353541

ভুয়া কাজীর যত কীর্তি

নিউজ ডেস্ক।। প্রথমে একজন রেজিস্টার্ড কাজীর নিকাহ বইয়ের পাতা চুরি করেন। এরপর নিজেই কাজী সেজে একে একে পঞ্চাশটি বিয়ে পড়ান। বিয়েগুলোতে স্বামী-স্ত্রী প্রায় সকলেই অপ্রাপ্তবয়স্ক। বয়স বাড়াতে নিজেই বানাতেন ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ। নিজেই পড়াতেন বিয়ে। এতসব অনিয়ম করে কাজী সেজেছেন আরিফুল ইসলাম আরিফ (৩৮)। তিনি ফুলগাজীর শ্রী চন্দ্রপুরের নুরুল ইসলামের ছেলে।

তবে শেষ রক্ষা হয়নি। গত মাসের ২০ তারিখ পুলিশ তাকে শহরের শান্তিধারা আবাসিক এলাকা হতে আটক করে। উদ্ধার করা হয়েছে পঞ্চাশটি ভুয়া কাবিন, বিভিন্ন এলাকার কাজীদের নামে সীল, তথ্য জাল করার বিভিন্ন সরঞ্জাম। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে প্রতারণা মামলা। এ মামলার বাদী কাজী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু তৈয়ব। চলতি মাসের ১০ ফেব্রুয়ারি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদলতে নিজের অপরাধ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে। ঘটনার উদঘাটনের পেছনে রয়েছে চমকপ্রদ ঘটনা।

গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর শহরের মডেল হাই স্কুলের সামনে হতে চৌদ্দ বছরের একটি মেয়ে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনার দুইদিন পর স্কুল ছাত্রীর বাবা ফেনী মডেল থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে খুঁজে পায় ভুয়া কাজীর যতসব অপকর্মের কথা।

অপহরণ মামলা হলেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম গাজী নিখোঁজ স্কুল ছাত্রী ও আজগর হোসেনের বিয়ের কাবিন ও মেয়েটিকে উদ্ধার করে। আজগরের বয়স আঠারো বছর, সে কালীদহ ইউনিয়নের মো. মোস্তফার ছেলে

এসআই নজরুল জানান, ২৪ সেপ্টেম্বর ছেলে মেয়ে উভয় ভুয়া কাজীর মাধ্যমে বিয়ের কাবিন করে। এরপর চট্টগ্রামে আজগরের এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান নেয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের বিয়ের কারন অনুসন্ধানে তিনি খুঁজে পান ফেনী জেলা কাজী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু তৈয়বের নিকাহ বইয়ের পাতা। তবে আবু তৈয়ব দাবি করেন, তার বই হতে পাতা চুরি হয়েছে। পরবর্তীতে স্কুল ছাত্রীর তথ্য মতে আটক করা হয় আরিফুল ইসলাম আরিফকে।

নজরুল ইসলাম জানান, অপহরণ মামলায় আজগর পলাতক হলেও তার পিতা ও ভগ্নিপতি মো. শাহজাহান গ্রেফতার রয়েছে।

তিনি জানান, ভুয়া কাবিন তৈরির পূর্বশর্ত হল ভুয়া জন্ম নিবন্ধন। এসব জন্ম নিবন্ধন সনদ বের হচ্ছে কোন না কোন ইউনিয়ন পরিষদের অসাধু কর্মকর্তার মাধ্যমে। অপকর্ম ঘিরে বড় অংকের লেনদেনের সুযোগ রয়েছে।
কাজী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন জানান, আমরা এ ঘটনা আগেই টের পেয়েছিলাম। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য উপাত্ত না থাকায় ব্যবস্থা নিতে পারিনি। ইতোমধ্যে সে পুলিশের হাতে আটক হয়েছে। সমিতির সাবেক সভাপতি আবু তৈয়ব বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

তিনি আরও জানান, ভুয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অসাধু উপায়ে সংগ্রহ করা হয়েছে। কিভাবে করেছে সে ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না।

ad

পাঠকের মতামত