355138

গণহত্যা ১৯৭১: মানব সভ্যতায় কলঙ্কিত দিন

নিউজ ডেস্ক।। ‘আমি পূর্ব পাকিস্তানের মাটি চাই, মানুষ চাই না’- টিক্কা খানের এই বক্তব্যের বাস্তব দৃশ্যের দেখা মেলে ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে। ওইদিন নিরস্ত্র বাঙালির ওপর নির্বিচারে হত্যা চালিয়ে হানাদার বাহিনী মানব সভ্যতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত দিন রচনা করে।

‘অপারেশন সার্চ লাইট’-এর নামে গণহত্যা চালিয়ে বাঙালির একটি প্রজন্মকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়ার নারকীয় এক পরিকল্পনা হাতে নেয় তারা। ফলে পূর্ব বাংলার মানুষের জীবনে নেমে আসে বিভীষিকাময় কালরাত্রি।

বাঙালির অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে রক্তের স্রোতে ভাসিয়ে দিতে তারা হত্যার মহোৎসবে মেতে উঠেছিল ঠিকই, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণা করার পর জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলার সর্বস্তরের জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। একদিকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা চলতে থাকে, অন্যদিকে মুক্তির পথে অদম্যগতিতে চলতে থাকে দৃঢ়প্রত্যয়ী বাঙালি মুক্তিসেনারা। অতঃপর নয় মাস যুদ্ধ শেষে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বহুল প্রতীক্ষিত মহান স্বাধীনতা। প্রতিষ্ঠা লাভ করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।

১৯৭৫ সালের পর রাজনীতির চাকা উল্টো দিকে মোড় নিলে আলোচনার আড়ালে চলে যায় মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির আত্মত্যাগের অনেক তথ্য। মুছে যায় বাঙালির জাতির জনকের নামও। অনেক চড়াই-উতরাই শেষে ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নৃশংস হত্যাযজ্ঞের ঘটনাকে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ মহান জাতীয় সংসদের চতুর্দশ অধিবেশনে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করে।

এ বছর ২৫ মার্চ এমন একটা সময়ে সমাগত, যখন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে ঘোষিত ‘মুজিববর্ষ’ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ‘সুবর্ণজয়ন্তী’ উদ্যাপিত হচ্ছে। এ উৎসবের প্রাক্কালে বাঙালি জাতি ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে নিহত সব শহীদসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রমহারা দুই লাখ মা-বোনকে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে স্মরণ করবে।

এক মিনিট ব্ল্যাক-আউটে থাকবে দেশ : কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যা স্মরণে রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট সারাদেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক-আউট’ পালন করা হবে। তবে কেপিআই বা জরুরি স্থাপনাগুলো এর আওতার বাইরে থাকবে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে এটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আর এটি বাস্তবায়ন করবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, দেশের সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

দিনটি উপলক্ষে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো পৃথক পৃথক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। বেলা ১১টায় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে সংযুক্ত থাকবেন (ভার্চুয়ালি) দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। বিশেষ অতিথি হয়ে থাকবেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম প্রমুখ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবিরের সঞ্চালনায় এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন সভাপতি বজলুর রহমান।

প্যারেড গ্রাউন্ডেও কালরাত্রির আয়োজন আছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন অনুষ্ঠানমালার নবম দিনের প্রতিপাদ্য- ‘গণহত্যার কালরাত্রি ও আলোকের অভিযাত্রা’। প্রথম পর্বে বিকাল পোনে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আলোচনা অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৩০ মিনিটের বিরতি এবং দ্বিতীয় পর্বে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান ও সঞ্চালনা করবেন আসাদুজ্জামান নূর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। আলোচনা পর্বে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী চাং সে কাইয়ুন এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সুহৃদ, জাপানের তাকাশি হাওয়াকাওয়ার পুত্র ওসামু হায়াকাওয়ার ভিডিওবার্তা প্রচার করা হবে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করে বন্ধুরাষ্ট্র কোরিয়ার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ধারণকৃত ভিডিও, ‘মুজিব চিরন্তন’ প্রতিপাদ্যের ওপর টাইটেল অ্যানিমেশন ভিডিও, ভাটিয়ালি গানের সুরে কোরিওগ্রাফিক পরিবেশনা, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমর্থনে গান গাওয়া আমেরিকান সংগীতশিল্পী জোয়ান বায়েজের গান, চট্টগ্রামের ‘যুদ্ধশিশু’ দলের পরিবেশনা এবং যুদ্ধকন্যার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ, অ্যালেন গিন্সবার্গের ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ শীর্ষক সংগীতানুষ্ঠান, বঙ্গবন্ধুর কন্যাদ্বয়ের ভাষ্যে ‘সেই ভয়াবহ রাতের কাহিনী’, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী এবং পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের যৌথ পরিবেশনা, কম্বোডিয়ার লোকযন্ত্রবাদন ও কোরিওগ্রাফি প্রদর্শন, ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার’ শীর্ষক একটি ভিডিও ক্লিপ, ঢাকা থিয়েটারের পরিবেশনায় নাট্যাংশ ‘নিমজ্জন’, ‘উড়িয়ে ধ্বজা অভ্রভেদী রথে’ শীর্ষক বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ভিডিও পরিবেশনা এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হবে।

অমর একুশে বইমেলায় বিকাল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চেও কালরাত্রিকে প্রাসঙ্গিক করে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা। ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী : বাংলাদেশের গণহত্যা ও গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি’ শীর্ষক আলোচনায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন স্বদেশ রায়। এতে অংশ নেবেন বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সাজ্জাদ আলী জহির (বীরপ্রতীক), আহম্মেদ শরীফ এবং চৌধুরী শহীদ কাদের। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন।

 

ad

পাঠকের মতামত