364979

‘আমার স্বামীরে কেন মারল’ অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর জিজ্ঞাসা

নিউজ ডেস্ক।। পেশায় লেগুনা চালক স্বামী আসাদুল্লাহর মৃত্যু শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নুরানী খাতুন (২০)।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতায় রাজধানীতে নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শেরপুরের আসাদুল্লাহ (২৫)। তীব্র অভাব-অনটনের মধ্যে একমাত্র সন্তানের মৃত্যুতে নিহতের বাবা এখন দিশেহারা। পেশায় লেগুনা চালক স্বামীর মৃত্যুতে শোকে মূর্ছা যাচ্ছেন ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নুরানী খাতুন (২০)। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর কোনো দোষ ছিল না।

কেন তারে মারল? অহন আমার পেটের বাচ্চাডারে কে দখব?’
গতকাল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিন চাউলিয়া গেলে এসব কথা বলেন নুরানী খাতুন।

তিনি জানান, প্রায় ১১ মাস আগে তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর জীবিকার তাগিদে স্বামীর সঙ্গে যান ঢাকায়। উত্তরার দক্ষিণখানের মাজার রোডে ভাড়া বাসায় থাকতেন তারা।

সেখানে ভাড়ায় লেগুনা চালাত আসাদুল্লাহ। এরমধ্যে গত ৮ মাস ধরে অন্তঃসত্ত্বা তিনি। সন্তানকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকলেও মেঘে ঢাকা পড়ে সবকিছু। সুখের সংসারে নেমে আসে অমানিশা।

নুরানী খাতুন শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা ইউনিয়নের পশ্চিম চাউলিয়া গ্রামের জয়নুদ্দীনের ছেলে আসাদুল্লার (২৫) স্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী ড্রাইভার। লেগুনা গাড়ি চালাইয়া সংসার চালাইতো। ওইদিন গাড়ি নিয়ে বাসায় আসার সময় আন্দোলনের মধ্যে পড়ে যায়। তখন ওর গায়ে গুলি লাইগা মারা যায়।

অহন আমার পেটে বাচ্চা। এই বাচ্চা লইয়া কই যামু? কে আমগোরে দেখব? আমার সন্তানডা আর দুই মাস পর পৃথিবীতে আইব। কারে বাবা কইয়া ডাকব? আমি ওরে কেমনে মানুষ করমু?’
জানা যায়, গত ১৮ জুলাই দুপুরে খাবার খেয়ে লেগুনা নিয়ে বাসা থেকে বের হন আসাদুল্লাহ। সন্ধ্যায় লেগুনা নিয়ে বাসায় ফেরার পথে উত্তরার আজমপুর কাঁচাবাজারে কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে পড়ে যান তিনি। তার শরীরে কয়েকটি গুলি লাগলে তিনি মাটিতে পড়ে যান। পরে তাকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। তখন দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ‍নুরানী তার স্বামীর মৃত্যুর খবর পান। ঘটনার ১০ দিন পরও স্বাভাবিক হতে পারছেন না নুরানী। বার বার স্বামী হারানো শোকে মুর্ছা যাচ্ছেন। দূর থেকে অপলক দৃষ্টিতে দেখছেন স্বামীর কবর।

আসাদুল্লার বাবা জয়নুদ্দীন একজন দিনমজুর। তিনি বলেন, ‘লেগুনা নিয়ে ফেরার পথে তারে চারটা গুলি করা হয়। দুইটা গুলি দুই হাতে লাগে। একটা গুলি পেটের সামনে দিয়ে লেগে পিছন দিয়ে বের হয়। আরেকটা নাভির নিচে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের নিজের কোনো বাড়ি নাই, তাই পুলাডা ঢাকায় থাকত। পোলার বউয়ের ৮ মাসের বাচ্চা পেটে। কয়দিন পর বাচ্চা অইব। এহন আমার আর পোলা নাই। আমার একটাই পোলা ছিল। অহন পোলাডাই নাই।’ কথাগুলো বলতেই অঝোরে কাঁদছেন আসাদুল্লার বাবা।

প্রতিবেশী সুরুজ আলী বলেন, ‘সে কোনো রাজনীতি করত না। লেগুনা চালাইত। আন্দোলন কি সে জানত না। পেটের ভাত জোগাড়ে গাড়ি চালাত। সে গ্রামেই বিয়ে করে। পরে বউ নিয়ে ঢাকায় যায়। অহন লাশ হয়ে আইলো। ওর বউ গর্ভবতী। বাচ্চার মুখটাও দেখতে পারল না।’

এ ব্যাপারে শ্রীবরদী থানার অফিসার ইনচার্জ কাইয়ুম খান সিদ্দিকী বলেন, ‘ঢাকা থেকে চাউলিয়া গ্রামে লাশ আসার খবর পেয়ে আমরা তাদের তথ্য নিয়েছি।’

গড়জরিপা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল বলেন, ‘সে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিতে মারা গেছে। আমি ওর জানাজায় গিয়েছি। তার স্ত্রীকে সরকারি সুযোগ-সুবিধাসহ যেকোনো সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করব।’ উৎস: কালের কণ্ঠ।

ad

পাঠকের মতামত