বিয়ের চাপ দেওয়ায় প্রেমিকের হাতে খুন হন ননিকা
নিউজ ডেস্ক।। পরিচয় মিলেছে রাজশাহীতে ড্রামের ভেতর থেকে উদ্ধার হওয়া তরুণীর মৃতদেহের। ননিকা রাণী রায় (২২) নামে ওই তরুণী পেশায় একজন নার্স ছিলেন। বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার মিলনপুর গড়েয়া গ্রামে।
বাবার নাম নিপেন চন্দ্র বর্মণ। রাজশাহী নার্সিং ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা করেছেন। চাকরি নিয়েছিলেন একটি ক্লিনিকে। সরকারি চাকরির জন্যও পরীক্ষা দিয়েছেন।
ননিকা রাণী রায় গভীর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রেলওয়ে পুলিশের কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকারের (৪৩) সঙ্গে। অবিবাহিত নার্স ননিকা রায় বিবাহিত পুলিশ কনস্টেবল নিমাই সরকারের সঙ্গে ৬/৭ বছরের প্রেমের সম্পর্কের জেরে পরিবারের অজ্ঞাতে একই বাসায় একত্রে থাকতেন। সম্প্রতি স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে নগরীর তেরখাদিয়া এলাকার একটি বাসা ভাড়া করেছিলেন। সেখানে বিয়ের চাপ দেয়ায় প্রেমিক নিমাই চন্দ্র ননিকা রায়কে পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ গুমের উদ্দেশ্যে ফেলে দেয়।
এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ছায়া তদন্তে। সোমবার (১৯ এপ্রিল) দুপুরে পিবিআইয়ের রাজশাহী কার্যালয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ এ ব্যাপারে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রেস ব্রিফিং করেন। রাজশাহী পিবিআই অভিযুক্ত কনস্টেবলসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতার তিন সহযোগী আদালতেও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে কনস্টেবল নিমাই সরকার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি। আদালতের মাধ্যমে তাকে পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
পিবিআই রাজশাহীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ জানান, কনস্টেবল নিমাই চন্দ্র সরকার (৪৩) পাবনার আতাইকুলা উপজেলার চরাডাঙ্গা গ্রামের মৃত হেমান্ত সরকারের ছেলে। নিমাই রাজশাহীতে রেলওয়ে পুলিশে সাতবছর ধরে কর্মরত ছিলেন।
গত ৬ এপ্রিল নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একটি ভাড়া বাসায় উঠেছিলেন নিমাই ও ননিকা। এরপর গত শুক্রবার সকালে নগরীর সিটিহাট এলাকার ডোবা থেকে অজ্ঞাত হিসেবে ননিকার লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশটি ছিল একটি চালের ড্রামের ভেতরে। এ ঘটনায় নগরীর শাহ্ মখদুম থানায় অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। নগরীর শাহ্ মখদুম থানা পুলিশ ঘটনাটির তদন্ত শুরু করে। পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করছিল পিবিআই। পিবিআইয়ের তদন্তে এই তরুণীর পরিচয় উদঘাটনের পাশাপাশি ঘাতকদের গ্রেফতার ও হত্যার ক্লু উদঘাটন করেন তারা।
পুলিশ কনস্টেবল নিমাই সরকার ছাড়াও এই হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার অন্যেরা হলেন, রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার আদারীপাড়া মহল্লার জয়নাল আবেদীনের ছেলে কবির আহম্মেদ (৩০), রাজপাড়া থানার বিলসিমলা এলাকার সতীশ রায়ের ছেলে আব্দুর রহমান (২৫) এবং শ্রীরামপুর টি-বাঁধ এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে সুমন আলী (৩৪)। আব্দুর রহমান মাইক্রোবাসের চালক, তিনি আগে হিন্দু ছিলেন। তখন তার নাম ছিল সঞ্জয় রায়। তার মাইক্রোবাসে করেই লাশ ফেলে আসা হয়েছিল সিটি বাইপাস সড়কের ওই ডোবায়।
পিবিআই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম আযাদ আরও জানান, রেলওয়ে পুলিশের কনস্টেবল নিমাই সরকার বিবাহিত। তার স্ত্রীর বুলবুলি রাণী দাস, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে কর্মরত। স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল না থাকায় একটি সন্তান নিয়ে বুলবুলি রাণী আলাদা থাকেন। এই সুযোগে গত ৬ এপ্রিল প্রেমিকা ননিকা রায়কে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া করেছিলেন নিমাই। ননিকা তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এ কারণেই তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
তিনি আরও বলেন, হত্যার সময় নিমাইয়ের বন্ধু কবির আহম্মেদ ও সুমন আলী ননিকার হাত-পা চেঁপে ধরেছিলেন। আর নিমাই গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করেন। পরে বাজার থেকে চাল রাখার একটি ড্রাম কিনে আনেন। সেই ড্রামে লাশ, বালিশ ও কম্বল ঢুকিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে সেটি নির্জন ডোবায় ফেলে আসা হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানায়, ননিকা সদ্য নার্সিং ডিপ্লোমা পাস করে রাজশাহী শহরের একটি ক্লিনিকে চাকরি নিয়েছিলেন। একটি ছাত্রীনিবাসে থাকতেন নগরীর পাঠানপাড়া এলাকায়। সরকারি চাকরির জন্য পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। মৌখিক পরীক্ষার জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন। পুলিশ কনস্টেবল নিমাইয়ের সঙ্গে গিয়ে আলাদা বাসায় ওঠার বিষয়টি তার পরিবার থেকে জানত না। হত্যাকাণ্ডের পর তারা এটি জেনেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরেই রাজশাহীতে কর্মরত ছিলেন কনস্টেবল নিমাই সরকার। সাত বছর ধরে আছেন রাজশাহী রেল পুলিশে। এর আগে তিনি রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) কর্মরত ছিলেন। ওই সময় ডিবি কার্যালয় এলাকার এক কলেজ ছাত্রীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করেছিলেন নিমাই সরকার। ওই ভিডিওটি স্থানীয় একটি কম্পিউটারের দোকান থেকে ছড়িয়ে পড়ে। তখন তাকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে নানা কৌশলে চাকরি ফিরে পেয়ে রেল পুলিশে যোগ দেন নিমাই। এরপর আবারো অপকর্ম শুরু করেন তিনি। উৎস: ইত্তেফাক।