352440

টিকায় অগ্রাধিকার চান না রাজনীতিকরা

করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলায় টিকা সংগ্রহ নিয়ে দেশে দেশে তুমুল প্রতিযোগিতা চলছে। কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে টিকা সংগ্রহ করে নাগরিকদের দেওয়া শুরু করেছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতেও টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন বয়স্ক নাগরিক ও সম্মুখযোদ্ধারা। কিন্তু ভারতে কয়েকজন জনপ্রতিনিধির টিকা গ্রহণ নিয়ে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়েছে। সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে তাঁরা দাবি করেছেন, অগ্রাধিকারের তালিকায় রাজনীতিকদের নামও থাকা উচিত। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিকরা কী মনে করছেন? তাঁরা কি আগে টিকা পেতে চান? গত সোমবার কালের কণ্ঠ’র প্রতিবেদকদের করা এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। রাজনীতিতে মতভিন্নতা থাকলেও এই ক্ষেত্রে তাঁরা সবাই একই মতামত দিয়েছেন। বলেছেন, রাজনীতিক নয়, সবার আগে করোনার টিকা পাওয়া উচিত ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিরা।

তাঁরা বলেছেন, যাঁরা বয়স্ক ও সম্মুখযোদ্ধা তাঁদের টিকা আগে দিতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, গণমাধ্যমকর্মীসহ যেসব মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন এবং বিভিন্ন রোগ-বালাইয়ের কারণে যাঁদের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি রয়েছে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি মনে করি আগে স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসনের লোকজনসহ ঝুঁকিপূর্ণদের করোনার টিকা দেওয়া উচিত। আমেরিকায় সেভাবেই টিকা দেওয়া হচ্ছে।’

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘রাজনীতিক হিসেবে বাড়তি সুবিধা নয়, যাঁরা বয়স্ক রয়েছেন অর্থাৎ অগ্রাধিকারের যে নীতিমালা নির্ধারণ করা হয়েছে সে অনুযায়ী টিকা প্রয়োগ করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন মেনে বয়স্ক ও সম্মুখযোদ্ধাদের আগে টিকা দেওয়া বাস্তবসম্মত হবে।’

টিকা প্রয়োগে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের অগ্রাধিকারের পক্ষে মতামত দিয়ে বিএনপি নেতারা বলেছেন, বিতরণের ক্ষেত্রে সরকারের কর্মপরিকল্পনা অবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। তাঁদের দাবি, বিভিন্ন মাধ্যমে টিকা আমদানি, সরবরাহ ও প্রয়োগের জন্য যে কর্মপরিকল্পনার তথ্য তাঁরা পাচ্ছেন সেটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) নিয়ম অনুযায়ী হচ্ছে না।

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে, বিশেষ করে পত্র-পত্রিকা থেকে জানতে পারছি সরকার গণভবন, সরকারি অফিস, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা ও তাদের পছন্দের লোকদের টিকা আগে দেবে। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী যে ক্যাটাগরি তারা করেছে তাতে বয়স্কদের আগে টিকা দেওয়ার কথা।’ তাঁর মন্তব্য, ‘করোনাকালে সরকারের আর্থিক সহায়তার মতোই হবে টিকা প্রয়োগ। দেখা যাবে ক্ষমতাসীনরাই সব লুটেপুটে খাচ্ছে।’

সম্প্রতি করোনাসংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য দেশবাসীকে জানাতে বিএনপি খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটির সদস্যদের মধ্যে আছেন দলটির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, তাঁদের জানা মতে, অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে টিকার জন্য সরকারের সঙ্গে সরকারের বা সরাসরি উৎপাদক কম্পানির সঙ্গে সরকারের চুক্তি হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে একটি বেসরকারি ওষুধ কম্পানির মাধ্যমে ভারত থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রেজেনেকার টিকা আনা হচ্ছে। রাশিয়া ও চীনের টিকার কার্যকারিতার সঙ্গে অক্সফোর্ডের টিকার কার্যকারিতা তুলনা করে তিনি প্রশ্ন করেন, ‘কেন সরকার ওই দুটি দেশের সঙ্গে চুক্তি করেনি?’

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতারা বলছেন, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের তাড়াহুড়া নেই। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা রওশন এরশাদ বয়সের ভারে ন্যুব্জ। তিনি বেশির ভাগ সময়ই নিজ বাসভবনে থাকেন। দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে বাসায় চিকিৎসাধীন। তিনি শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, সাধারণ মানুষকে বিনা মূল্যে টিকা দিতে হবে।

দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনীতিকদের চেয়ে সাধারণ মানুষকে অগ্রাধিকার দিতে চাই। আমরা মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করি। তাই নিজেদের বিষয়ে তাড়াহুড়া নেই।’

জাতীয় পার্টির প্রবীণ নেতা কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে আগে নয়, আমরা পেছনে থাকতে চাই।’

দলের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি ফয়সাল চিশতি বলেন, ‘আমি মনে করি না টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনীতিকদের নাম প্রথম কাতারে থাকা উচিত।’

 

ad

পাঠকের মতামত