে হবে। আমরা এমন একটা সিচ্যুয়েশন তৈরি করবো, যারা টাকা নিয়ে গেছে তারা যেন কষ্টে থাকে। তারা টাকার বিছানায় বালিশ দিয়ে যেন না ঘুমাতে পারে এ ব্যবস্থা করবো। একটু দৌড়াদৌড়ির মধ্যে থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক আইন এখন কিছুটা সহায়ক আছে, এটাকে কাজে লাগাতে হবে। টাকা আসুক আর না আসুক তাদের কষ্টে রাখবো।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। সুতরাং এই দায়িত্ব আমরা চাই বা না চাই আমাদের ঘাড়ে আসবেই।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সফলতা বা ব্যর্থতা আন্তর্জাতিকভাবে দুটো বিষয়ের ওপর নির্ধারণ করা হয়। প্রথমটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ এবং দ্বিতীয়টি রিজার্ভের অবস্থান। এগুলো গুরুত্ব দিতে হবে। যেহেতু এখন মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী অপরদিকে রিজার্ভ নিম্নমুখী অবস্থায় আছে, তাই এই দুটোকে সমন্বয় করে আমাদের নীতি নির্ধারণ করতে হবে। যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সূচক দুটিকে মাঝামাঝি অবস্থায় আনতে পারি। তবে রিজার্ভ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমদানির বিষয়ও নজর দিতে হবে। আমদানি-রপ্তানি সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি কমানো, চাঁদাবাজি কমিয়ে আনা এবং উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলে ধীরে ধীরে পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতিকে আমরা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারবো। এটাই আমরা আশা করছি। আর্থিক খাতের দুর্বলতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়ী উল্লেখ ক?রে নতুন গভর্নর বলেন, বর্তমানে আর্থিক খাত খুব বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। এরমধ্যে ব্যাংক খাত অন্যতম। বেশির ভাগ ব্যাংক ভালো থাকলেও কয়েকটি ব্যাংক খারাপ অবস্থায় আছে, তাদের বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। এটি করতে গেলে সরকাররের সহায়তা লাগবে। কারণ দুর্বল ব্যাংকগুলোর মূলধন প্রয়োজন হবে। এই অর্থ সরকার দে?বে নাকি বেসরকারি খাত থেকে আসবে এটা সরকা?রের সিদ্ধা?ন্তের বিষয় রয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর জানান, ব্যাংকের খেলাপি ঋণের তথ্য একত্রিত করতে হবে। কারণ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতে অনেক টাকা আটকে আছে। সবমিলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে। পরিদর্শন শেষে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আসার আগেই পরিদর্শন প্রতিবেদন বদলে যাওয়ার বিষয়টি আর প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন নতুন গভর্নর। মাঠের প্রতিবেদন উপরে আসবে এবং মধ্যবর্তী কর্মকর্তারা পরামর্শ দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংককে আন্তর্জাতিকমানে নিয়ে যাওয়া হবে বলে অঙ্গীকার করেছেন ড. আহসান এইচ মনসুর।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে ৫ই আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমে টানা ১৬ বছর আওয়ামী লীগের ক্ষমতার অবসান ঘটে। সরকারের পতনের পর গত ৯ই আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেন। তিনি এখনো পলাতক আছেন। লুকিয়ে থাকা অবস্থায় হোয়াটস অ্যাপে পদত্যাগ পত্র জমা দেন। এরপর ১৩ই আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর হিসে?বে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর?কে ৪ বছরের জন্য দেশের ১৩তম গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। উৎস: মানবজমিন।