350049

হলিউডের দৃশ্য ব্যবহার করে ভাসানচর নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার

এবার হলিউডের সিনেমার কল্পিত দৃশ্যের কাট-পিস জোড়া লাগিয়ে ভাসানচর নিয়ে অপপ্রচারে নেমেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয় শিবিরে থাকা এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানামুখী চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে তারা। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন সিনেমার সুনামি দৃশ্যকে তারা ভাসানচরের বলে চালানোর চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পকে বাধাগ্রস্ত করতেই এ ষড়যন্ত্র বলে মনে করেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।

কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলে থাকা ১১ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে নানা সমস্যায় জর্জরিত। ছোট ছোট ঘিঞ্জি ঘরে তাদের দিন কাটাতে হচ্ছে। রোহিঙ্গা শিশুদের খেলার কোনো জায়গা পর্যন্ত নেই। এ অবস্থায় এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে অনুযায়ী নৌ বাহিনীর তত্ত্বাবধানে তৈরি করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানের আশ্রয়ণ প্রকল্প।

রোহিঙ্গা বিষয়ক গবেষক প্রফেসর ড. জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমি মনে করি, রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচর পুরোপুরি বসবাসযোগ্য হয়েছে। সেখানে বাড়ি আছে, সেখানে স্কুল আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সেখানে হাসপাতাল আছে। যদি কোনো কারণে ঝড় হয় সেটার জন্য শেল্টার হোম আছে। সবই আছে সেখানে।’

শুধুই যে ভারতীয় গণমাধ্যম এই ভাসানচর নিয়ে অপপ্রচার করছে তা নয়। রাজধানী ঢাকায় বসেও চলছে নানা চক্রান্ত। বিদেশি একটি গণমাধ্যমে বিশেষ করে ঢাকা থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের মোহনা পেরিয়ে সাগরে যেতেই জাহাজ দুলে উঠছে। কিন্তু নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সাগরের এ অংশ একেবারেই শান্ত থাকে। ওই প্রতিবেদক কথা বলা শুরুর আগে এবং পরের পরিস্থিতিও ছিল পুরো শান্ত। কিন্তু মাঝের কয়েক সেকেন্ড দেখানো হয়েছে দোলানোর ভিডিও। যা পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদকের নিজে নড়া এবং ক্যামেরা নড়ানোর দৃশ্য বলে মনে হচ্ছে।

প্রতিদিনই টেকনাফ-উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ঘটছে সংঘাতের ঘটনা। তাই দেশের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সংঘাত নিরসনে ভাসানচরে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর অব. এমদাদুল ইসলাম বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে কিছু রোহিঙ্গাকে যদি অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা করা হয় এবং তাদের গণবসতি সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে ভালো হবে।

যে ভারতীয় গণমাধ্যম আজ ভাসানচরের বিরোধিতা করছে সেই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে উড়ির চরে বসতি গড়ে তুলতে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছিলেন। সে সময়ের উড়ির চর মানব বসতির উপযোগী ছিল না। দিনে দু’বার জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যেত এই চর। সে তুলনায় ভাসানচরে উন্নত পরিবেশ রয়েছে। আর অন্তত ১৭০ বছরের ঘূর্ণিঝড়ের ইতিহাস পর্যালোচনা করেই নৌ বাহিনী ভাসান চরের রোহিঙ্গাদের জন্য স্থাপনা তৈরি করেছে।

ad

পাঠকের মতামত