359578

বিলাসবহুল গাড়িতে চুল কাটতে যান নাপিত, জানালেন কোটিপতি হওয়ার গল্প

নিউজ ডেস্ক: ঘটনা রূপকথার মতো মনে হতে পারে। কিন্তু বেঙ্গালুরুর রমেশ বাবুর গল্প অবিশ্বাস্য শোনালেও জলজ্যান্ত বাস্তব।

শত শত কোটি টাকার মালিক ভারতের এই নাপিত। সেলুনে রোজ আসেন নিজের বিলাসবহুল রোলস রয়েস গাড়িটি চালিয়ে।

রমেশ বাবু ভারতবর্ষের কোটিপতি নাপিত। তাঁর কোটি টাকার সম্পত্তির পাশাপাশি আছে ৩৫০ টি গাড়ি। যার মধ্যে ১২০ টি লাগ্জারি গারি। কিন্তু আশ্চর্য ব্যাপার হল এত টাকা থাকা সত্বেও তিনি তাঁর সেলুনে কাউকে অ্যাপয়েন্ট করেননি, নিজেই তিনি তাঁর গ্রাহকদের চুল কাটেন।

একে অবশ্য ভাগ্য বলেই মানেন নাপিত রমেশ। ‘আমার কপালটা খুলে গেছে’, এমনই ভাষ্য তাঁর! তা তো খুলেছেই। আর তাঁর খদ্দের কারা সেটা জানলেও চোখ কপালে উঠতে পারে আপনার। নামিদামি রাজনীতিবিদ, সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, এমনকি সালমান খান, আমির খান, ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চনের মতো সুপারস্টাররা কেশশয্যার জন্য তাঁর কাছেই যান!

তাঁর কথা, যেমন ভাবে এই গাড়ির যত্ন নেন তিনি-তেমন যত্ন নিয়েই ক্ষৌরীর কাজ করেন তিনি। মজার কথা, এমন বিলাসবহুল গাড়ি শহরে আর মাত্র পাঁচজনেরই রয়েছে। আর রমেশ বাবুর এই গাড়ি রীতিমতো কঠোর পরিশ্রমের উপার্জনে কেনা।

তবে পেছনে তাকালে দেখা যাবে, বিষয়গুলো আগে এত সোজা ছিল না। কোটি টাকার এই সম্পত্তি রমেশ বাবু তাঁর পূর্বপুরুষদের থেকে পাননি, তিনি নিজে অর্জন করেছেন। তিনি ছোটো বেলায় অনেক কষ্ট করেন। তিনি টাকা রোজগারের জন্য বাড়ি-বাড়ি খবরের কাগজ বিলি করতেন। ১৯৮৯ সালের কথা।

রমেশের বাবা মারা গেলেন। রেখে গেলেন একটা ছোট্ট সেলুন, রমেশ তখন কিশোর। রমেশের মা দোকানটি দিনে মাত্র পাঁচ রুপির বিনিময়ে ভাড়া দিলেন আর মানুষের বাড়িতে কাজ নিলেন। এভাবেই সংসার চলত তখন।

পুরনো দিনের কথা বলতে গিয়ে রমেশ আবেগী হয়ে ওঠেন- ‘বাবা যেদিন মারা গেলেন, সেদিনের কথা আমার এখনো মনে পড়ে। তিনি আমাদের, পরিবার আর তাঁর সেলুনটি ছেড়ে চলে গেলেন একবারে।’ কিন্তু এভাবে বেশিদিন চলেনি। ১৯৯৪ সালে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, আর পড়ালেখা নয়।

বাবার ব্যবসার হাল ধরতে হবে। তাঁর স্কুলের পাশেই ছিল সেলুনটি। রমেশের হাতে শিগগিরই সেটি তরুণদের পছন্দের এক সেলুন হেয়ার স্টাইলিং জোন হয়ে ওঠে। এরপর তাঁদের নতুন তথা আধুনিক সেলুন এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে গ্রাহক আসতে থাকে। এরপর তিনি এই ধরনের আরও সেলুন খোলেন।

সে সময়ই গাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তিন বছর পর একটা ‘মারুতি ওমনি’ গাড়ি ঠিকই কিনে ফেলেন। এরপর এটি ভাড়া দিতে শুরু করেন। তাঁর ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায় সেখান থেকেই।

