353121

রাজধানীর ইউল্যাব শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যা: সেদিন যা ঘটেছিল

নিউজ ডেস্ক।। রাজধানীর ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস অব বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় ওই শিক্ষার্থীর বাবা বাদি হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় ওই শিক্ষার্থীর বন্ধু মর্তুজা রায়হান চৌধুরীকে (২১) ধর্ষণকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। অন্য চার আসামির মধ্যে তিন জন হলেন- নুহাত আলম তাফসির (২১), আরাফাত (২৮) ও নেহা (২৫)। আরেকজনের নাম জানা যায়নি। মামলায় অজ্ঞাত হিসেবে তাকে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার মর্তুজা রাহয়ান চৌধুরী ও নুহাত আলম তাফসিরকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

এদিকে অতিরিক্ত মদপানে ওই শিক্ষার্থীর আরেক বন্ধু আরাফাত রাজধানীর সিটি জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছে। চিকিৎসকরা আরাফাতের মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘অতিরিক্ত মদ্যপান’ উল্লেখ করেছে।

মৃত্যুর পরপরই বিষয়টি পুলিশকে না জানিয়ে তার মরদেহ দাফন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এই ঘটনার রহস্য জানতে আরাফাতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে পুলিশ। প্রয়োজনে কবর থেকে তার মরদেহ উত্তোলনের আবেদন করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এছাড়া নিহত তরুণীর বান্ধবী নেহাকে খুঁজছে পুলিশ। তিনি বর্তমানে সুস্থ কিংবা জীবিত আছে কি না এ বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ।

পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে শুনেছি নেহার এক বন্ধু বিমানবন্দর থেকে মদ এনে উত্তরার ব্যাম্বুসুট রেস্টুরেন্টে বসে পান করেছে। আমরা সেই ছেলের নাম পরিচয় এখনো পাইনি। তাকে খোঁজা হচ্ছে। সেই মদপানের কারণেই কিছু হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এছাড়া মদ পান করার কারণে বিষক্রিয়া হয়েছে কি না তা আমরা তদন্ত করছি। এছাড়া উত্তরার যে রেস্টুরেন্ট থেকে এই মদ্যপান করা হয়েছিল, তাদের লাইসেন্স আছে কি না তাও তদন্ত করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, নিহত শিক্ষার্থীর ভিসেরা নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে, অতিরিক্ত মদপান, মদে বিষক্রিয়া অথবা বেশি মদ পান করিয়ে ধর্ষণের ঘটনা ঘটতে পারে।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি আব্দুল লতিফ বলেন, রায়হানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি ইতিমধ্যে চেক করা হয়েছে। সেটি দেখে আমাদের মনে হয়েছে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত ছিল এবং এ বিষয়ে দুইজনই অবগত ছিলেন। বাকিদের মোবাইল ফোনগুলো সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। এটি মূলত একটি ড্রিংক পার্টি ছিল (মদপান)। পার্টি আয়োজনের অন্য কোনো উদ্দেশ্য তদন্ত করে পাইনি।

গ্রেফতারকৃত মর্তুজা রায়হান চৌধুরী ও নুহাত আলম তাফসিরকে জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য দিয়ে পুলিশ জানায়, নিহত শিক্ষার্থীর সঙ্গে রায়হানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তারা আগে থেকেই ২৮ জানুয়ারি বিকেলে দেখা করার পরিকল্পনা করেন। এদিন বিকালে তারা হাতিরপুলের মোতালিব প্লাজার সামনে একত্রিত হন। সেখানে তাদের সঙ্গে দেখা হয় আরেক বন্ধু আরাফাতের। আরাফাত তাদের গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে দাওয়াত আছে বলে জানান। সেই দাওয়াতে যাওয়ার জন্য তারা প্রথমে আরাফাতের বাসায় যান।

সেখান থেকে যাওয়ার সময় আরাফাত তাদের জানায়, রেস্টুরেন্টের লোকেশন একটু বদল হয়েছে। পরে তারা উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ব্যাম্বেসুট রেস্টুরেন্টে যান। রেস্টুরেন্টে আগে থেকেই উপস্থিত ছিলেন ওই শিক্ষার্থীর বন্ধু নেহা ও তার আরেক ছেলে বন্ধু। রেস্টুরেন্টে তারা পাঁচজন একত্রিত হয়ে মদপান করেন। একপর্যায়ে নেহা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন নেহা ও তার বন্ধু চলে যান। রেস্টুরেন্টে আরাফাত, রায়হান এবং ওই শিক্ষার্থী মদপান করতেই থাকেন। একপর্যায়ে নিহত ওই শিক্ষার্থী টয়লেটে গিয়ে বমি করেন। সেই অবস্থা দেখে রায়হান ও আরাফাত ওই শিক্ষার্থীকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে একটি উবার নেন। উবারে ওই শিক্ষার্থী ও রায়হানকে গুলশান-২ এ নামিয়ে দেন আরাফাত।

গুলশানে নেমে ওই শিক্ষার্থী বলেন, সে বাসায় যাবে না, তাকে তার বান্ধবী তাফসিরের বাসায় নিয়ে যেতে বলে। তখন তারা দুইজন মোহাম্মদপুর হোমস লিমিটেডের ৯ নম্বর বিল্ডিংয়ের বাসায় যান। সেদিন তাফসির বাসায় একা ছিল। ২৮ তারিখ রাতে তারা তাফসিরের বাসায় যান। এরপর রায়হান ও ওই শিক্ষার্থীকে এক রুমে থাকতে দেন তাফসির। পরদিন ভোরে তাফসিরের বাসায় ওই শিক্ষার্থীকে রেখে নিজের বাসায় চলে যান রায়হান। সকাল থেকে দুর্বল বোধ করছিলেন ওই তরুণী।

দুপুরে তাফসিরের বাসায় এসে আবার খোঁজ নেন রায়হান। শুক্রবার মধ্যরাতে রায়হান তার বন্ধু কোকোকে ফোন দিয়ে তরুণীর শারীরিক অসুস্থতার কথা জানান। তখন কোকো এসে তাকে প্রথমে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে হাসপাতালে পর্যাপ্ত আইসিইউ সুবিধা না থাকায় ৪০ মিনিট পর তাকে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আইসিইউতে রাখা হয় তরুণীকে। তখন রায়হান ওই তরুণীর বাবাকে ফোন করে এ বিষয়ে জানান। তরুণীর বাবা চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসেন। ৩১ জানুয়ারি রবিবার সকালে ওই তরুণীর মৃত্যু হয়।

 

ad

পাঠকের মতামত