356924

বহুতল ভবনের ব্যালকনি থেকে পাঁচ তরুণীর আত্মহত্যার হুমকি, অতঃপর …

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাঁচতলার বারান্দায় হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে পাঁচ তরুণী। তারা চিৎকার করে বলছেন, বকেয়া বেতন পাচ্ছেন না। সে কারণে আত্মহত্যা করতে চান। তাদের কথা শনে পাড়ার লোকজন বলছেন, বারান্দার ওই বিপজ্জক জায়গায় না দাঁড়িয়ে থেকে নেমে আসতে।

তবে তরুণীরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়। তারা বারবার বলছেন, কারো কথা শুনবেন না। বকেয়া বেতন না পেলে উপর থেকে ঝাঁপ দেবেন।
শেষ পর্যন্ত এলাকার বাসিন্দা ও পুলিশ ছুটে এসে তাদেরকে আটকায়।

জানা গেছে, বহুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে সার্কাস। পশ্চিমবঙ্গের নামকরা একটি সার্কাস উঠে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সে কারণে বেতন দিতে পারছেন না মালিক।

বিপাকে পড়ে মালিকের বাড়ির পাঁচতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আত্মহত্যার হুমকি দেন সার্কাসের পাঁচ তরুণী। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল রবিবার পার্ক স্ট্রিট এলাকায় হইচই বেঁধে যায়। শেষ পর্যন্ত পার্ক স্ট্রিট থানা পুলিশের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে।

পুলিশ বলছে, পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকার স্যান্ডাল স্ট্রিটের একটি পাঁচতলা বাড়িতে থাকেন ওই নামকরা সার্কাসের মালিক। এর আগে সারা ভারতে ঘুরত এই সার্কাস। প্রত্যেক বছর শীতকালে কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আসত এই সার্কাস। বাঘ, সিংহ ও বিভিন্ন জন্তু-জানোয়ারের খেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে ওই সার্কাসেও ভিড় কম হতে থাকে। তবুও কোনো মতে চলছিল সার্কাসটি।

পুলিশ বলছে, সার্কাসের মালিক কর্মচারীদের বেতন দিচ্ছিলেন। কিন্তু গত বছর লকডাউনের পর থেকে সার্কাসের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। করোনা পরিস্থিতিতে গত শীতেও সার্কাস হয়নি। সার্কাসের কলাকুশলীরা প্রায় বসেই সময় কাটিয়েছিলেন। তার ফলে মালিক ও কর্মচারীদের আর্থিক অবস্থা তলানিতে গিয়ে ঠেকে।

পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, এর মধ্যেই কর্মচারীরা শুনতে পান যে, মালিক সার্কাসটি বন্ধ করে দিতে চলেছেন। ছোটবেলা থেকেই ওই সার্কাসে কাজ করতেন ওই তরুণীরা। ওই সার্কাসেই কাজ শিখেছেন। তাদের কারো বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর বা বারুইপুরে। আবার কেউ বা খড়গপুরের বাসিন্দা। তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে এসে হাজির হন।

সেখান থেকে পৌঁছে যান স্যান্ডাল স্ট্রিটে, সার্কাসের মালিকের বাড়িতে। মালিকের সঙ্গে দেখা করে প্রথমে তারা টাকা চান। পুলিশকে ওই তরুণীরা পরে জানিয়েছেন, তাদের বেতন বকেয়া ছিল। তারা টাকা চাইতে গেলে তাদের পুরো টাকা দেওয়া হয়নি। তাদেরকে চলে যেতে বলা হয়েছে।

এরপরই ওই তরুণীরা মালিকের বাড়ির একটি বারান্দায় চলে যান। বারান্দায় হাতে হাত ধরে দাঁড়ান পাঁচ তরুণী। চিৎকার করে বলতে থাকেন, তারা বেতন পাচ্ছেন না। তারা সবাই খুব অভাবের মধ্যে রয়েছেন। তাই বকেয়া টাকা না পেলে তাদের বেঁচে লাভ নেই। তারা নিচে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকেন।

পাঁচ তরুণীকে ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আঁতকে ওঠেন এলাকার বাসিন্দারা। তারা তরুণীদের নিচে নেমে আসতে বলেন। কিন্তু তরুণীরা যে নামতে নারাজ। পরিস্তিতি বেগতিক দেখে কয়েকজন বাসিন্দা উঠে যান পাঁচতলার ঘর লাগোয়া বারান্দাটিতে।

তারা অনুরোধ করতে থাকেন তরুণীদের। এর মধ্যেই এলাকার বাসিন্দারা পার্ক স্ট্রিট থানায় পুরো ঘটনাটি জানান। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকের অনুরোধে তারা ওই বিপজ্জনক জায়গাটি থেকে বেরিয়ে আসেন। পুলিশ কর্মকর্তারা সার্কাসের মালিকের সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশের হস্তক্ষেপে সমস্যা মেটে। বকেয়া বেতন তরুণীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তারা বাড়ি ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সূত্র: সংবাদ প্রতিদিন

 

ad

পাঠকের মতামত