316410

কোনটা সঠিক, নেত্রীরটা না মন্ত্রীরটা?

জয়নাল হাজারী ॥ বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যার পর মাস দুইয়েক লুকিয়ে ছিলাম। শেষে নারায়ণগজ্ঞে এক বাড়ি থেকে সামরিক বাহিনী গ্রেফতার করে একমাস দশদিন কেন্টনমেন্টর সেলে রেখেছিল। শেষে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের নিউজেলে পাঠায়। কারাগারের ভিতরে আরেকটি কারাগার নির্মাণ করা হয়েছিল কেবলমাত্র সরকার বিরোধী বা আ.লীগ নেতাদের জন্য সেখানেই যশোরের টিপু আর আমাকে রাখা হয়। কিছুদিন পর সেখানেই একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় কোরবান আলী, সামাদ আজাদ, জিল্লুর রহমান সাহেব, আমু ভাই ও এসপি মাহবুবসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। এখানে কিছু বক্তব্য আমিও দিয়েছিলাম। বামপন্থি একটি দলের এক তরুন একটি গান গিয়েছিল। গানটির কথা ছিল-

চাঁদ দেখতে গিয়ে আমি তোমায় দেখে ফেলেছি
কোন জোছনায় বেশি আলো এই দোটানায় পড়েছি।

তখন জানতাম না এই গানটির শুর ও কণ্ঠ ছিল মান্নাদের। পরে বাইরে এসে ৫ বছর পর প্রায় প্রতিদিন গানটি শুনতাম। সেদিন জেলখানায় যার কন্ঠে গানটি শুনেছিলাম কেন জানি মনে হয়েছিল ঐ ছেলেটি মান্নাদের থেকেও ভাল গেয়েছিল। আজকের এই সময়ে কেন জানি বার বার ঐ গানের কথাগুলো মনে পড়ছিল। কারণ আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন বাংলাদেশ যুবক্রিকেট দল বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার ঘটনাটি মুজিববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার। অপরদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন মাজেদের গ্রেফতার হওয়াটা মুজিববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার। শ্রেষ্ঠ উপহার তো একটাই হবে। তাহলে কোনটা শ্রেষ্ঠ, যুবদের বিশ্বকাপ জয় না মাজেদের গ্রেফতার। ক্রীড়া জগতের বিশ্বকাপ জয় একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা। বিশ্বক্রিড়া জগতের ইতিহাসে এই ঘটনাটি স্বর্ণের অক্ষরে লেখা থাকবে। আর কোন দিন কোন গৌরব অর্জন না করলেও যুগে যুগে কালে কালে আমাদের এই গৌরব গাথাটি সকলের মানস পটে অম্লান হয়ে থাকবে। ক্রিকেটজগত অনেকদিন বাংলাদেশকে সমীহ করবে।

নেত্রী সংসদেই তাই এটাকেই মুজিববর্ষের শ্রেষ্ঠ উপহার বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। এদিকে বন্ধবন্ধুর খুনি মাজেদ গ্রেফতার হয়েছে মিরপুর থেকে। সে কি পরিস্থিতিতে গ্রেফতার হয়েছে এখনো তা পরিস্কার নয়। তার আগমনের উদ্দেশ্য এবং কিভাবে এসেছে সেসব এখনো গোপন রাখা হয়েছে। করোনার কারণে ঘটনাগুলো ভালকরে প্রচার পাচ্ছে না। তবে অসমর্থীত একটি খবরে বলা হয়েছে ওর গ্রেফতারের ব্যাপারে ভারত সহযোগীতা করেছে। কিভাবে কি সহযোগীতা করেছে সেটাও পরিষ্কার নয়। ফারুক,রশীদের মত খুব নামজাদা খুনি না হলেও এই মাজেদ কিন্তু নিষ্ঠুরতার বিবেচনায় ফারুক-রশীদেরকে হার মানায়। বলা হচ্ছে শিশু রাসেলের বুকে সরাসরি গুলি চালিয়েছিল এই মাজেদ। মাজেদই তোফায়েল ভাইয়ের পিএসকে প্রথমদিনই নিজ হাতে গুলি করেছিল। নাসিম ভাই বলেছেন জেল হত্যার মূল নায়কও এই মাজেদ। ৩রা নভেম্বর ৪ নেতাকে গুলি করে মারার পর আবার খবর এলো মনসুর আলী সাহেব এখনো মৃত্যুবরণ করেননি। তখন এই মাজেদই আবার নিউজেলে প্রবেশ করে বেয়োনেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে মনসুর আলী সাহেবকে হত্যা করেছিল। আইক ম্যানের চাইতেও নিষ্ঠুর এই ব্যক্তিটির ধরা পড়া খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়। মুজিব হত্যাকারীকে গ্রেফতার করা মুজিববর্ষের উপহার নিশ্চয়ই হতে পারে। তবে এখন আমার মনে প্রশ্ন কোনটা মুজিববর্ষেও শ্রেষ্ঠ উপহার, যুবাদের বিশ্বকাপ জয় না মাজেদের গ্রেফতার? এ বিষয়টি ফয়সালা করার ভার পাঠকের হাতেই তুলে দিলাম। কারণ কোন জোসনায় বেশি আলো এই দোটানায় পড়েছি। লেখক : উপদেষ্টা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও সাবেক সংসদ সদস্য। উৎস: হাজারীকা প্রতিদিনি।

ad

পাঠকের মতামত