353016

যশোর-৬ আসনের এমপি চাকলাদার ও ওসির ফোনালাপে তোলপাড় : (অডিওসহ)

নিউজ ডেস্ক।। যশোর-৬ আসনের এমপি শাহীন চাকলাদার ও কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিনের মধ্যে ফোনালাপ নিয়ে তোলপাড় চলছে।

এরই মধ্যে এই ফোনালাপটির রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ফোনালাপের এক পর্যায়ে কেশবপুরের পরিবেশ আন্দোলনকর্মী শেখ সাইফুল্লাহর বিরুদ্ধে ‘ডাকাতির উদ্দেশে বোমা হামলা’ মামলা করতে ওসিকে নির্দেশনা দেন এমপি শাহীন চাকলদার। শাহীন চাকলাদার যশোর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও।

সম্প্রতি যশোর এলাকায় ‘মেসার্স সুপার ব্রিকস’ নামে অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা একটি ইট ভাটার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট করেন সাইফুল্লাহ। এরপর আদালত ভাটা বন্ধে নির্দেশনাও দেন। এই কারণে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে ক্ষুদ্ধ হন এমপি। এরপর সপ্তাহ দুয়েক আগে কেশবপুর থানার ওসির মোবাইলে কল করে সাইফুল্লাহকে মামলায় ফাঁসাতে ওই নির্দেশনা দেন এমপি।

সাইফুল্লাহ কেশবপুরের সাতবাড়িয়া গ্রামের একজন পরিবেশবাদী কর্মী। পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত।

ফোনালাপে শোনা যায়- চালকাদার নিজেকে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সদস্য পরিচয়ের কথা উল্লেখ করেন। সাইফুল্লাহ সম্পর্কে ওসির কাছে জানতে চান। পরে ওসিকে সাফ জানিয়ে দেন- এলাকায় কোনো ব্রিকস বন্ধ হবে না।

শাহীন চাকলাদার ওসিকে বলেন- ‌‌‘আপনি এখন রাত্তিরে থানায় বোম মারেন একটা। মারায়ে ওর নামে মামলা করতে হইবে। পারবেন? আপনি থাকলে এগুলো করতে অইবে। না অইলে কোন জায়গায় করবেন? আমি যা বলছি, লাস্ট কথা ইডাই। যদি পারেন ওই এলাকা ঠাণ্ডা রাখতি, আমি বন ও পরিবেশ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সদস্য। ওখানে কারও বাপের ক্ষমতা নেই। সে (সাইফুল্লাহ) বারবার যেয়ে রকন করে, আপনি কী করেন?’ এর উত্তরে ওসি বলেন, ‘ও তো স্যার হাইকোর্টের কাগজ নিয়া আসে বারবার।’ এরপর শাহিন চাকলদার বলেন, ‘আরে কোথার হাইকোর্ট-ফাইকোর্ট। কোর্ট-ফোর্ট যা বলুক, বলুইগ্যা। আমাদের খেলা নাই? খেলা নাই?’

এক পর্যায়ে শাহীন চাকলদার ওসির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ওসি হলি, ওসি কিন্তু ডায়নামিক হইতে অয়। আজকে বাঘারপাড়া ওসি আসছিল আমার কাছে। ওরে আবার চৌগাছায় দিয়ে দিচ্ছি। ওসি.. চেনেন? বাঘারপাড়া ওসিকে চেনেন? কথা বইলেন তার সাথে। তাকে নিয়ে আসতেছি চৌগাছায়। আপনে ওকে যেকোনো ভাবে, যেকোনো লোক দিয়ে, কাইলকে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটায়ে কালকে কাজটা করেন, ওকে?’

জবাবে ওসি বলেন, ‘স্যার, দেখি স্যার। কী হয়েছে স্যার? ও কি ডিস্টার্ব করতেছে আবার?’ উত্তরে শাহীন চাকলাদার বলেন, ‘ও কী ডিস্টার্ব করবে? আচ্ছা, বন ও পরিবেশ অফিসে আমি আছি। কার বাপের ক্ষমতা আছে এখানে আসবে! আমি বলছি কী, একটা আপনি খেলা খেলে ওকে ভেতরে নিয়ে আসেন। কথা বুঝেন নাই?’

এক পর্যায়ে নশাহীন চাকলাদার বলেন, ‘বেলা-ফেলা আমি দেখবোনে, আমি তো স্থায়ী কমিটির সদস্য।’ তখন ওসি বলেন, ‘হাইকোর্টের কাগজটা স্যার।’ শাহীন চাকলাদার বলেন, ‘হাইকোর্ট কী বলেছে?’ ওসি বলেন, ‘গতকাল একটা কাগজ আসছে হাইকোর্টের থেকে স্যার।’ শাহীন চাকলাদার বলেন, ‘কী আছে?’ এর উত্তরে ওসি বলেন, ‘আমি দেখাবনে স্যার কালকে। কালকে সকালে হোয়াটসঅ্যাপে দিয়ে দেবোনে আপনারে, স্যার। হাইকোর্ট থেকে স্পষ্ট নির্দেশনা আসছে ওই যে, সুপার ব্রিকস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিসে স্যার।’

জানতে চাইলে কেশবপুর থানার ওসি জসিম উদ্দিন সমকালকে বলেন, ‘এমপির সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়। তবে এই ধরনের কোনো ফোনালাপ হয়েছে- এটা স্মরণে আসছে না।’

তবে যশোরের একাধিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই ফোনালাপের কণ্ঠ কেশবপুর থানার ওসির, এটা নিশ্চিত।

এ বিষয়ে জানতে অনেক চেষ্টা করেও শাহীন চাকলাদারের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে এই ঘটনায় শনিবার কেশবপুর থানায় জিডি করেছেন সাইফুল্লাহ। জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, শাহীন চাকলাদার ওসিকে যে মামলা করতে বলেছেন তাতে তিনি বর্তমানে জান-মালের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাই তিনি আইনের সহায়তা চান। উৎস: সমকাল ও যুগান্তর।

ad

পাঠকের মতামত