353436

আম্বানি-বেজোস বাণিজ্যিক লড়াই ভারতে বিনিয়োগে ‘এসিড টেস্ট’

নিউজ ডেস্ক।। মার্কিন শীর্ষ ধনী অ্যামাজনের মালিক ও ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপের মুকেশ আম্বানির মধ্যে ব্যবসা বিতর্ক আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সিঙ্গাপুর আদালত রায় দিয়েছে। এখন এ রায় ভারতে বহাল থাকে কি না তার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে দেশটিতে বিদেশি বিনিয়োগের আকর্ষণের বিষয়। দি প্রিন্ট

বিশ্বের এই দুই শীর্ষ ধনী জেফ বেজোস ও মুকেশ আম্বানির মধ্যে ভারতের ১ ট্রিলিয়ন ডলারের খুচরা বাজার দখল নিয়ে বাণিজ্যিক যুদ্ধ চলছে রীতিমত। অ্যামাজনের ফিউচার রিটেইল লিমিটেডের সম্পদ অধিগ্রহণের বিষয়টি নিয়েই এ যুদ্ধ শুরু হয় রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে।

ভারতের সবচেয়ে বড় ধরনের বিনিয়োগ এটি। কিন্তু দিল্লির হাইকোর্টের একজন বিচারক অ্যামাজনের কাছে ফিউচার গ্রুপের সম্পদ বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। অ্যামাজন অবশ্য এর বিরুদ্ধে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে আপিল করতে পারবে। এখন সিঙ্গাপুরের আদালত কিংবা বিদেশি আইনজীবীদের দেয়া রায় ভারতের আদালতে বহাল থাকে কি না সেদিকে গভীর দৃষ্টি রাখছে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। কারণ এটি তাদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ নজির সৃষ্টি করতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের রেটিং অনুসারে ভারতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে চুক্তি রক্ষার দিক থেকে দেশটি ভেনেজুয়েলা, সিরিয়া ও সেনেগালের চেয়ে খারাপ অবস্থানে রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের রেটিংয়ে চুক্তি বাস্তবায়নের সবচেয়ে নীচের ১৫ শতাংশ দেশগুলোর মধ্যে অবস্থান করছে ভারত। দিল্লির সাবেক এক বিচারক ভরত চাগ বলেন বিদেশি আদালতের নির্দেশকে প্রভাবিত করায় ভারতে বিনিয়োগের পরিবেশ ইতিমধ্যে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উচ্চতর আদালতে আইনজীবী হিসেবে ব্যবসা করার সুবাদে ভরত চাগ বলেন চুক্তির দ্রুত বাস্তাবায়ন ও বিদেশি আদালতের রায় অনুসারে তা অব্যাহত রাখা ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ নিশ্চিত করবে এবং একারণেই তা জরুরি।

তবে রিলায়েন্স গ্রুপ ও অ্যামাজনের ভারত অফিস বা ফিউচার গ্রুপের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। ফিউচার রিটেইলের আইনজীবীরা আদালতে বলেছেন অ্যামাজনের সঙ্গে চুক্তি অব্যাহত থাকলে তা হবে কোম্পানিটির ঋণখেলাপি থেকে ও এর কর্মচারীদের চাকরি রক্ষার একমাত্র উপায়। গত নভেম্বর থেকে ফিউচার রিটেইলের শেয়ার মুম্বাই শেয়ার বাজারে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে অ্যামাজনের বিনিয়োগের খবর শুনে। ব্লুমবার্গ বলছে হংকং শেয়াবাজারে একই কারণে ফিউচারের শেয়ারের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বরে ভোডাফোন গ্রুপের ওপর ভারত সরকার যে ৩ বিলিয়ন কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ এনে মামলা করে তা আদালত নাকচ করে দেয়।

একই ধরনের আরেক মামলায় কেয়ার্ন এনার্জিকে ১.২ বিলিয়ন ডলার ফেরত দিতে ভারত সরকারকে নির্দেশ দেয় আদালত। ভোডাফোনের বিরুদ্ধে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে ভারত মামলা করেছিল সিঙ্গাপুরের আদালতে। গত সোমবার ভারতের পার্লামেন্টে বিষয়টি অবহিত করা হয়। ভারতে বিনিয়োগ করার পর বিদেশি কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মামলা মোকাদ্দমায় নিজেদের পক্ষে রায় পেলেও তা বাস্তবায়নে বছরে পর বছর সময় লেগে যায়। বিদেশে আদালতে কোনো রায় এসব কোম্পানিগুলো পেলেও যদি বিপক্ষ তা মেনে না নেয় তাহলে ভারতের আদালতের মাধ্যমে তার সুরাহা হওয়া প্রায় অসম্ভব।

গত অক্টোবরে সিঙ্গাপুর আদালত রিলায়েন্সের কাছে ফিউচার গ্রুপ বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। অ্যামাজনের পার্টনার হিসেবে ফিউচার গ্রুপের সঙ্গে যে চুক্তি করেছিল যাতে এর কোনো সম্পদ রিলায়েন্স গ্রুপের কাছে বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু ফিউচার রিটেইল বলছে অ্যামাজনের সঙ্গে চুক্তি সত্ত্বেও এতে কোনো বাধা নেই এবং সিঙ্গাপুর আদালতের রায় ভারতে গ্রহণযোগ্য হবে না। একারণেই অ্যামাজনকে দিল্লি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হতে হয়। হাইকোর্টের ২ জন বিচারকের একটি প্যানেলের একজন বিচারক বলছেন সিঙ্গাপুর আদালতের রায়ের গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং তা ভারতে কার্যকর হতে পারে। বিষয়টি নিয়ে আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ফের শুনানি হবে। তবে অ্যামাজন মনে করছে বিষয়টির চূড়ান্ত সুরাহা হতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত দৌড়াতে হবে।

 

ad

পাঠকের মতামত