319667

 বিজ্ঞানীরা এবার করোনা ভাইরাসের সবচেয়ে ভ’য়ঙ্ক’র রূপ চিহ্নিত করলো

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মানুষ বনাম ভাইরাস ”বি’শ্বযু’দ্ধ” চলছে চার মাস ধ’রে। শ’ত্রুপক্ষ খালি চোখে অদৃশ্য। ‘সার্স-কোভ-২’ (করোনাভাইরাস) সং’ক্রম’ণে পৃথিবীজুড়ে এ পর্যন্ত দুই লাখেরও বেশি মানুষের মৃ’ত্যু হয়েছে। সং’ক্র’মিত ৩০ লাখেরও বেশি। দিনরাত এক করে গবেষণাগারে প্রতিষে’ধকের খোঁ’জ চালিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু তার জন্য আ’ণুবী’ক্ষণিক শ’ত্রুটিকে ভাল করে চেনা প্রয়োজন।

সেই কাজটি করেছেন দুই বাঙালি বিজ্ঞানী। এখনও পর্যন্ত ভাইরাসটির ১১টি টাইপ বা ধরন সম্পর্কে জানা গেছে। তার মধ্যে সব চেয়ে ”সং’ক্রা’মক” ভাইরাস টাইপটিকে চি’হ্নিত করলেন ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এর দুই বিজ্ঞানী নিধানকুমার বিশ্বাস ও পার্থপ্রতিম মজুমদার। কেন সেটি এতটা সং’ক্রা’মক, তা-ও বিশ্লেষণ করেছেন তারা। ‘ইন্ডিয়ান জার্নাল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’-এ সোমবার প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি।

গত বছর ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহানে নোভেল করোনা ভাইরাসে আ’ক্রা’ন্ত হয়ে প্রথম কারও মৃ’ত্যু হয়। এর পরে সীমান্ত পেরিয়ে উহান থেকে গোটা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে কোভিড-১৯। পার্থপ্রতিম জানান, পরীক্ষা করে দেখা গেছে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যা’পকভাবে মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটেছে ভাইরাসটির গঠনে। প্রত্যেক ভাইরাসে ডিএনএ বা আরএনএ থাকে। ‘সার্স-কোভ-২’ আরএনএ ভাইরাস। এই জিনোমের গঠনে সামান্য অদলবদল ঘটে গিয়েই ভিন্ন চেহারা নেয় ভাইরাস। বাড়ায় সং’ক্র’মণ ক্ষ’মতা।

নিজেদের বাঁ’চা’র জন্যই তাদের এই ল’ড়াই। ভাইরাস স্বাধীনভাবে বাঁচতে পারে না। বেঁ’চে থাকার জন্য তাদের বাসা বাঁধতে হয় কোনও প্রাণীর শরীরে। এক্ষেত্রে যা মানুষ (অর্থাৎ মানুষের শরীরের বাসা বেঁধে বাচার চেষ্টা করছে করোনাভাইরাস)। গোটা পৃথিবী থেকে পাওয়া ভাই’রাসটির আরএনএ সিকোয়েন্সের তথ্য থেকে তাদের গতিবিধির উপরে নজর রাখছিলেন নিধান ও পার্থপ্রতিম।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৬ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৫টি দেশের ৩,৬৩৬ জন করোনা-রোগীর দেহ থেকে ভাইরাস-নমুনার আরএনএ সিকোয়েন্স নিয়ে গবেষণা করেন তারা। পার্থ জানান, অন্যান্য ভাইরাসের মতো এটিও নিজের চেহারা ব’দলেছে। এখনও পর্যন্ত ‘ও’, ‘এ২’, ‘এ২এ’, ‘এথ্রি’, ‘বি’, ‘বি১’-সহ মোট ১১ ধ’রনের ভাইরাস মিলেছে। এর মধ্যে চি’নে প্রথম সং’ক্র’মণ ঘটায় ‘ও’। সেটি মূল। বাকি ১০টি তৈরি হয়েছে সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে।

এর মধ্যে এখন সব চেয়ে সং’ক্রা’মক ‘এ২এ’। পার্থপ্রতিম বলেন, ”অবাক করা বিষয়, বেশির ভাগ ভৌগোলিক এলাকাতেই দেখা যাচ্ছে দ’খল নিয়েছে নোভেল করোনা ভাইরাসের ‘এ২এ’। ‘এ২এ’-র অস্তিত্ব প্রথম ধ’রা পড়ে ২৪ জানুয়ারি। মার্চ মাসের শেষের মধ্যে মোটামুটি অন্য সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ৬০ শতাংশ দেশে সং’ক্র’মণ ছড়িয়েছে এরাই।” নিধান জানান, ইউরোপ-আমেরিকায় সব চেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে ”এ২এ”। আমাদের দেশে সেখান থেকে ‘এ২এ’ এসেছে। আবার চীন থেকে এসেছে ‘ও’। ইরান থেকে এসেছে ‘এথ্রি’।

তিনি বলেন, ”এ২এ এবং ও, দু’টোই শ’ক্তিশালী। তবে এ২এ বেশি শ’ক্তি ধ’রে।” তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন দুই বিজ্ঞানী। সার্স-কোভ-২ তার চরিত্র অনুযায়ী ফুস’ফুসে ঢুকে সং’ক্র’মণ ছড়ায়। ভাইরাসটির স্পাইকে থাকা প্রোটিন মানুষের ফুসফুসে থাকা ‘এসিই২’ প্রোটিনটিকে কাজে লাগিয়ে কোষের উপরিভাগে ‘অ্যাঙ্কর’ করে বা জুড়েযায়। এর পরে ফুসফুসে উপস্থিত অন্য একটি প্রোটিন তাকে কোষের ভিতরে প্রবেশ করাতে সাহায্য করে।

”এ২এ”-র ক্ষেত্রে তার স্পাইকে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিডটি ”অ্যাসপারটিক অ্যাসিড” থেকে বদলে ”গ্লাইসিন”-এ পরিণত হয়। যা তার সং’ক্র’মণ ক্ষমতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এই দুই বিজ্ঞানী জানান, যেহেতু ভাইরাসটির মধ্যে এত পরিবর্তন ঘটছে, তাই ভ্যাকসিন বা প্রতিষে’ধক তৈরি বেশ চ্যালে’ঞ্জিং। ভাইরাসটি সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে না-পারলে প্রতিষে’ধক তৈরি হলেও তা সবার শরীরে কাজ করবে না। সেই কাজেই সাহায্য করবে নিধান ও পার্থপ্রতিমের গবেষণা, আশাবাদী দুই বাঙালি গবেষক। সূত্র: আনন্দবাজার

ad

পাঠকের মতামত