355755

বোয়ালমারীতে ‘বৃহত্তর স্বার্থে’ ধর্ষকের সঙ্গেই বিয়ে!

নিউজ ডেস্ক।। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোনো আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেনি। ধর্ষণের পাঁচ দিন পর স্থানীয় সালিসের মাধ্যমে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, গত ২৯ মার্চ উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়নের ময়েনদিয়া খালপাড় গ্রামে পনেরো বছর বয়সী সপ্তম শ্রেণির এক কিশোরীকে ধর্ষণ করে ওই গ্রামের শাকিব বিশ্বাস (১৮) নামে এক কাঠ ব্যবসায়ী। ওই দিন বিকেলে ওই কিশোরীর ঘরে ঢুকে তাকে ধর্ষণ করে শাকিব বিশ্বাস। এ সময় কিশোরীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে শাকিব পালিয়ে যায়। ওই রাতেই কিশোরীর বাবা বোয়ালমারী থানায় গিয়ে ধর্ষক শাকিব বিশ্বাসের নামে ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ জমা দেন। ওই কিশোরীর বাবা একজন ভ্যানচালক। তিন মেয়ের মধ্যে এই কিশোরীই বড়। ধর্ষণের ঘটনা এলাকায় জানাজানি হলে স্থানীয় কয়েকজন মাতুব্বর গত শনিবার (৩ এপ্রিল) রাতে কিশোরীর বাড়িতে সালিসে বসে ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে দেন। তবে কিশোরী অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় এ বিয়ের কোনো কাবিন করা সম্ভব হয়নি। পরদিন রবিবার ছেলে-মেয়ে দুজন ফরিদপুর আদালতে গিয়ে কোর্টে অ্যাফিডেভিট করে।

সোমবার সন্ধ্যায় এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলার পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও ময়েনদিয়া বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মান্নান মাতুব্বর বলেন, ছেলে-মেয়ে দুজন খালাতো ভাই-বোন। তারা ফোনে কথা বলাবলি করত। আসলে ধর্ষণ হয়নি। গ্রামে ভালো-খারাপ দুই ধরনের মানুষ থাকে। হয়তো কোনো খারাপ মানুষ মেয়ের পরিবারকে ফুসলিয়ে থানায় অভিযোগ করিয়েছিল। দুই পরিবারই অসহায়, এ জন্য বিষয়টি সামাজিকভাবে নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে।

শাকিব বিশ্বাসের মা ঝর্ণা বেগম জানান, আমার ছেলেকে নিয়ে ঝামেলা হয়েছিল। তবে সে ঝামেলা মাতুব্বরা সালিসে বসে মীমাংসা করে দিয়েছেন। আমাদের দুই পরিবারের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।

পরমেশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম মিনা মুকুল বলেন, আমি গত শুক্রবার জানতে পারি ময়েনদিয়ার খালপাড়ায় বাল্যবিবাহ হচ্ছে। এ ঘটনা পুলিশ ফাঁড়িতে জানালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই পরিবারকে বিয়ে দিতে নিষেধ করে আসেন। কিন্তু আজকে শুনলাম ধর্ষণের ঘটনা।

ধর্ষণের অভিযোগে তদন্তকারী কর্মকর্তা বোয়ালমারী থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক আব্দুল আজিজ বলেন, ধর্ষণের লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে দুবার গিয়েও শাকিব বিশ্বাসকে পাইনি। তাকে পেলে আটক করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা তদন্ত সাপেক্ষে নেওয়া হতো।

তার আগেই ময়েনদিয়া এলাকার মান্নান মাতুব্বর জানান, তারা স্থানীয়ভাবে বসে বিষয়টি মীমাংসার চেষ্টা করছেন। দুই পরিবারই গরিব। তারা দুই পরিবারই বিয়ে দিতে ও করতে সম্মত আছে। পরে আমি বিষয়টি নিয়ে ওসি স্যার মো. আবুল খায়ের মিয়ার সঙ্গে কথা বলি। স্যার বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর স্বার্থ ত্যাগ করা যেতে পারে।

তিনি আরো বলেন, মান্নান মাতুব্বরের সালিসনামা থানায় জমা দেবে বলে জানিয়েছেন। সেটি এখনো আমরা হাতে পাইনি। হাতে পেলে বুঝব এ ঘটনার কী সমাধান দেওয়া হয়েছে। সালিস বৈঠকে তিনি উপস্থিত ছিলেন কি না জানতে চাইলে তিনি জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো সদস্যের তো সেখানে থাকার কথা নয়।

বোয়ালমারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আবুল খায়ের মিয়ার কাছে এ ঘটনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ধর্ষণের অনেক ঘটনাই তো ঘটে, সব ঘটনা মনে রাখা সম্ভব নয়। ঘটনার তারিখ ও স্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। উৎস: কালের কণ্ঠ।

ad

পাঠকের মতামত