331002

‘ভাগ্যরাজ’কে বাড়ি থেকেই ১৮ থেকে ২০ লাখে কিনতে হবে

নিউজ ডেস্ক।। দেশে করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেই আর কিছু দিন পর মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। করোনা নিয়ে মানুষ আজ মহা আ’তঙ্কে, আয় রোজগারও কম। কোরবানি দিতে পারবে কি না সেটা নিয়েও চিন্তিত অনেক পরিবার। এ কারণে কোরবানির গরু নিয়ে মহাচিন্তায় পড়েছেন খামারিরা।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার দেলুয়া গ্রামের কৃষক খাইরুল ইসলাম খান্নুর বিশাল আকৃতির ষাঁড়ের নাম ‘ভাগ্যরাজ’। আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দেশে যে কয়েকটি বিশাল আকারের ষাঁড় গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে তাদের মধ্যে ‘ভাগ্যরাজ’ অন্যতম।

জানা গেছে, খান্নু মিয়ার পরিবারের দাবি, ওজনের দিক থেকে দেশে ‘ভাগ্যরাজ’ই এখন সবার ওপরে। প্রায় ২ টন ওজনের ভাগ্যরাজকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে কেউ বাড়ি থেকে কিনে নেবে সে আশায় রয়েছে গরুটির লালন-পালনকারী কৃষক পরিবারটি।

দেখতে অনেকটা হাতির মতো বিশাল আকৃতির গরু। হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টি সাদা শরীরে কালো চক্কর, লম্বা শিং, উঁচু খুড়া, ঝুলে থাকা গলাকম্বল প্রায় মাটি ছুঁই ছুঁই করছে। ভাগ্যরাজের দৈর্ঘ্য ৮ ফুট, উচ্চতা ৬ ফিট ৮ ইঞ্চি, বুকের ঘের ১০ ফুট, ওজন প্রায় ২ টন।

খান্নু মিয়ার ছোট মেয়ে ইতি আক্তার সাভারের শেখ হাসিনা যুব উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে গরু মোটাতাজাকরণের প্রশিক্ষণ নেন। সম্বলহীন পরিবারে কিস্তির টাকায় ২০১৭ সালে ২৯ মণ ওজনের ‘লক্ষ্মীসোনা’ নামে একটি গরু পালন করে বিক্রি করেন ১০ লাখ টাকায়।

দৈনিক আমাদের সময়ে ‘রাজাবাবু’ নিয়ে প্রতিবেদন হলে ২০১৮ সালে ৫২ মণ ওজনের রাজাবাবু দেশের খ্যাতি অর্জন করে। খান্নু মিয়া ১৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে রাজাবাবু নামে গরুটি। পরের বছর পালন করে ‘ভাগ্যরাজ’ গরুটি। ২০১৯ সালে ভাগ্যরাজকে নায্য দাম না পাওয়ায় বিক্রি করেননি তারা। এবারের কোরবানির ঈদে বর্তমানে প্রায় ২ টনের ভাগ্যরাজকে ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে চান তারা।

দাম একটু কম হলেও বাড়ি থেকেই বিক্রি করতে আগ্রহী খান্নু মিয়া। করোনা নিয়ে হতাশায় আছে খান্নুর পরিবার, এখনো কোনো ক্রেতা আসেনি তার বাড়িতে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার দেলুয়া গ্রামের খান্নু মিয়ার বাড়িতে ‘ভাগ্যরাজ’ নামে ওই বিশাল গরু এক নজর দেখতে ভিড় করেছে মানিকগঞ্জ জেলার সদর উপজেলা, সাটুরিয়া, ঘিওর, দৌলতপুর ও পার্শ্ববর্তী জেলা টাংগাইল, নাগরপুর উপজেলাসহ আরও অন্যান্য স্থান থেকে আসা লোকেরা। এতে খান্নু মিয়ার বাড়ির পাশে বসেছে ভ্রাম্যমাণ পান, সিগারেট ও বাদামের দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান। ‘ভাগরাজ’র পাশে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলতে ব্যস্ত অনেকেই।

খান্নু মিয়ার মেয়ে ইতি আক্তার বলেন, ‘সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে লালনপালন করা হয়েছে গরুটিকে। অবৈধ ওষুধ ব্যবহার করা হয়নি গরু পালনে। বর্তমানে ভাগ্যরাজের ওজন প্রায় ২ টন হবে। সৌখিন ক্রেতার অপেক্ষায় প্রহর গুণছি। গরুটি ২২ থেকে ১৮ লাখ টাকা হলে বিক্রি করবো।’

খান্নু মিয়ার স্ত্রী পরিষ্কার বিবি বলেন, ‘গরুটি গতবার বিক্রি করতে না পেরে এ বছর অনেক কষ্ট করে পালন করতে হয়েছে। এ বছর গরুটি হাটে না নিয়ে বাড়ি থেকে বিক্রি করতে চাইছি।’

কৃষক খান্নু মিয়া বলেন, ‘ভাগ্যরাজের খাবারের তালিকা বেশ দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল। প্রতিদিন গরুটির খাবার খাওয়াতে প্রায় ১৫০০ টাকা ব্যয় হয়। আবার গরম থেকে সুরক্ষার জন্য গরুর জন্য তিনটি সিলিং ফ্যান চলছে নিয়মিত। ২৪ ঘণ্টায় ৫ থেকে ৬ বার গোসল করানো হয় ভাগ্যরাজকে। গরুটি এবার হাটে না নিয়ে বাড়ি থেকে ভালো ক্রেতার কাছে বিক্রি করার আশায় আছি।’

সাটুরিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মনির হোসেন বলেন, ‘মোটা অংকের মূলধনের ঝুঁকি নিয়ে বৃহদাকার গরু পালন করে পুরো এলাকায় তাক লাগিয়েছে এ পরিবারটি। গরুর চিকিৎসায় নিয়মিত প্রাণী সম্পদ অফিস থেকে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে এবং পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গরুটি ভালো দামে বিক্রি করতে পারলে লাভবান হলে ভবিষ্যতে খামারিরা আরও উৎসাহিত হবে।’

এদিকে, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সাটুরিয়া থানার আ’ইনশৃ’ঙ্খলা বাহিনীর রাত্রিকালীন টহল জোরদার করেছে বলে জানান সাটুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মতিউর রহমান মিঞা। তিনি আরও জানান, কোনো দুষ্কৃতিকারী কোরবানির গরু ও খামারিদের যেন কোনো ক্ষ’তি করতে না পারে এজন্য রাতে টহল জোরদার করা হয়েছে। উৎস: দৈনিক আমাদের সময়।

ad

পাঠকের মতামত