352115

অবৈধ বিট কয়েনে কোটিপতি!

নিউজ ডেস্ক।। অনলাইনে বিট কয়েন (ভার্চুয়াল মুদ্রা, যা বাংলাদেশে অবৈধ) ক্রয়-বিক্রয় ও প্রতারণার মাস্টারমাইন্ড মো. রায়হান হোসেন ওরফে রায়হানকে (২৯) গাজীপুর জেলার সফিপুর থেকে আটক করেছে র‌্যাব। র‌্যাব-১-এর উপ-অধিনায়ক মেজর গাজী আশিকুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গাজী আশিকুর রহমান জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে যে, কতিপয় ব্যক্তি বাংলাদেশে অনলাইনে নিষিদ্ধ ভার্চুয়াল মুদ্রা (বিট কয়েন) ক্রয়-বিক্রয় করে আসছে এবং এর মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করে আসছে। এরই ধারাহিকতায় র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং সেলের মাধ্যমে অনলাইন পেট্রোলিংয়ে সক্রিয় হয় এবং গোয়েন্দা নজরদারি ও ছায়া তদন্ত অব্যাহত রাখে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব অনলাইনে বিট কয়েন ক্রয়-বিক্রয় ও প্রতারণার মাধ্যমে অবৈধ অর্থ উপার্জনকারী কতিপয় চক্রকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। অধিকতর নজরদারির মাধ্যমে র‌্যাবের নিকট অনলাইনে নিষিদ্ধ মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের মূল হোতা হিসেবে মো. রায়হান হোসেনের নাম উঠে আসে। ফলে র‌্যাব তার ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।

তিনি জানান, র‌্যাবের প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায় যে, মো. রায়হান হোসেন অনলাইনে ভার্চুয়াল মুদ্রার মাধ্যমে সাধারণ লোকজনের টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণাসহ মানি লন্ডারিং, ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিং ও বিপুল অংকের নিষিদ্ধ অনলাইন মুদ্রা (বিট কয়েন) লেনদেন করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার র‌্যাব-১-এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার সফিপুর দক্ষিণপাড়ায় আতর আলীর তৃতীয় তলার বাসার নিচ তলায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিট কয়েন ক্রয়-বিক্রয়সহ মানি লন্ডারিং, ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিংয়ের মাস্টারমাইন্ড রায়হান হোসেনকে আটক করা হয়।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা জানান, ওই সময় ১৯টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ২২টি সিম কার্ড, নগদ ২৫ ইউএস ডলারসহ একটি কম্পিউটার, ৩টি মোবাইল ফোন, একটি অডি গাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের সনদপত্র, ৩টি ভুয়া চালান বই, একটি ট্রেড লাইসেন্স, একটি রেকর্ডিং মাইক্রোফোন, একটি ক্যামেরা, একটি রাউটার ও বিভিন্ন ব্যাংকের ৪টি চেক বই উদ্ধার করা হয়।

রায়হানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানায়, তিনি ২০০৬ সালে ব্যক্তিগত আগ্রহে কম্পিউটারের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর তিনি ২০১১ সাল থেকে ওয়েব ডেপলপিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন ও ইউটিউব চ্যানেল ইত্যাদি পরিচালনা করে আসছিল।

র‌্যাব আরও জানায়, ২০২০ সালের জুন মাস থেকে রায়হান পাকিস্তানি নাগরিক জনৈক সাইদের (২২) সহায়তায় সরকার কর্তৃক অননুমোদিত/অবৈধ বিট কয়েন নামক ভার্চুয়াল মুদ্রার মাধ্যমে প্রতারণা করে অবৈধ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছেন। ২০২০ সালের জুন থেকে বিভিন্ন দেশের অননুমোদিত/অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রার মাধ্যমে প্রতারণামূলকভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছে। তিনি পাকিস্তান, নাইজেরিয়া ও রাশিয়ান স্মাগলার, ক্রেডিট কার্ড হ্যাকার ও অননুমোদিত/অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রার মাধ্যমে অবৈধ পাচারকারীদের সঙ্গে যোগসাজসে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে আসছেন। তিনি ক্রেডিট কার্ড হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ভার্চুয়াল মুদ্রা ক্রয় করেন।

র‌্যাব সূত্রে জানা যায়, রায়হান হোসেন স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করে নামে-বেনামে দেশি এবং বিদেশি অনলাইন ব্যাংক হিসাব তদারকি করতেন। এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজার ইউএস ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা যায়। তিনি ভার্চুয়াল মুদ্রার মাধ্যমে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে থাকেন, যাতে কোনো ধরনের প্রমাণ থাকে না। তার কাছ থেকে উদ্ধার বিভিন্ন কোম্পানির ২২টি সিম কার্ড, তার নিজ নামীয় ১৯টি জাল জাতীয় পরিচয়পত্র এবং এর চালানপত্র বইগুলো উদ্ধার করা হয়েছে। সে প্রতারণা ও জালিয়াতির কাজে ব্যবহার করে এবং জাল পরিচয়পত্র তিনি নিজেই তৈরি করতেন বলে জানান।

রায়হান অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ৫/৬ মাস আগে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা দিয়ে তেজগাঁও গুলশান লিংক রোডের শো-রুম থেকে অটউও গাড়ি ক্রয় করেন। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানিয়েছে র‌্যাব-১।

 

ad

পাঠকের মতামত