358202

১৩ বছর পর জীবিত ফেরা ‘গুম’ হওয়া সেই রুবেলের চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি

নিউজ ডেস্ক।। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেকের কুড়েরপাড় এলাকার জানু মিয়ার ছেলে রুবেল ওরফে আল আমিন (২১) গত বৃহস্পতিবার ফিরে আসার পর শুক্রবার (২১ মে) বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাহমুদুল মহসিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

১৪ বছর আগে রুবেলের মা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় ১৯ জনকে আসামি করে অপহরণ মামলা দায়ের করে। এ মামলায় ২ জন মুক্তিযোদ্ধাসহ আসামিদের অনেকে জেল খেটেছেন। গত বৃহস্পতিবার রুবেল বাড়িতে ফিরে আসলে রাতে মামলার আসামিরা তাকে ধরে সদর থানায় হস্তান্তর করে। শুক্রবার বিকেলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল মহসিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া রুবেলের এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। পরে রুবেল নিজ জিম্মায় তার বাড়িতে ফিরে যান।

নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো: আসাদুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, আদালত এই মামলার মূল নথিপত্রের সাথে রুবেলের জবানবন্দির রেকর্ড সংযুক্ত করার আদেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে কি করণীয়, আদালত সে বিষয়ে পরবর্তীতে নির্দেশনা দিবেন বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

২০০৭ সালের ১০ জানুয়ারি সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের কুঁড়েরপাড় এলাকার জানু মিয়ার সাত বছর বয়সের শিশু সন্তান রুবেল নিজ বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। ঘটনার দেড় মাস পর ২৩ ফেব্রুয়ারি সদর থানায় বাদি হয়ে উনিশ জনকে আসামি করে অপহরণ মামলা দায়ের করেন রুবেলের মা রহিমা বেগম। পরে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশ পর্যায়ক্রমে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। এর প্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আদালত মামলা নিষ্পত্তি করে আসামিদের অব্যাহতি দেন।

রুবেল জানায়, সে তার মা রহিমা খাতুনের মারধর ও ক্ষুধার যন্ত্রণায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে নারায়ণগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালে আসে। পরে নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে ট্রেনযোগে কমলাপুর যায়। সেখানে দীর্ঘদিন মানুষের কাছে হাত পেতে খেয়ে বেঁচেছিল। এরপর এক লোকের সাথে পরিচয় হওয়ার পর ওই লোক রামপুরা একটি হোটেলে কাজ নিয়ে দেয় তাকে। এরপর বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। বর্তমানে মগবাজার মধুবাগ হাতিরঝিল সংলগ্ন মসজিদের পাশে ভাড়ায় বসবাস করে সেখানেই রং মিস্ত্রির কাজ করছি। আসল নাম রুবেল হলেও মগবাজারে রং মিস্ত্রি আল আমিন নামে আমি পরিচিত।

রুবেল আরও জানায়, বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ১০ বছর পর তার সঙ্গে তার মায়ের যোগাযোগ হয়। পরে সে কুঁড়েরপাড় আসতে চাইলে তার মা বলে তোকে এলাকায় নিয়ে গেলে মেরে ফেলবে। গত ৬ বছর ধরে সে এলাকায় আসতে চাইলেও তার মা তাকে আসতে দেয়নি বলে জানায় রুবেল। এক পর্যায়ে তার মাকে না জানিয়েই বুধবার রাতে কুঁড়ের পাড় নিজ বাড়িতে ফিরে আসে সে। তখন তা মা বলে তুই কেন আসছিস, তোকে তো মেরে ফেলবে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে মামলার আসামিরা বিষয়টি জানতে পেরে তাকে আটক করে। মামলার বাদি রহিমা খাতুন গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পলাতক রয়েছেন। রুবেলের বাবার নাম জানু মিয়া। এলাকাবাসী জানায়, মামলার বাদি রহিমা খাতুন এলাকায় মামলাবাজ মহিলা হিসেবে পরিচিত। সে মিথ্যা মামলা থেকে তার আত্মীয়-স্বজনকেও ছাড় দেয়নি। মিথ্যা মামলা করে টাকা হাতিয়ে নেয়াই ছিল তার মূল লক্ষ্য, জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

রুবেল জানায়, তার মা সুবিধাজনক না। সে অন্য লোকের প্ররোচনায় মামলা করেছে। তাকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে আসবে। কেন এবং কি কারণে কার প্ররোচনায় তিনি মামলা করেছেন।

সদর মডেল থানার ওসি শাহ জামান জানান, ১৩ বছর পর ফিরে আসা রুবেলকে গত বৃহস্পতিবার রাতে এলাকাবাসী থানায় নিয়ে আসে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর আইনের বিধান অনুযায়ী বাদির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেখানে রুবেল পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, কেউ তাকে অপহরণ করেনি। শিশু বয়সে ভারী কাজের চাপ ও মায়ের মায়ের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি। তবে তার মা কি কারণে মিথ্যা অপহরণ মামলা দিয়ে এতোগুলো মানুষকে হয়রানি করেছেন সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। উৎস: ইত্তেফাক।

 

ad

পাঠকের মতামত