‘মরে গেলেও আফসোস থাকবে না’ করোনায় আক্রান্ত নারী চিকিৎসকের ফেসবুক স্ট্যাটাস
প্রা’ণ’ঘা’তী করোনাভাইরাসে আ’ক্রা’ন্ত এক নারী চিকিৎসক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আবেগঘন একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেছেন, মানুষের সেবা করার কারণে তার মৃ’ত্যু হলেও কোনো আফসোস থাকবে না।
ফেসবুকে ওই নারী চিকিৎসক লেখেন, ‘সবাই বলছে কাউকে বলো না। কেন বলব না? আমি তো কোনো দোষ করি নাই। আমি আপনাদের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছি। লকডাউনে যখন আপনারা বাড়িতে বসে সময় কীভাবে কাটাবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলেন তখন আমি হয়তো কোনো কোভিড-১৯ পজেটিভ ব্যক্তির পাশে দাঁড়িয়েছি। হ্যাঁ আমি কোভিড-১৯ পজেটিভ। এতে আমার কোনো লজ্জা বা ভয় বা আফসোস নাই। বরং আমি খুব গর্বিত। কারণ আমি শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে এসেছি।’
করোনা আক্রান্ত ওই নারী চিকিৎসক লেখেন, ‘এখন যদি ম’রে’ও’ যাই আমার আফসোস থাকবে না। কারণ আমি ডাক্তার হিসেবে যে শপথ নিয়েছিলাম তা পালন করে এসেছি। আমি যত দিন পেরেছি আপনাদের জন্য হাসপাতালে এবং মাঠে কাজ করেছি। যেদিন আমার মনে হলো আমার নিজেরই স্যাম্পল পাঠানো দরকার, আমি সাথে সাথে স্যাম্পল পাঠিয়ে নিজেকে কোয়ারেন্টিনড করেছি।’
স্ট্যাটাসে তিনি আরও লেখেন, ‘আমার পক্ষে যতদূর সম্ভব মানুষ এড়িয়ে চলেছি। নিজের বাড়িতেও ফিরিনি যেহেতু আমারও পরিবার আছে, বাড়িতে বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি আছেন। তারপরও আজ আমার এলাকার মানুষের কাছে (ময়মনসিংহের যে এলাকায় ভাড়া থাকি) যে ব্যবহার পেয়েছি আমি ও আমার স্বামী তা আমি কোনো দিন ভুলব না। একটা কথা বলে যাই…নগর পুড়লে কী দেবালয় এড়ায়? আগামী বছর বেঁচে থাকলে এই স্মৃতিটা ভেসে উঠবে ফেবুর পাতায়। শুভ নববর্ষ, ১৪২৭! সবার মঙ্গল হোক।’
ওই নারী চিকিৎসক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার। তিনি গতকাল মঙ্গলবার রাত ১০টা ৫১ মিনিটে তার ফেসবুক ওয়ালে এই পোস্টটি শেয়ার করেন।
জানা গেছে, ওই চিকিৎিসক ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়ায় তার শ্বশুরবাড়ি থাকতেন। সেখান থেকে বিজয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দায়িত্ব পালন করতেন। বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি জেলার একমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সেন্টার। বর্তমানে সেখানে ১৮ জন কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ জানান, জেলায় প্রা’ণঘা’তী করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১০ জন আ’ক্রা’ন্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে জেলার বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন নারী চিকিৎসকও রয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ওই নারী চিকিৎসকের করোনাভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহে অবস্থান করছেন। সেখানেই তিনি আইসোলেশনে আছেন।
