355089

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনে শিশুসহ ৫ জনের মৃত্যু, পুড়েছে ৯ হাজারের বেশি ঘর

নিউজ ডেস্ক।। কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সোমবার ভয়াবহ আগুনে দুই শিশুসহ পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। নিহতদের সবাই রোহিঙ্গা। তবে স্থানীয় অন্তত ৩০ জন এ ঘটনায় আহত হয়েছেন।

তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগুনের সময় ছোটাছুটি করতে গিয়ে অনেক শিশু হারিয়ে গেছে বলে জানান তাদের স্বজনরা। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১০ রোহিঙ্গা যুবককে আটক করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, আগুনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৮৬টি ব্লকে ৯ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি পুড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন তারা। এর মধ্যে স্থানীয়দের বাড়িঘরও রয়েছে। প্রায় ৩২ হাজার রোহিঙ্গা ঘরছাড়া হয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে আশপাশের বাড়িঘর এবং কেউ কেউ ট্রান্সজিট ক্যাম্প ও স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন।

জানা গেছে, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প ৮-ই, ডব্লিউ থেকে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের উখিয়া স্টেশন, রামু স্টেশন ও কক্সবাজার স্টেশন এবং সেনাবাহিনীর ফায়ার ইউনিটসহ পাঁচ ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

আগুনে পুরো ক্যাম্প এলাকা কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অনেকে অন্য ক্যাম্পেও আশ্রয় নিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গা শিশু-নারী-পুরুষ নিরাপদ আশ্রয়ে ছোটাছুটি করে। এ সময় অনেক শিশু হারিয়ে গেছে বলে স্বজনরা জানান। বালুখালী ৯নং ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দুর শুক্কুর জানান, দুপুর ২টার দিকে ক্যাম্প ৮-ই, ডব্লিউতে ছনের ছাউনির ঘরে আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখান থেকে আগুন মুহূর্তের মধ্যে ক্যাম্প ৯-এ ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময় ১০নং ও ১১নং ক্যাম্পের অধিকাংশ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

বালুখালী ৮নং ক্যাম্প থেকে পালিয়ে পানবাজার এলাকায় আশ্রয় নেওয়া সফিকা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সেখানে তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় তার সাত বছরের শিশু হারিয়ে যায়। নূরুল আলম জানান, ছয় বছরের মেয়েকে খুঁজে পাচ্ছি না। এভাবে সন্তান খুঁজতে অসংখ্য বাবা-মাকে দেখা গেছে। জেলা প্রশাসক, শরণার্থী ও ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। ফায়ার সার্ভিসের উখিয়ার ডিউটি অফিসার মিজানুর রহমান জানান, পাঁচ শতাধিক ঝুপড়ি ঘর পুড়ে গেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে এখনো বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। পাশাপাশি শিশুসহ দুইজনের মৃত্যুর খবর শোনা যাচ্ছে।

তবে স্থানীয়দের তথ্য অনুযায়ী, রাত ১টা পর্যন্ত শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে কারো পরিচয় জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘর ও দোকানপাট পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি এনজিওর কয়েকটি ভবনেও আগুন লেগেছে। ক্যাম্পে কাজ করা এনজিওদের সমন্বয়কারী সংস্থা ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেটর গ্রুপের (আইএসসিজি) ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অ্যান্ড পাবলিক ইনফরমেশন অফিসার সৈয়দ মো. তাহফিম জানান, বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বালুখালী ৮-ই ক্যাম্পে আগুন লাগে। তা দ্রুত ৮ ডব্লিউ ক্যাম্পে ছড়ায়। বাতাসের বেগে তা ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী ৯ ও ১০ নম্বর ক্যাম্পে।

তিনি আরও জানান, আগুনের ভয়াবহতা বাড়ার সঙ্গে রোহিঙ্গারা ছোটাছুটি করেন। তারা শুধু ব্যবহারের কাপড় ও সামনে পাওয়া প্রয়োজনীয় পণ্য নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন।
বালুখালি ৮-ই এর ক্যাম্প ইনচার্জ মোহাম্মদ তানজীম জানান, বাতাসের গতি বেশি হওয়ায় আগুন বিভিন্ন ব্লকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নেভানোর চেষ্টা চালিয়ে সর্বশেষ রাত ৮টার দিকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানান, আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর একটি টিম কাজ করছে। প্রাণহানি এড়াতে বিভিন্ন ব্লক থেকে রোহিঙ্গা সদস্যদের সরিয়ে নেওয়ার কাজও চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়রা সড়কের ওপর চলে আসায় যানবাহন চলাচলে চরম ব্যাঘাত হয়। উৎস: যুগান্তর।

ad

পাঠকের মতামত