349876

নবীজি যেসব বিষয়ে আল্লাহর আশ্রয় চেয়েছেন

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা: মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও তাঁর ভালোবাসা পেতে হলে রাসুল (সা.)-এর অনুসরণের বিকল্প নেই। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমার পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)

অতএব আমরা যদি আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চাই, আমাদের অবশ্যই রাসুল (সা.)-এর অনুসরণ করতে হবে। তিনি যা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন তা করতে হবে, এবং যেগুলো নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। তিনি যেসব বিষয়ে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন, আমাদেরও সেসব বিষয়ে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে। আজ আমরা আলোচনা করব এমন চারটি বিষয় সম্পর্কে যেসব বিষয়ে রাসুল (সা.) মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চারটি বস্তু হতে আশ্রয় চাই—এমন জ্ঞান যা উপকারে আসে না, এমন হৃদয় যা ভীত হয় না, এমন আত্মা যা তৃপ্ত হয় না এবং এমন দোয়া যা কবুল হয় না।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৪৮)

এমন জ্ঞান যা উপকারে আসে না

জ্ঞান মানুষকে আলোকিত করে। কিন্তু যখন কোনো মানুষের ওপর থেকে আল্লাহর রহমত উঠে যায়, তখন সেই জ্ঞানই তার ধ্বংসের কারণ হয়। তার জ্ঞানকে সে সমাজ ধ্বংসের কাজে ব্যয় করে। মহান আল্লাহ তার অন্তরকে অন্ধকার করে দেন, ফলে তার কাছে পাপকেই পুণ্য মনে হতে থাকে। তার নিজস্ব ভ্রান্ত চিন্তাগুলোকে সে কোরআন-হাদিসের চাইতেও বেশি আধুনিক ভাবতে থাকে। সে নিজেও পথভ্রষ্ট হয়, অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করতে থাকে। সমাজে অপরাধকে ছড়িয়ে দিতে থাকে। এ ধরনের ধ্বংসপ্রাপ্ত জ্ঞানপাপীদের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তবে কি আপনি লক্ষ করেছেন তাকে, যে তার খেয়াল-খুশিকে নিজ উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে? আর তার কাছে জ্ঞান আসার পর আল্লাহ তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তিনি তার কান ও হৃদয়ে মোহর করে দিয়েছেন। আর তিনি তার চোখের ওপর রেখেছেন আবরণ। অতএব আল্লাহর পরে কে তাকে হিদায়াত দেবে? তবু কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’ (সুরা : জাসিয়া, আয়াত : ২৩)

এমন হৃদয় যা ভীত হয় না

রাসুল (সা.) বলেছেন, (কিয়ামতের আগে) এই উম্মতের মন থেকে সর্বপ্রথম আল্লাহভীরুতা তুলে নেওয়া হবে। তখন তোমরা তাদের মধ্যে কোনো আল্লাহভীরু লোক দেখবে না। (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ২/১৩৯)

আর মানুষের মন থেকে যখন আল্লাহর ভয় উঠে যায়, সে সব করতে পারে। কোনো অপরাধই তার কাছে অপরাধ মনে হয় না; বরং অপরাধ করা ও অপরাধীর পক্ষ অবলম্বন করাই তাদের কাছে গর্বের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

এমন আত্মা যা তৃপ্ত হয় না

এই কথার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যে আত্মা আল্লাহর নিয়ামত পেয়েও শুকরিয়া জ্ঞাপন করে না। আমরা প্রতিটি মুহূর্তেই মহান আল্লাহর কোটি কোটি নিয়ামত ভোগ করি। আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামতগুলোর শুকরিয়া আদায় করা। এর মাধ্যমে নিয়ামতের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। পক্ষান্তরে কেউ যদি মহান আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত ভোগ করেও তাঁর শুকরিয়া আদায় না করতে পারে, এটি তার জন্য ধ্বংসের কারণ হবে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)

রাসুল (সা.) বলেন, মুমিন অবস্থা বিস্ময়কর। সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এই বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারে না। তারা সুখ-শান্তি লাভ করলে শুকরিয়া করে, আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে ধৈর্য ধরে, প্রতিটাই তার জন্য কল্যাণকর। (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৯০)

এমন দোয়া যা কবুল হয় না

কিছু মানুষের দোয়া মহান আল্লাহ কবুল করেন না, যেমন—যারা হারাম উপার্জন করে, হারাম খায়, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য তাড়াহুড়া করে, আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করে, অন্যমনস্ক হয়ে দোয়া করে। কেউ যদি চায় যে তার দোয়া কবুল হোক তাহলে অবশ্যই তাকে এই অভ্যাসগুলো ত্যাগ করতে হবে। এবং অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। কারণ দোয়া হলো ইবাদতের মগজ। পবিত্র কোরআনেই দোয়ার আদব শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা বিনীতভাবে ও গোপনে তোমাদের রবকে ডাকো। নিশ্চয় তিনি সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৫৫)

এ ছাড়া রাসুল (সা.) কুফুরি থেকে আশ্রয় চেয়েছেন, আশ্রয় চেয়েছেন দারিদ্র্য, ফিতনা, কবরের আজাব ও গুনাহ থেকে। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে ওই সব বিষয় থেকে রক্ষা করুন, যেসব বিষয়ে রাসুল (সা.) তাঁর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।

ad

পাঠকের মতামত