353023

অভাব–অনটনে কোলের শিশুকে অথৈ পানিতে ছুড়ে ফেললেন মা!

নিউজ ডেস্ক।। কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের কাশিমবাজার সংলগ্ন একটি ব্রিজ থেকে অথৈই পানিতে কোলের শিশুকে ফেলে দিলেন এক মা। পানিতে পড়ে ১৫ মাসের ওই শিশুটি ভাসতে থাকে অনেকক্ষণ।

পরে পথচারী এবং এলাকাবাসী শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে। শিশুটি এখন স্থানীয় রফিকুল ইসলাম এবং এলিনা দম্পতির কাছে রয়েছে।

এলিনা শিশুটিকে তার বুকের দুধও পান করিয়েছেন। শিশুটি এখন সুস্থ আছে। তবে শিশুটির মা জমিলা বেগম শিশুটিকে ফেলে দিয়েই নিজ বাড়িতে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী জানায়, ঘটনার দিন (শুক্রবার) সকালে জমিলা দুই কেজি চাল সবার আড়ালে বিক্রি করে শিশুর জন্য খাবার ও তেল সাবান কিনে আনলে তার বাবা রাগান্বিত হয়ে জমিলাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। মনের দুঃখে অবুঝ শিশুকে নিয়ে হতাশ জমিলা বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কাশিম বাজার সংলগ্ন একটি ব্রীজের ২০ ফিট নিচে পানিতে ফেলে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী দুলাল হোসেন সন্তোষ জানান, সকাল নয়টার দিকে বাড়ি থেকে তিনি ওই পথে বাজারে যাচ্ছিলেন। এসময় ব্রিজটির উপরে উঠলে একটি মহিলাকে কিছু পানিতে ফেলতে দেখে। কিছু পড়ার শব্দ শুনে নিচে তাকিয়ে দেখে একটি শিশু পানিতে ভাসছে এবং হাত-পা নাড়াচ্ছে। এ ঘটনা দেখে আমি চিৎকার করলে স্থানীয় ফরিদুল ইসলাম এবং একজন পথচারী এগিয়ে এসে পানিতে নেমে শিশুটিকে উদ্ধার করে।

উদ্ধারের পর আগুন জ্বালিয়ে তাপ দিয়ে শিশুটিকে সুস্থ্য করা হয়। এসময় ব্রিজের পাশের বাড়ির রফিকুল ও এলিনা বেগম দম্পতি শিশুটিকে তাদের কাছে নেন। এলিনা বলেন, শিশুটিকে আমি আমার বুকের দুধ খাইয়েছি। শিশুটিকে আমি লালন পালন করতে চাই।

জমিলা বেগম জানায়, একবছর আগে দুই মাসের সন্তান জাহিদকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি রংপুর থেকে বিতাড়িত হয় সে। পরে উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের পূর্বকেদার গ্রামের দরিদ্র পিতা জয়নাল মিয়ার বাড়িতে উঠে। বাপের বাড়িতে অভাব অনটন থাকায় তার সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে প্রায় ঝগড়া হতো। সন্তানের খাবার এবং তার খরচ চালাতে মাঝে মধ্যে তাকে শারীরিক এবং মানষিক নির্যাতন সহ্য করতে হত। এসব যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে সন্তানকে পানিতে ফেলে মেরে ফেলার চিন্তা আসে তার।

জমিলা বেগমের পিতা জয়নাল মিয়া জানান, সকালে আমি ও আমার ছেলে মাটি কাটতে এসেছি। মাটিকাটার স্থানের পাশে মানুষের কোলাহল শুনে জানতে পারলাম আমার মেয়ে জমিলা তার ছেলে জাহিদকে পানিতে ফেলে দিয়েছে। কি কারণে এরকম কাজ করলো তা আমি জানিনা।

তিনি আরো বলেন, দুই বছর আগে রংপুরের মর্ডান মোড়ের ভর্ত কবিরাজের ছেলে হাফিজুরের সাথে জমিলার বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পরেই সংসার ভাঙে জমিলার। এসময় দুই মাসের শিশু জাহিদকে নিয়ে তার বাড়িতে ফিরে আসে জমিলা। পরে তিন সন্তান নিয়ে বড় মেয়ে জরিনাও ফিরে আসে তার বাড়িতে। দিনমজুরি করে নয় সদস্যর পরিবারের ভরণপোষণ চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে।

জমিলার মা জবেদা বেগম জানান, জমিলার সন্তান নিয়ে পরিবারে প্রায় অশান্তি লেগেই থাকতো। তার খরচ চালাতে চাইতো না জমিলার বাবা। জমিলার বৃদ্ধা নানী সুফিয়া বেওয়া জানান, তার ভিক্ষাবৃত্তির চাল দিয়ে মাঝেমধ্যে জমিলার সন্তানের খরচ চলতো। জমিলা তার সন্তানের জন্য অনেক নির্যাতন সহ্য করেছে। তাই নির্যাতন থেকে বাঁচতে সন্তানকে পানিতে ফেলে দিতে হয়েছে।

বলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান জানান, ‘শিশুটি আপাতত রফিকুল ও এলিনা বেগম দম্পতির কাছে রয়েছে। তাকে তার মায়ের কাছে ফেরত দেয়া হবে।’ ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা জানান, বিষয়টি আমি জানতে পেরেছি, চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়ে খোঁজখবর নিয়ে ওই পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করতে বলেছি।

 

ad

পাঠকের মতামত