344992

যারা ধ’র্ষকের ফাঁ’সি চায়; তারাও বিশ্বাস করে ধ’র্ষণের কারণ মেয়েরাই : তসলিমা

গত দু’দিন ধরে ধ’র্ষণের প্র’তিবাদ করছে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা। ধ’র্ষণটা সারা বছর চলে। প্রতিবাদটা কিন্তু বরাবরই সিজনাল। অভিনেতা অনন্ত জলিল নাকি ধ’র্ষণের জন্য ধ’র্ষককে নয়, মেয়েদের দোষ দিয়েছেন। এ কি নতুন কিছু? ছেলেমেয়েরা অবশ্য অনন্ত জলিলের ওপর ক্ষে’পেছে। অনন্ত জলিলের মতটাই, মানি বা না-মানি, প্রায় সকলেরই মত। অনন্ত জলিল চাপে পড়ে ক্ষ’মা চেয়েছেন। ওই ক্ষমা তিনি অন্তর থেকে চাননি।

তার স্বতস্ফূর্ত প্রথম বক্তব্যই তার অন্তরের কথা, যা তিনি বিশ্বাস করেন। ক্ষমা চাওয়ার পরও বিশ্বাস করেন। স্রোতের অনুকূলেই যেতে হয় বলে গিয়েছেন। অভিনেতা মোশারফ করিমকে ঠিক এর উলটো কথা বলার অ’পরাধে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। উনি বলেছিলেন পোশাকের কারণে ধ’র্ষণ ঘটে না। ওই মন্তব্য করার পর মোশারফ করিমকেও চাপের মুখে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। হ্যাঁ, সত্য বলার জন্য তিনি ক্ষমা চেয়েছিলেন। সংশোধন করে মোশারফ করিম যা বলেছিলেন তা হলো পোশাকের কারণেই ধ’র্ষণ ঘটে।

ঘটনাটি কবে ঘটেছিল? দু বছর/ তিন বছর আগে? এই ক’দিনে দেশ কি এত ভালো হয়ে গেল যে অনন্ত জলিলকে ক্ষমা চাইতে হয় মেয়েদের পোশাকের কারণে ধ’র্ষণ ঘটে বলার জন্য? না, দেশ আগের মতো নষ্টই আছে, আগের মতোই নারীবি’দ্বেষী। শুধু কিছু লোকের প্র’তিবাদের বাই উঠেছে বলে মনে হচ্ছে দেশ বদলে গেছে। দেশের কিছু বদলায়নি, কাল থেকেই আবার পুরোদমে ধ’র্ষণ শুরু হবে।

এখনও হচ্ছে ধ’র্ষণ, আমরা খবর পাচ্ছি না। ঘরে ঘরে স্বামীরা কি স্ত্রীদের আজ ধ’র্ষণ করছেন না? নিশ্চয়ই করছেন। ধ’র্ষণ করার অধিকার, স্বামীরা বিশ্বাস করেন, তাদের আছে। সব বু’দ্ধিজীবী, রাজনীতিক, মন্ত্রী, মহামন্ত্রী, সমাজপতি প্রমুখও বিশ্বাস করেন আছে। আছে মনে করেন বলেই তো জো’র জবরদস্তি স্ত্রীর সঙ্গে শা’রীরিক সম্পর্ক করা আইনের চোখে আজও ধ’র্ষণ বলে গণ্য হয় না।

যারা ধ’র্ষককে ফাঁ’সি দেওয়া, ধ’র্ষকের ধ’র্ষদ’ণ্ড কর্তন করা, ধ’র্ষককে ক্র’শফা’য়ারে মে’রে ফেলা ইত্যাদির জন্য চি’ৎকার করছে, তাদের অধিকাংশই খুব গোপনে বিশ্বাস করে ধ’র্ষণের কারণ মেয়েরাই। মেয়েরা যদি সং’যত হয়ে চলাফেরা করতো, যদি ঠিকঠাক পোশাক পরতো, রাতে একা না বেরোতো, তাহলে ধ’র্ষণ হতো না। তাদের কেউ কেউ যে সুযোগ পেলে ধ’র্ষণ করবে না এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।

বাংলাদেশের বড় বড় বুদ্ধিজীবীই বিশ্বাস করেন ধ’র্ষণে। বিশ্বাস করেন মেয়েদের না মানে হ্যাঁ, বিশ্বাস করেন একটু জোর না করলে যৌ’ন স’ঙ্গমে আনন্দ নেই। সাধারণ মানুষ ব্যতিক্রম হলে কতটাই বা হবে! তবু হোক প্র’তিবাদ। এইসব প্র’তিবাদের ফলে, মুশকিলটা হলো, ধ’র্ষণের শা’স্তি মৃ’ত্যুদ’ণ্ড জারি করে সরকার তড়িঘড়ি দায়মুক্ত হবে। ধ’র্ষণের মূল কারণগুলোর চর্চা চলতেই থাকবে সমাজে। তাতে সরকারের কিচ্ছু যাবে আসবে না।

-তসলিমা নাসরিনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে

ad

পাঠকের মতামত