তাঁর মা যাদের অধীনে কাজ করতেন, তাঁদেরই একজন রমেশকে পরামর্শ দেন গাড়িটি তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিতে। এভাবেই শুরু। সেলুনের ব্যবসা থেকে লাভের পুরো টাকাই বিনিয়োগ করেন গাড়ির ব্যবসায়। ৯০-এর দশক শেষে তিনি ট্যাক্সি ব্যবসায় সফল হন, তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম দেন ‘রমেশ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস’।বিশ্বের ধনী নাপিত, যেভাবে ১৭ হাজার কোটি টাকার মালিক

২০০৪ সালে নজর দেন বিলাসবহুল গাড়ির দিকে। এ সময় সরকার পর্যটন খাতে গুরুত্ব দেওয়ায় আরো সুবিধা হয় রমেশের। তখন থেকে রমেশের তুমুল গতিতে সামনে এগিয়ে যাওয়ার গল্প শুরু। প্রথমে একটি ‘মার্সিডিস ই ক্লাস লাক্সারি সেডান’ কেনেন। দাম পড়ে ৩৮ লাখ রুপি। এরপর একে একে আরো তিনটি মার্সিডিজ এবং তিনটি বিএমডব্লিউ। আর তারপর পুরো এক ডজন টয়োটা ইনোভা।

এখন রমেশের সব মিলিয়ে প্রায় ২০০টির মত গাড়ি, ভ্যান এবং মিনি বাস রয়েছে। আমদানি করা বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রয়েছে রোলস রয়েস সিলভার গোস্ট, মার্সিডিজ সি, মার্সিডিজ ই, মার্সিডিজ এস, বিএমডব্লিউ ৫, বিএমডব্লিউ ৬, বিএমডব্লিউ ৭ সিরিজের গাড়ি।

এ ছাড়া মার্সিডিজের আরো কিছু গাড়ি এবং টয়োটার মিনি বাস রয়েছে রমেশের। এগুলো ছাড়া রমেশের রয়েছে একটি ‘সুজুকি ইনট্রুডার’ বাইক, যার দাম ১৬ লাখ রুপি। এটি অবশ্য ভাড়া দেওয়ার জন্য নয়, রমেশের ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য। ছুটির দিনে এই শখের মোটরযানে সওয়ার হন রমেশ।

তবে এখানেই থেমে থাকবেন না রমেশ, চান আরো! ‘আরো অনেক কিছু করার আছে। যত দিন সাধ্য আছে তত দিন কাজ চালিয়ে যাব’- নাপিতের কাজটা বাদ না দেওয়ার দিকেই ইঙ্গিত করেন রমেশ।বিশাল বিত্তশালী হয়ে উঠলেও পুরনো পেশা বা কাজকে কখনোই ভুলতে চান না রমেশ। এখনো নিজ হাতে সাধারণ খদ্দেরদের চুল কাটান মাত্র ৬৫ রুপিতে।

রমেশের রোলস রয়েস ভাড়া করতে একদিনে গুনতে হয় ৭৫ হাজার রুপি। তাঁর খদ্দেররা হচ্ছেন করপোরেট মহলের বড় বড় সব কর্মকর্তা। আবার চলচ্চিত্র জগতের নামিদামি তারকারাও রমেশের গাড়ি এবং সেলুন সার্ভিসের সাহায্য নেন নিয়মিত।

নিজের কাজ নিয়ে সহজাত রমেশ- ‘আমি যা করেছি, ভালোই করেছি। এটুকুই বলতে পারি’-স্মিত হাসি দেন শেষটায়।

সেলুনের কাজের পাশাপাশি তিনি ট্যুর এন্ড ট্রাভেলস এর কাজও করতে থাকেন। এরপর তিনি লাভের টাকা থেকে গাড়ি কিনে ভাড়া দিতে থাকেন। তিনি লাগ্জারি কার কিনে ভাড়া দিতে থাকেন।

রমেশ বাবু কোটি টাকা ইনকাম করলেও তিনি তাঁর বাবার সেলুনের কাজকে সম্মান করেন আর তাই রোজ দু-ঘন্টা তিনি সেলুনে কাজ করেন। আর মাত্র ১৫০ টাকায় তিনি চুল কাটেন।।

 

ad

পাঠকের মতামত