352428

হালুয়াঘাটে শত পরিবার পেলো মাথা গোঁজার ঠাঁই

গৃহহীন বৃদ্ধা আম্বিয়া থাতুন। বয়স ৭৫ পেরিয়েছে। স্বামী মৃত দিল মাহমুদ গত হয়েছেন বহু বছর আগে। এক ছেলে ও এক মেয়ে তার। অভাবের কারণে ছেলে তার শশুরবাড়িতে থাকেন ঘরজামাই। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বৃদ্ধা আম্বিয়া খাতুন ভিক্ষাবৃত্তি করে তার জীবন চালান। কৈঢ়াপুর ইউনিয়নের নৈয়ারীকুড়া গ্রামে সরকারি খাস জমিতে ছোট্ট একটি ছনের ঘরে খাকেন তিনি। জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকা ঘর পেয়ে আনন্দের যেন শেষ নেই তার। জীবনের পরতে পরতে যেখানে কষ্ট আর দুঃখ লুকিয়ে আছে, সেখানে যেন এই একখণ্ড জমি ও ঘর পাওয়া যেন স্বপ্নের মতো। তাই তো প্রতিদিন এসে বসে থাকেন তার জন্য নির্মানাধীন ঘরের পাশে।

 

উপজেলার বিড়ইডকুনী গ্রামের আরেক গৃহহীন দিনমজুর দুলাল মিয়া। বয়স ৫৫ পেরিয়েছে। নিজের জায়গা জমি বলতে কিছুই নেই। আজ এখানে তো কাল ওখানে। ২ মেয়েকে বিয়ে দিয়ে বর্তমানে স্ত্রী ও ছোট এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের ভাঙা গোয়াল ঘরে। স্ত্রী তাসলিমা মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করেন। এভাবেই যাযাবরের মতো জীবন চলছে তাদের। উপজেলা প্রশাসনের মাইকিংয়ের মাধ্যমে জানতে পারেন গৃহহীনদের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেওয়া হচ্ছে। স্বপ্ন শুরু সেখান থেকেই। আর দশজনের মতো তিনিও আবেদন করেন ঘরের জন্য। এখন তার মনে আনন্দের শেষ নেই। তিনি বলেন, এখন অন্তত মরে গেলেও দুঃখ থাকবে না। অন্তত স্ত্রী সন্তানদের জন্য মাথা গোজাঁর ঠাঁই তো পেয়েছি।

ঘোষবেড় গ্রামের রেনু আরা বেগম। বয়স ৪০ বছর। খালার বাড়িতে যাযাবরের মতো এক টুকরো ভূমিতে ভাঙা টিনের ছোট্ট ঘরে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে থাকেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে স্বামী ভরণ-পোষণ দেন না। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে তার সংসার চলে। ছেলেকে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানে দিয়ে রেখেছেন। দুঃখ কষ্টের সংসারে তিনিও পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকা ঘর। এখন প্রতিদিন সকালে নির্মাণাধীন ঘরে পানি দেন।

আম্বিয়া, দুলাল ও রেনু আরা বেগমের মতো এমন ১০০ পরিবারের জীবন চিত্র প্রায় একই। সংসার চালাতে যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে পাকা ঘর ও জায়গা পাওয়া স্বপ্নের যেন বাস্তব রূপ তাদের কাছে।

হালুয়াঘাট উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে উপজেলার ভূমিহীনদের গৃহনির্মাণ কর্মসূচির আওতায় হালুয়াঘাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের আকনপাড়া ও গোবরাকুড়া, ধুরাইল ইউনিয়নের পাবিয়াজুড়ি, কৈচাপুর ইউনিয়নের নৈয়ারীকুড়া, নড়াইল ইউনিয়নের গোপীনগর, গাজিরভিটা ইউনিয়নের গাবরাখালী গ্রামে ভূমিহীন ও গৃহহীন ১০০ পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি পরিবারকে ২ শতক জায়গা ও ২ কক্ষ বিশিষ্ট ঘর দেওয়া হচ্ছে। আগামী ২৩ জানুয়ারি শনিবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে একযোগে এই ঘরের শুভ উদ্বোধন করবেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম এ বিষয়ে বলেন, মুজিববর্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে অঙ্গীকার, দেশে কোনো ভূমিহীন গৃহহীন থাকবে না, সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য আমরা আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তালিকা পেয়ে সেখানে যাচাই-বাছাই করে প্রকৃত ভূমিহীনদের তালিকা করে ঘর ও জমি দিয়েছি। তবে কিছু কিছু ইউনিয়নে আমরা সরকারি খাস জায়গা পাইনি। আমাদের এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় প্রতিটি ঘরের জন্য এক লাখ ৭১ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। আমরা আশা করছি যেভাবে কাজ এগিয়ে যাচ্ছে শিগগিরইই আমরা ভুক্তভোগীদের হাতে ঘর ও জমির দলিল বুঝিয়ে দিতে পারবো।

 

ad

পাঠকের মতামত