357606

একবছর ধরে গৃহকর্মীকে ধর্ষণের অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র গ্রেফতার

ডেস্ক রিপোর্ট : চাঁদপুর শহরে একবছর ধরে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ করার অভিযোগে আমজাদ মাহমুদ নিলয় (২১) নামে এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (৪ মে) ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানা এলাকা হতে গ্রেফতার করে তাকে চাঁদপুর মডেল থানায় নিয়া আসা হয়েছে। বুধবার (৫ মে) তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় এর আগে তার মা শাহনাজ বেগমকে গ্রেফতার করা হলেও পালিয়ে যায় বাবা আব্দুল মাজেদ ও নিলয়।

পুলিশ জানায়, চাঁদপুর শহরের ওয়ারলেস এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এ কর্মরত আব্দুল মাজেদ ও শাহনাজ বেগম দম্পতি। তাদের বাসায় দীর্ঘ ৪ বছর ধরে কাজ করে আসছিলেন ভিকটিম ওই তরুণী। কিন্তু তাকে কোনও টাকা পয়সা দেওয়া হতো না; উপরন্তু তাদের বড় ছেলে ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আমজাদ মাহমুদ নিলয় (২১) একবছর ধরে ধর্ষণ করে আসছে।

পুলিশ আরও জানায়, করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় বাবা-মায়ের সঙ্গে চাঁদপুরের বাসাতেই অবস্থান করছিল অভিযুক্ত যুবক। তার বাবা-মা যখন কর্মস্থলে চলে যায় তখন সে গৃহকর্মীকে একা পেয়ে ধরে ধর্ষণ করে আসছে। বিষয়টি নিলয়ের বাবা ও মাকে জানিয়েও কোনও প্রতিকার পাননি অসহায় গৃহকর্মী। উল্টো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি দেখিয়ে ভিকটিমকে চুপ থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।

সর্বশেষ গত ১৪ এপ্রিল দুপুরে আব্দুল মাজেদ ও শাহনাজ বেগম দম্পতি অফিসে গেলে এই সুযোগে নিলয় তরুণীকে ধর্ষণ করে। ভিকটিম সর্বশেষ ঘটনার বিষয়টি আব্দুল মাজেদ ও শাহনাজ বেগম দম্পতিকে জানিয়ে প্রতিকার চান। কিন্তু তারা মা-ছেলে মিলে তাকে নির্যাতন করে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে গত ৩০ এপ্রিল বাসা থেকে পালিয়ে সড়কে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু আশপাশের মানুষ তা দেখে ফেলান এবং এ যাত্রায় তিনি রক্ষা পান।

এমন ঘটনার পর বিষয়টি চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপার মিলন মাহমুদের নজরে পড়ে। তিনি ঘটনার শিকার তারুণীকে উদ্ধার করে সদর মডেল থানা পুলিশকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ জানান, এ ঘটনায় গৃহকর্মী তরুণীর কাছ থেকে বিস্তারিত শুনে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই পরিবারের তিন জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন তদম আইনে মামলা নেওয়া হয়। মামলার প্রেক্ষিতে শহরের ওয়ারলেস এলাকার বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় নিলয়ের মা শাহনাজ বেগমকে আটক করা হয়। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, ‘মূল অভিযুক্ত পলাতক আমজাদ মাহমুদ নিলয় ভোলায় তার এক বন্ধুর বাড়িতে আত্মগোপন করে ছিল। আমরা তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করে মঙ্গলবার সকালে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। রাতে তাকে চাঁদপুর মডেল থানায় আনা হয়েছে।’

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার মো. মিলন মাহমুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানতে পেরে তাৎক্ষণিক থানা পুলিশকে নির্দেশনা দিই। কিন্তু পুলিশ যাওয়ার আগেই অভিযুক্ত যুবক এবং তার বাবা পালিয়ে যায়। তবে তার মাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’

তিনি বলেন, ‘২২ ধারায় ভিকটিম ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন। ঘটনা সত্য। বাড়ির আশপাশের লোকজনও আমাদের জানিয়েছে মেয়েটিকে মাঝে মধ্যেই মারধর করতো। বিষয়টি বাড়ির মালিককেও বিভিন্ন সময় জানানো হয়।’

পুলিশ সুপার জানান, ভিকটিমকে ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। আমরা মেয়েটিকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠাবো। তার অভিভাবক যদি তাকে নিতে চাইলে নেবে, না হলে আমরা একটা ব্যবস্থা করবো। বাংলাট্রিবিউন

 

ad

পাঠকের মতামত