সন্তানদের নিয়া নিঃস্ব হয়ে গেলাম, শিশুটি বার-বার বলছে বাবা ফিরে আসবে!
ডেস্ক রিপোর্ট।। ‘স্বামীর মৃত্যুতে সন্তানদের নিয়া নিঃস্ব হয়ে গেলাম। পরিবারে আর উপার্জনের মানুষ না থাকায় ছেলে-মেয়েদের দেখাশোনার কেউ রইল না। মেয়েটি বারবার বাবা বাবা বলে কান্না করছে। এখন আমাদের সংসার চালানোর মতো আর কেউ রইল না।
’কান্নাজড়িতকণ্ঠে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন গত শনিবার (২০ জুলাই) রাজধানীর বাড্ডায় সহিংসতায় গুলিতে নিহত কামাল হোসেন সবুজের (৩৮) স্ত্রী সাদিয়া বেগম রানু। কামাল হোসেন একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের গাড়িচালক ছিলেন।
গত মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে ঝালকাঠি সদরের আগরবাড়ি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কামালের অবুঝ ছোট ছেলেটা বাবার পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে মায়ের পাশে বসে আছে। শিশুটি বারবার বলছে, বাবা ফিরে আসবে।
শিশুটির অপর দুই ভাই-বোন পাশে বসে কান্না করছে।
সাদিয়া বানু আরো বলেন, ‘ছেলে-মেয়েদের নিয়ে ঝালকাঠি শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতাম। এখন আমাদের থাকার জায়গা নেই। আমরা সরকারের কাছে সহযোগিতা চাই, যাতে আমি ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি।
নিহত কামাল হোসেনের বড় ছেলে ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া সামিউল ইসলাম (১৩) এই প্রতিবেদককে বলে, ‘আমার বাবার আয়ে আমাদের তিন ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচসহ সংসার চলত। এখন আমাদের বাবা নেই। আমাদের খরচ চালাবে কে! আমরা অসহায় হয়ে গেলাম।’
জানা যায়, গত ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর শাহজাদপুর এলাকার ভাড়া বাসা থেকে নাশতা খেতে বের হয়েছিলেন কামাল হোসেন সবুজ। এ সময় হঠাৎ তার মাথায় লাগলে ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন।
তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের গাড়িচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
কামাল হোসেনের বাড়ি ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের বালকদিয়া গ্রামে। তিনি ওই এলাকার মুনসুর হাওলাদারের ছেলে। তার দুই ছেলে ও তিন বছরের একটি মেয়েসন্তান রয়েছে।
কামাল হোসেন সবুজের স্ত্রী সাদিয়া বেগম রানু জানান, আমার স্বামী আমাকে বলে গেছেন, তিনি মারা গেলে তাকে যেন তার জন্মস্থান বিনয়কাঠিতে মাটি না দিয়ে ঝালকাঠিতে কোথাও মাটি দেওয়া হয়। তাই তাকে আমার বাবার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।
কামালের স্ত্রীর ভাই রিপন হাওলাদার বলেছেন, ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঢাকায় গিয়ে লাশ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসি। আমার বোনটি বিধবা হয়ে গেল। ওদের আহাজারি দেখে আমরা কান্না ধরে রাখতে পারছি না।
গত শনিবার (২০ জুলাই) রাত সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকার বাড্ডা থেকে কামালের লাশ ঝালকাঠি সদর উপজেলার আগড়বাড়ি এলাকায় নিয়ে আসা হয়। পরদিন রবিবার (২১ জুলাই) সকাল সাড়ে ৮টার আগড়বাড়ি বাজার মসজিদের সামনে জানাজার নামাজ শেষে সকাল ৯টার পশ্চিম আগড়বাড়ি জুম্মা কোবা মসজিদের কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। উৎস: কালের কণ্ঠ।