353926

বিয়ে দেখতে উৎসুক জনতারও ভিড়, বরের বয়স ১০৭ বছর, কনে ৯২

নিউজ ডেস্ক।। দিনাজপুরের বিরলে পুনরায় বিয়ে করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আলোচিত হয়েছেন এক প্রবীণ দম্পতি। সম্পর্কের স্তর শেষ হবার কারণে অর্থাৎ পাঁচপিড়ি পার হওয়ার কারণে এ আয়োজন বলে জানান বিয়ের আয়োজক ও স্থানীয়রা।

গত ২১ ফেব্রুয়ারি জাঁকজমকভাবে হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী আবার এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হল। বিয়েতে বিয়ের গীত, গায়ে হলুদ, পুরোহিত, মন্ডপতলা, বৌ-ভাত, বাসর ঘর, বাদ্য-বাজনা, সাজসজ্জা, বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন ও ভূঁড়ি ভোজ-কোনটারই কমতি ছিলনা। বিশেষ করে বর-কনেকে এক নজর দেখার জন্য এলাকার উৎসুক জনতারও ভিড় ছিলো চোখে পড়ার মত।

অনেক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ এ আলোচিত বিয়ের আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে সবাই এক অন্য রকম আনন্দ করেছে। নতুন প্রজন্মের কাছে এই প্রবীণ দম্পত্তির পুনঃবিয়েটা একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে এমনটাই বললেন স্থানীয়রা।

প্রবীণ দম্পতির পুনঃবিয়ের ঘটনাটি ঘটেছে, দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্ম্মপুর ইউপির দক্ষিণ মেড়াগাঁও গ্রামে। আলোচিত দম্পতির ১০৭ বছর বয়সী এ বরের নাম বৈদ্যনাথ দেবশর্ম্মা এবং ৯২ বছর বয়সী কনের নাম পঞ্চবালা দেবশর্ম্মা। এখন তাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রবীণ বর বৈদ্যনাথ দেবশর্ম্মা সাংবাদিকদের জানান, দক্ষিণ মেড়াগাঁও গ্রামের স্বর্গীয় পিতা ভেলশু নাথ দেবশর্ম্মা ও স্বর্গীয় মাতা ভুলে বালা দেবশর্ম্মার পুত্র তিনি এবং কনে পঞ্চ বালা দেবশর্ম্মাও একই এলাকার মৃত বিদ্যা মন্ডল দেবশর্ম্মা ও মৃত শুভ বালা দেবশর্ম্মার কন্যা। গত প্রায় ৮০ বছর আগে তাদের সামাজিকভাবে হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী বিয়ে হয়।

এরপর সংসার জীবনে বিয়ের প্রায় তিন বছরের মাথায় এক কন্যা সন্তান আসে। কন্যার নাম রাখা হয় ঝিলকো বালা দেব শর্ম্মা। কন্যা ঝিলকো বড় হলে তাকে রীতিমত পাত্রস্থ করা হয়। বিয়ে দেয়ার কয়েক বছর পর কন্যার একটি আদরী বালা নামের কন্যা সন্তান অর্থাৎ আমাদের নাতনীর জন্ম হয়। নাতনী আদরী বালাও বড় হলে তাকে বিয়ে দেয়া হয়। নাতনীর বিয়ের পর তার কোল জুড়ে রেখা বালার জন্ম হয়।

ফলে আমরা সম্পর্কে বড় বাবা ও বড় মা হই। এরপর রেখা বালা বড় হলে তাকেও বিয়ে দেয়া হয়। কয়েক বছর পর তারও রুমি বালা নামের একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। সে আমাদের নাতনীর নাতনী। রুমি আমাদেরকে সম্পর্কে কি বলে ডাকবে? তার সাথে আমাদের সম্পর্কের স্তর শেষ হয়ে গেছে। তার পরেও সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় বেঁচে আছি বলে আমরা সম্পর্কের পঞ্চমস্তর বা পাঁচপীড়িতে অবস্থান করছি। আমরা দুটি মানুষ থেকে বর্তমানে আমাদের পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৫২ জনে দাঁড়িয়েছে।

এলাকাবাসীরা জানান, দম্পতি যদি জীবিত থাকে এবং সম্পর্কের পাঁচপীড়িতে অবস্থান করে তাহলে হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী পুনঃবিয়ে দেয়ার বিধান রয়েছে। তাই ওই প্রবীণ দম্পতির পুনঃবিয়ে দেয়া হয়েছে।

বিরলের ধর্ম্মপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাবুল চন্দ্র সরকার প্রবীণ দম্পতির পুনঃবিয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বর বৈদ্যনাথের কন্যা সন্তান ছাড়া পুত্র সন্তান নাই। কন্যার কন্যা থেকে তিনি পাঁচপীড়িতে অবস্থান করছেন। নতুন প্রজন্মের কাছে এই প্রবীণ দম্পতির পুনঃবিয়ে একটি ইতিহাস হয়ে থাকবে এমনটাই বললেন স্থানীয়রা।

 

ad

পাঠকের মতামত