341120

চাল কেলেঙ্কারি ঠেকাতে ইউএনও রাকিবের চমক

সরকারি বরাদ্দের চাল নিয়ে চালবাজি গ্রামীণ সমাজে এটি একটি সনাতন প্রথা। এরই মাঝে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল নিয়ে চালবাজী করে ব্যপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন অনেক জনপ্রতিনিধি এবং ডিলার। ভূয়া নামের তালিকা এবং মৃত ব্যক্তির নামে কার্ড তৈরি করে বছরের পর বছর হাতিয়ে নেয়া হয়েছে হতদরিদ্রদের চাল।

চাল চোরদের বি’রুদ্ধে ক্ষুব্ধ খোদ প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এ চাল চুরি বন্ধ করতে নতুন এক প্রযুক্তির উদ্ভাবন করে রীতিমত চমক সৃষ্টি করেছেন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিব হাসান।

দেশে এই প্রথম চাল বিতরণে ১৩টি ডাটাসহ বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এলাকায় ব্যপক সাড়া ফেলেছেন প্রশাসনের মেধাবী এ কর্মকর্তা। গরীবের চাল নিয়ে কেউ যেন আর কেলেংকারী করতে না পারে সে লক্ষ্যে নতুন এ প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়। ইউএনওর এমন উদ্যোগের বেশ প্রশংসা করেছেন এলাকার সুশীল সমাজসহ সচেতন মহল।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দেশের ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর (ওএমএস) আওতায় ১০টাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছেন সরকার। এরই অংশ হিসেবে কুমিল্লার দেবিদ্বারে প্রায় ১০ হাজার হতদরিদ্র পরিবার পাচ্ছেন এ সুবিধা। কিন্তু সরকারের এ মহৎ উদ্যোগ সর্বত্রই সমালোচিত হচ্ছে একশ্রেণির অসাধূ জনপ্রতিনিধি, ডিলার এবং প্রভাবশালী ব্যক্তির কারণে। প্রভাবশালী এসব লোকজন গরীবের চাল নিয়ে বছরের পর বছর নয়ছয় করে আসছিল। মৃত ব্যক্তিসহ অসংখ্য ভূয়া নামের তালিকা তৈরি করে সরকারি এ চাল বিক্রি করে দিতো।

জানা গেছে, এই সংকটের সমাধান করতে ইউএনও রাকির হাসান ‘ওএমএস দেবিদ্বার’ নামে একটি ওয়েবসাইট চালু করেন। এতে উপকারভোগীর নাম, ঠিকানা, ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, আঙ্গুলের ছাপসহ ১৩ ধরনের তথ্য রয়েছে। নতুন এ প্রযুক্তিতে উপকারভোগীকে আসল-নকল যাচাই করে চাল দেওয়া হয়। বায়োমেট্রিক পদদ্ধি হওয়ায় একই ব্যক্তি একাধিকবার কিংবা একজনের চাল আরেকজনে উত্তোলন করতে পারবে না। ওয়েবসাইটে প্রত্যেক উপকারভোগীর তথ্যের বিপরীতে যুক্ত করা হয়েছে তাঁর আঙ্গুলের ছাপ।

উপকারভোগী তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর, ডিজিটাল আইডি নম্বর দিয়ে ব্যবস্থাটিতে (সিস্টেম) প্রবেশ করা মাত্রই তাঁর ছবিসহ যাবতীয় তথ্য প্রদর্শিত হয়। সবার ১০ আঙ্গুলের ছাপ নেওয়া হয়েছে। যেকোনো একটি আঙ্গুলের ছাপ দিলে, তা মিললে ‘চাল উত্তোলন সম্পন্ন হয়েছে’, এমন ধন্যবাদ বার্তা দেখায়।

শুধু তাই নয়, উপকারভোগীর চাল উত্তোলনের তথ্য কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডার বা সার্ভারেও জমা হয়। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কারা চাল উত্তোলন করেছেন, কারা করেননি, তার তথ্য জানতে পারেন। ফলে ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকে না। শুরুতেই দেবিদ্বারের ধামতী ইউনিয়নে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে আঙ্গুলের ছাপ দিয়ে ওই চাল বিতরণ শুরু করা হয়।

এ বিষয়ে দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাকিব হাসান  বলেন, ‘অনেকের নামে কার্ড করা হয়েছে, অথচ তাঁরা জানেন না, তাঁদের নামে বছরের পর বছর চাল তোলা হচ্ছে। ক্রমাগতভাবে যখন অভিযোগগুলো আসছিল, তখন ভাবলাম প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে একটি ব্যবস্থা দাঁড় করাব, যাতে একজনের কার্ডের চাল আরেকজন নিতে না পারে। ‘ব্যবস্থাটি তৈরির জন্য ডিলার ও উপকারভোগীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি। পর্যায়ক্রমে সবকটি ইউনিয়নে ব্যবস্থাটি চালু করা হবে। পুরো উপজেলার সবাইকে এর আওতায় আনা হবে। ওয়েবসাইট আরও হালনাগাদ করব।’

কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আবুল ফজল মীর বলেন, ‘ওএমএসের চাল বিতরণে অনিয়ম ঠেকাতে এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি। আমরা একই পদ্ধতিতে সরকারের অন্যান্য সেবাও দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

সূত্রঃ আরটিভি নিউজ

ad

পাঠকের মতামত