354761

অভিবাসীশূন্য হচ্ছে পশ্চিম ইউরোপ!

ডেস্ক রিপোর্ট।। তুরস্কের সীমান্ত লাগোয়া ভ্যালিনগ্রাদ বুলগেরিয়ার একটি ছোট শহর, যার বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। ক্যাসিনো এবং কাস্টামসের জন্য শহরটি পরিচিত। মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের অনেক ছোট শহরের মতো এ শহরেও বহুদিন ধরে অভিবাসী আগমন কমেছে।

তবে গত কয়েক মাসে হু হু করে বেড়েছে এর লোকসংখ্যা। এর একটি কারণ পশ্চিম ইউরোপে যাওয়া অভিবাসীরা এখন ফিরতে শুরু করেছে। শহরের মেয়র আনাসতাস কারচেভ সম্প্রতি এ খবর নিশ্চিত করেন।

এটি কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। এমনিতেই শহরটি ব্রিটিশ ও ফরাসি জুয়াড়িদের পছন্দের একটি জায়গা ছিল। তাছাড়া গত বছর শুরুতে করোনা মহামারি দেখা দেওয়ার পর মহাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে বুলগেরীয়রা দেশে ফিরতে শুরু করে। এছাড়া ইউক্রেন ও পূর্ব ইউরোপের অন্যান্য দেশের লোকজনও দেশে ফেরে। ভ্যালিনগ্রাদের অবস্থান যাতায়াতের রুটে হওয়ায় পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশের লোকের আগমন সেখানে ঘটে। বুলগেরিয়ার সরকারি হিসাব অনুযায়ী গত বছর মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে দেশটির সাড়ে ৫ লাখ নাগরিক দেশে ফেরত গেছে। এদের একটা বড় অংশ ফিরেছে গ্রিস সীমান্ত দিয়ে। এই সীমান্ত দেশটির পর্যটন শিল্পের প্রধান রুট।

পশ্চিম ইউরোপ থেকে আসা মানুষের সঙ্গে কথা বলে এর কারণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই সমীক্ষার ফল পাওয়া যায়। বেশির ভাগ পরিবার-পরিজনকে সঙ্গ দিতেই তারা দেশে ফেরার কথা জানিয়েছে। এরপর দ্বিতীয় কারণ কাজের সুযোগ হারানো। করোনা ভাইরাসের জন্য প্রায় এক বছর ধরে দেশে দেশে বহু লোক বেকার হয়েছে, শিল্পোন্নত পশ্চিম ইউরোপও এর ব্যতিক্রম নয়। তারা ঐসব দেশে আবার ফিরে যেতে আগ্রহী কি না, এই প্রশ্নের সরাসরি না সূচক উত্তর দিয়েছেন ১০ শতাংশ। যারা এক বছরের বেশি ঐ দেশগুলোতে তাদের ১৯ শতাংশও না বলেছে। ৪৭ শতাংশ জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের সূত্রে জানা যায়, মহামারিকালে দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশের অভিবাসী শ্রমিকদের দেশে ফেরার হার অনেক বেড়েছে। যেমন ভারতে ২১ লাখ এবং আফগানিস্তানে ৬ লাখের ওপর অভিবাসী দেশে ফিরেছে। দেশে ফেরা বেশির ভাগই শ্রমিক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। হতে পারে কয়েক বছরের মধ্যে মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু ইউরোপের পূর্ব থেকে পশ্চিমাঞ্চলের দিকে অভিবাসীর প্রবাহ আবার শুরু হবে কি না, সেটি মূলত নির্ভর করছে তিনটি বিষয়ের ওপর।

প্রথমত, কাজের জন্য ইউরোপের পূর্ব থেকে পশ্চিমে অভিবাসীদের যাওয়া অনেক দিনের পুরনো একটি রীতি। কেবল শ্রমিক নয়, উন্নত জীবনযাত্রার জন্য পশ্চিম ইউরোপ মেধাবীদেরও একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। মেধাপাচার ইউরোপের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে যথেষ্ট বৈষম্য তৈরি করেছে। মেধাবী পেশাজীবীরা পূর্ব ইউরোপ ছেড়ে যেভাবে পশ্চিমে পাড়ি জমাচ্ছে সেটি তাদের নিজেদের দেশে তৈরি করছে শূন্যতা। পূর্বাঞ্চল পিছিয়ে পড়ছে সমৃদ্ধ পশ্চিমের সঙ্গে। জব মার্কেটে প্রয়োজনীয় জনবলের সংকট দেখা দিচ্ছে। কেবল তাই নয়, নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার ওপরও। তবে গত দুই বছরে পূর্ব ইউরোপে জীবনযাত্রার মান কিছুটা বেড়েছে। করোনা দেখা দেওয়ার আগে থেকেই দেশে ফেরার একটি প্রবণতা সেখানে দেখা গেছে।

দ্বিতীয়ত পূর্ব ইউরোপের অর্থনীতি পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পেরেছে। যেটি লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে দেখা যায়নি। পূর্ব ও মধ্য ইউরোপের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে। এসব দেশের একটি সাধারণ সমস্যা শ্রমশক্তির ঘাটতি। এশিয়ার জনবহুল দেশগুলো যা অনেকটাই পুষিয়ে দিয়েছে। লাতিন আমেরিকার দেশগুলো সে সুযোগ পায়নি। এমনকি পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর জন্যও সাপ্লাই লাইন দীর্ঘ হওয়ায় তারা এশিয়ার শ্রমবাজার থেকে খানিকটা তফাতে রয়েছে।

তৃতীয়ত, ইইউ সদস্য হওয়ায় পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে শ্রমের গতিশীলতা রয়েছে। পক্ষান্তরে পশ্চিম ইউরোপ মেধাবী ও দক্ষ জনশক্তিকে আকর্ষণ করে। কলকারখানার চাকা সচল রাখতে যে সুলভ শ্রমশক্তি প্রয়োজন সেটি পূর্ব ইউরোপে বিদ্যমান। উন্নত মেধা ও সাশ্রয়ী শ্রম পূর্ব ইউরোপের অর্থনৈতিক ভিত মজবুত করেছে। তাই মহামারি সত্ত্বেও সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামেনি।

নীতিনির্ধারণী মহলের সামনে এখন প্রশ্ন হঠাত্ এত মানুষের আগমনের বিষয়টি কীভাবে সামাল দেওয়া হবে। এই লোকগুলো যেন আবার অন্য দেশে ফিরে না যায় সেজন্য স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে কাজে লাগানো যেতে পারে, নিজদেশে মেধা ধরে রাখার অভিজ্ঞতা যাদের রয়েছে। স্বল্প অথবা সুদমুক্ত ঋণের সহজপ্রাপ্যতা, সরাসরি ভর্তুকি, সহজ করহার বিদেশফেরত লোকদের দেশে দীর্ঘ সময় থেকে অনুপ্রাণিত করতে পারে। এর জন্য খুব বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন নেই। উৎস: ইত্তেফাক।

 

ad

পাঠকের মতামত