344873

সুদ দিতে ব্যর্থ হয়ে স্ত্রীকে ঋণদাতার হাতে তুলে দেন স্বামী!

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে এক স্বামী তার স্ত্রীকে ঋণদাতার হাতে তুলে দেওয়ার অ’ভিযোগ উঠেছে। এরপর ওই ভু’ক্তভো’গী নারীকে জো’রপূর্বক ধর্মান্তারিত করে বিয়েও করেন সেই ঋণদাতা ব্যক্তি।

জানা গেছে, বছর আট আগে জেলার মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের পান ব্যবসায়ী সুজয় বিশ্বাসের সঙ্গে ভু’ক্তভো’গীর বিয়ে হয়। এক বছর পর তাদের একটি মেয়ে হয়। তবে ২০১৮ সালে সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে তার স্বামী সুজয় একই এলাকার ইসমাইল মণ্ডলের হাতে তাকে তুলে দেন বলে অ’ভিযোগ ওই নারীর।

এরপর নি’র্যাতনের মুখে গত ৩১ আগস্ট ইসমাইলকে তালাক দিয়ে মাগুরা শহরের এক নারীর কাছে আশ্রয় নেন তিনি। এক ক্লিনিকে সেবিকার চাকরিও করছেন ভু’ক্তভো’গী এ নারী। তবে ইসমাইল তার পিছু না ছাড়ায় মী’মাংসার জন্য জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তার দারস্থ হয়েছেন ওই নারী।

জেলা লিগ্যাল এইডের আ’ইনজীবী শাহিনা আক্তার বলেন, ‘আইনগতভাবে তালাক দিলে কোনো নারীকে তার স্বামী আর স্ত্রী হিসেবে দাবি করতে পারেন না। তাছাড়া তালাক দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে তা এমনিতেই কার্যকর হয়ে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘তালাক দেওয়ার পরও যদি কোনো ব্যক্তি তার সাবেক স্ত্রীকে উ’ত্যক্ত করে অথবা ভ’য়ভী’তি দেখায় তবে সেটা বড় ধরনের ফৌজদারী অ’পরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।’

ঘ’টনার বিবরণ উঠে আসে সদর উপজেলার মনিরামপুর গ্রামের নি’র্যাতিতা ওই নারীর অ’ভিযোগের জবানিতে। তিনি জানান, আট বছর আগে পাশের মহম্মদপুর উপজেলার রাজাপুর গ্রামের পান ব্যবসায়ী সুজয় বিশ্বাসের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর তাদের একটি মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। ছোটখাট টানাপড়েন থাকলেও সন্তান-স্বামীকে নিয়ে তারা ভালোভাবেই জীবন কাটাচ্ছিলেন। বছর দুয়েক আগে হঠাৎ তিনি জানতে পারেন, একই এলাকার ইসমাইল মণ্ডলের কাছ থেকে তার স্বামী সুদে টাকা ধার নিয়েছেন।

ইসমাইলের দাবি অনুযায়ী সুদ-আসলে যার পরিমাণ নয় লাখ টাকা। ইসমাইল তার স্বামীকে টাকার পরিশোধের জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেন। মূল টাকা পরিশোধ করলেও তার স্বামী দাবিকৃত সুদের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন। এক পর্যায়ে ইসমাইল টাকা দিতে না পারলে স্ত্রীকে তার হাতে তুলে দিতে বলেন। চাপে পড়ে চিকিৎসক দেখানোর কথা বলে যশোরে নিয়ে ইসমাইলের হাতে স্ত্রীকে তুলে দেন ওই নারীর স্বামী। এরপর ধর্মন্তারিত করে ইসমাইল তাকে বিয়ে করে প্রথমে ঢাকার এক বাসায় আটকে রেখে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস করেন। পরে ইসমাইল তাকে মাগুরায় তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন।

এরপর থেকে ইসমাইল, তার প্রথম স্ত্রী ও ছেলে ভু’ক্তভো’গী নারীর ওপর নানাভাবে মা’নসিক ও শা’রীরিক নি’র্যাতন চালিয়ে আসছেন। তাদের নি’র্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রায় পাঁচ মাস আগে সেখান থেকে পালিয়ে আসেন তিনি। গত ৩১ অগাস্ট ইসমাইলকে তালাক দেন তিনি। তবে তালাক দিলেও ইসমাইল তার পিছু ছাড়ছেন না, ফোন করাসহ তার কর্মস্থলে এসে নানা ভ’য়ভী’তি দেখাচ্ছেন বলে তার অ’ভিযোগ। এ অবস্থায় তিনি তার হাত থেকে মুক্তি পেতে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসে বিষয়টি মীমাংসার জন্য আবেদন করেন। এ নারীর আকুতি পেছনের সব জঞ্জাল থেকে মুক্ত হয়ে একাকি নতুন করে বাঁ’চতে চান।

স্ত্রীকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার দায় অস্বীকার করেছেন ওই নারীর প্রথম স্বামী সুজয়। তিনি বলেন, ‘আমি ইসমাইলের কাছ থেকে যে টাকা নিয়েছিলাম তা পরিশোধ করেছি। তারপরও আমার কাছে সুদে আসলে নয় লাখ টাকা দাবি করে ইসমাইল। টাকা দিতে না পারলে বৌকে তার হাতে তুলে দিতে বলে। যশোরে ডাক্তার দেখাতে গেলে দাবিকৃত টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ইসমাইল আমাকে মা’রধ’র করে মাস্তান দিয়ে স্ত্রীকে জো’র করে তুলে নিয়ে যায়।’

এদিকে ইসমাইল মণ্ডলের দাবি, তার বি’রুদ্ধে ওঠা সব অ’ভিযোগ মিথ্যা। তিনি সুদের কারবার করেন না। জো’র করে তুলে নিয়ে বিয়েও করেননি। ইসমাইলের ভাষ্য, ‘সে স্বেচ্ছায় ধর্মন্তারিত হয়ে আমাকে বিয়ে করেছে।’ এখন তার এই স্ত্রীকে ফিরে পেতে চান বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী মমতাজ বেগম বলেন, ‘বর্তমানে সুদের কারণে একটি নারীর ওপর যে অ’ন্যায়-অ’ত্যাচার করা হয়েছে তা অকল্পনীয়। নারী কোনো ভোগ্যপণ্য বা সম্পদ নয়, যা অর্থের বিনিময়ে হস্তান্তর করা যায়।’ মহিলা পরিষদ অসহায় ওই নারীর পাশে থেকে সহায়তা দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই নারী চাইলে দো’ষীদের বি’চারের মুখোমুখি করা হবে।’

এ বিষয়ে মাগুরার পুলিশ সুপার খান মুহাম্মদ রেজওয়ান বলেন, ‘ওই নারী এ ঘ’টনায় পুলিশের কাছে কোনো অ’ভিযোগ করেননি। তিনি অ’ভিযোগ করলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেবে।’

তবে ওই নারী ও ইসমাইলের বিষয়টির সমঝোতা কার্যক্রম চলমান থাকায় এ নিয়ে বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা। সূত্রঃ দৈনিক আমাদের সময়

ad

পাঠকের মতামত