357426

হেফাজতে ইসলাম এর উৎপত্তি কিভাবে, কেমন বাংলাদেশ চায় তারা

নিউজ ডেস্ক।। ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে সমাবেশের মাধ্যমে হেফাজতে ইসলাম আলোচনায় আসে।

হেফাজত প্রসঙ্গে উন্নয়ন কর্মী সানজিদা রিপা শুক্রবার বিবিসি বাংলায় বলেন, হেফাজতে ইসলাম বিগত প্রায় আট বছর ধরে নানা ঘটনায় আলোচিত।

এই সংগঠনটির ঘোষণা করা তের দফা কর্মসূচি ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা সময়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় তুলেছে।

হেফাজতের দাবিগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ধর্ম অবমাননার জন্য মৃত্যুদন্ডের বিধান করে আইন করা, নারীদের পোশাকে হিজাব উদ্বুদ্ধ করা, নারী নীতি ও শিক্ষা নীতির কথিত ইসলাম বিরোধী ধারাগুলো বাদ দেয়া, উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, ভাস্কর্য বা মঙ্গল প্রদীপের মতো বিষয়গুলোর বিরোধিতা, নাটক সিনেমায় ধর্মীয় লেবাসের লোকজনের নেতিবাচক চরিত্র বন্ধ করা ও কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা।

তিনি বলেন, যখন শাহবাগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি চলছিলো। তখন তারা গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কতিপয় ব্লগার, নাস্তিক-মুরতাদ ও ইসলাম বিদ্বেষীদের প্রচারণা বন্ধের দাবি জানায়।

সংগঠনটির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইদ্রিস বলেন, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেই সংগঠনটি গঠন করেছিলেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা আহমদ শফী, যার উদ্দেশ্য ছিলো ইসলামের স্বার্থ দেখা।

তিনি বলেন, অনলাইনে ইসলাম বিদ্বেষী লেখালেখির পাল্টা প্রতিক্রিয়াকে হেফাজতের আগমনের কারণ ছিলো। ইসলাম বিষয়ক লেখক ও বিশ্লেষক শরীফ মোহাম্মদের মতে, ২০১০ সালে বর্তমান হেফাজত যাত্রা শুরু করলেও ভিন্ন ভিন্ন নামে এই ধারার সূচনা হয়েছে আরও অনেক আগেই।

তিনি বলেন, কওমি মাদ্রাসার আলেমদের প্রধানদের নিয়ে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে সংগঠন দাঁড় করায়। তাসলিমা নাসরিন ইস্যু, বাবরি মসজিদ ভাঙা এবং ২০০১ সালে ফতোয়া-বিরোধী রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ইসলামি আইন বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়।

তার মতে, নব্বইয়ের দশক থেকে শুরু করে গত দশকের মাঝামাঝি সময়ে, ধর্ম অবমাননার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করে তারা মাদ্রাসাগুলোকে এক জায়গায় করে শক্তিশালী সংগঠন করে। যার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ খেলাফত আন্দোলন, স্বদেশী আন্দোলন গড়ে ওঠে।

ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও সংগঠন বিষয়ের গবেষক ড. মোবাশ্বর হাসান বলেন, অরাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে, নানা ইস্যুতে বা ঘটনায় সোচ্চার হয়েছে যার ধারাবাহিকতায় তৈরি হয়েছে আজকের হেফাজতে ইসলাম।

ড. মোবাশ্বর বলেন, এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণে কবি দাউদ হায়দার ধর্ম অবমাননার দায়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন। যা শুরু হয়েছিলো ১৯৭৪ সালে, তখন বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ সরকার ছিলো। তখন অন্য জায়গাগুলো থেকে তারা সমর্থন পেয়েছে। আজকের দিনে যেসব দাবি ইসলাম বা ধর্ম বিরোধী লেখকদের ফাঁসি দিতে হবে, এগুলোর সঙ্গে তখনকার দাবিরও মিল দেখা যায়।

তিনি বলেন, মানুষের দৈনন্দিন জীবনাচরণের সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় সেটিকে ভিত্তি করেই এ ধারা চলে এসেছে। সেটি কাজে লাগিয়েই আজকের হেফাজতের ভিত্তি বেশি শক্তিশালী হয়েছে।
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ড. বুলবুল আশরাফ সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের কওমি মাদ্রাসা ভিত্তিক সংগঠনগুলোর প্রায় সবাই ভারতের দেওবন্দ অনুসারী। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমলে ও পরে বাংলাদেশে এসেও তারাই এ ধারার নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

দৈনিক নয়াদিগন্ত পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক সালাউদ্দিন বাবর বলেন, বিচ্ছিন্নভাবে রাজনৈতিক কিছু নেতা হেফাজতে থাকলেও তা সংগঠনটির অরাজনৈতিক চরিত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি বরং বিভিন্ন সময়ে সরকারসহ নানা গোষ্ঠীর সহায়তা পেয়েই এ ধারাটি বিকশিত হয়েছে।

তিনি বলেন, তের দফা দাবি আর দেশে সহিংসতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক কাঠামো ধ্বংস করে বাংলাদেশকে ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্রের চরিত্র দিতে চেয়েছিলো হেফাজত।

হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মইনুদ্দিন রুহি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ হানাফি মাজহাব ও আহলে সুন্নতে বিশ্বাসী। এর ভিত্তিতে ইসলামের বিকাশ ও আধুনিক সমাজের যে রূপরেখা আছে তাতেই হেফাজতে ইসলাম বিশ্বাসী।

গত কয়েক বছরে এ সংগঠনটির কর্মসূচি ও কর্মকান্ডের মাধ্যমে দেশে নামক রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে যেমন প্রভাবিত করেছে, তেমনি প্রভাবিত করছে শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সমাজ ব্যবস্থার।

ad

পাঠকের মতামত