363359

অধ্যক্ষকে ডেকে নিয়ে হকিস্টিক দিয়ে পেটালেন এমপি

ডেস্ক রিপোর্ট।। রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে এক কলেজ অধ্যক্ষকে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর জখম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রায় ১৫ মিনিট সময় ধরে সবার সামনে অধ্যক্ষকে পেটানোর ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তবে এমপি ফারুক চৌধুরী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

ভুক্তভোগী সেলিম রেজা রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ। এমপি ফারুক চৌধুরীর বেপরোয়া লাথি, কিল-ঘুসি ও হকিস্টিকের আঘাতে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালশিরা জমেছে।

ঘটনার আকস্মিকতায় এখনও আতঙ্কিত ওই শিক্ষক। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে রাজশাহী নগরীর রায়পাড়ার বাসায় পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করছেন। লজ্জা ও আতঙ্কে কোথাও অভিযোগ করেননি। ফলে ৭ জুলাইয়ের ঘটনা প্রকাশ পায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে।

৭ জুলাই রাতে নগরীর নিউমার্কেট সংলগ্ন এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীর মালিকানাধীন ওমর থিম প্লাজার চেম্বারে এ ঘটনা ঘটে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে। ঘটনার সময় গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন কলেজের আরও সাতজন অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন। প্রায় ১৫ মিনিট সময় ধরে সবার সামনে অধ্যক্ষ সেলিম রেজাকে বেপরোয়াভাবে পিটিয়ে জখম করলেও এমপি ফারুকের হুংকারে কেউ তাকে বাধা দিতে সাহস পায়নি।

ঘটনার বিবরণ দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গোদাগাড়ীর মাটিকাটা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আব্দুল আউয়াল রাজু ফোন করে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষদের ৭ জুলাই রাত ৯টায় থিম ওমর প্লাজায় এমপির চেম্বারে উপস্থিত হতে নির্দেশ দেন। অধ্যক্ষ রাজু এমপির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তার ফোন পেয়ে রাজাবাড়ী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সেলিম রেজাসহ আটজন অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ এমপি ফারুকের চেম্বারে হাজির হন।

সংশ্লিষ্টরা আরও জানান, এমপি ফারুক প্রথমেই অধ্যক্ষ সেলিম রেজার কাছে জানতে চান তার কলেজের কতিপয় শিক্ষক একজন অধ্যক্ষ ও দলীয় নেতার স্ত্রীকে নিয়ে অশ্লীল কথাবার্তা বলেছেন। প্রিন্সিপাল হিসাবে তিনি কী ব্যবস্থা নিয়েছেন।

জবাবে অধ্যক্ষ সেলিম বলেন, যদি আপনার কাছে প্রমাণ থাকে আমি তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। এর পরপরই এমপি তার ফোনের রেকর্ড অন করে বিষয়টি অধ্যক্ষ সেলিমকে শুনতে বলেন। এরই মধ্যে এমপি ফারুক ভীষণ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। সেলিম রেজাকে জাপটে ধরে প্রথমেই তার বাম চোখের নিচে সজোরে ঘুসি মারেন। এরপর উপর্যুপরি চলতে থাকে কিল ঘুসি ও লাথি।

এক পর্যায়ে অধ্যক্ষ সেলিম প্রায় অচেতন হয়ে পড়লে হকিস্টিক বের করে বেশ কয়েকটি আঘাত করেন সেলিমের বাম হাত, কোমর ও শরীরের নিম্নাঙ্গে। উপস্থিত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের সামনেই সেলিম রেজাকে পিটিয়ে জখম করেন এমপি ফারুক। এক পর্যায়ে অধ্যক্ষদের একজন সেলিমকে এমপির কব্জা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে চেম্বার থেকে বের করে আনেন।

আহত সেলিম রেজাকে অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. সাঈদ আহমেদের চেম্বারে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর কয়েকজন স্বজন ও সহকর্মীর সহায়তায় তিনি বাসায় ফেরেন। ঘটনার পর অধ্যক্ষ সেলিম রেজা ক্ষোভে লজ্জায় বাসা থেকে আর বের হননি।

সোমবার দিবাগত রাতে রায়পাড়ায় ভুক্তভোগী অধ্যক্ষ সেলিম রেজার বাসায় গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার আকস্মিকতার আতঙ্ক ও ঘোর কাটেনি এখনো। সাংবাদিক শুনে প্রথমে কথা বলতে অস্বীকার করেন। পরে আগাগোড়া ঘটনার বিবরণ দেন তিনি।

সেলিম রেজা বলেন, ওই রাতের ঘটনার পর তিনি বাড়িতেই থাকছেন। তবে সোমবার বিকালে এমপির ঘনিষ্ঠ গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক বেলাল উদ্দিন সোহেল আমার বাসায় আসেন। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে এমপির সঙ্গে কথা বলেন। পরে আমাকে ফোন ধরিয়ে দেন। এ সময় এমপি সাহেব ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। এমপি সাহেব সময় করে আমাকে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন। অধ্যক্ষ সেলিম আরও বলেন, যেহেতু তিনি (এমপি) দুঃখ প্রকাশ করেছেন তাই আমিও আর কিছু বলছি না।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত গোদাগাড়ীর একটি কলেজের অধ্যক্ষ নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘কী বলব, কীভাবে বলব। ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। একজন সংসদ সদস্য এমন জঘন্য কাজ করতে পারেন, আমার জানা ছিল না। আমরা বিচার দেব কার কাছে।’

ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, প্রিন্সিপাল সেলিম রেজার সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে এখনো কালশিরা পড়ে আছে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী জানান, ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে তার চেম্বারে অধ্যক্ষরা অনেকেই এসেছিল। নিজেরা মারামারি শুরু করলে তিনি (এমপি) গিয়ে তাদেরকে থামান। অধ্যক্ষ সেলিম রেজার শরীরে মারধরের চিহ্ন কীভাবে হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়।

 

ad

পাঠকের মতামত