315815

ঢাকায় চিঠি পাঠিয়েছে চার দেশ: দেড় লাখ প্রবাসীকে ফেরত পাঠানোর চাপ

নিউজ ডেস্ক।। বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করা করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যেই প্রায় দেড় লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাতে চাপ দিয়েছে কয়েকটি দেশ। কমপক্ষে চার দেশের পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে। মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের পক্ষ থেকে তালিকাও পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে সরকার। কীভাবে পরিস্থিতি সামলানো যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়। যাদের ফেরত পাঠাতে চাওয়া হচ্ছে তারা আসলেই বাংলাদেশি কি না তা নিয়ে কাজ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে আপাত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর যৌথ স্বাক্ষরে বিভিন্ন দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। সরকার মনে করছে, প্রবাসীরা দেশের সম্পদ। এ দুঃসময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো মানবিক দায়িত্ব। জানা যায়, গতকাল প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে এ-সংক্রান্ত বিষয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়।

বৈঠকে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রী ইমরান আহমেদ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘খুব বেশি দেশ প্রবাসীদের ফেরত পাঠাতে আবেদন করেনি। মাত্র চার-পাঁচটি দেশ আবেদন করেছে। কিন্তু আমাদের সংখ্যা তো অনেক বেশি। একটি দেশও যদি হয়, অনেক লোক হয়ে যায়। এই দুর্দিনে কত জনকে ফেরত আনব তা নিয়ে আমরা আজ বসেছি। বুঝেশুনে বাস্তবতার নিরিখে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আমরা বিভিন্ন দেশকে চিঠি দিয়ে বলব, আমাদের অসুবিধা, তোমাদেরও অসুবিধা। মানবাধিকার বিষয়টি সামনে এনে এদের তোমরা সাহায্য করেছ, আরও করো, তাহলে আমরা খুশি হব।’ কোন কোন দেশ বাংলাদেশি নাগরিকদের ফেরত পাঠাতে চায় সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাত্র একটি দেশের কথা উল্লেখ করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কত বাংলাদেশি ফেরত পাঠাতে চায় এখনই সংখ্যা জানাতে চাই না। তবে একটি দেশের কথা বলতে পারি। মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে ফোন করেছিলেন। তিনি বলেছেন, তার দেশে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি কর্মী আনডকুমেন্টেড।

এখন যেহেতু তাদের পর্যটন বা রেস্টুরেন্টে কাজ চলছে না তাই শুধু বৈধদের তারা সাহায্য করছে। কিন্তু যারা আনডকুমেন্টেড আছেন, তাদের কষ্ট হচ্ছে। মালদ্বীপ সেখানে বিদেশি কর্মীদের নিবন্ধন করতে বলেছে। এদের মধ্যে অনেককেই ফেরত পাঠাতে পারে।’ বিদেশে অবস্থানরত আনডকুমেন্টেড কর্মীর জন্যই এ সমস্যা বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যেসব দেশ আমাদের জানিয়েছে বাংলাদেশিদের ফেরত না নিলে তাদের অসুবিধায় ফেলবে, তাদেরটাই আমরা প্রথমে ধরব। মূলত এসব আনডকুমেন্টেড কর্মীর জন্যই হচ্ছে।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এখন চাপের মুখে আছি। তবে সব দেশই চাপের মধ্যে আছে। সে জন্য এটি বড় সমস্যা নয়। কিন্তু কঠিন সময়ে আছি।’ সভায় প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে মানবিক বিবেচনায় কয়েকটি দেশ থেকে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশি কর্মীদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সভায় নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে কুয়েত থেকে ৩১৬ জন প্রবাসী বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনা হবে। কুয়েতের সেই ফিরতি ফ্লাইটে ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী পাঠানোরও সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া ইপিএসের আওতায় দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মরত ১৫০ জন কর্মী এবং সেখানে অধ্যয়নরত ২৬ জন শিক্ষার্থীকে আনতে বাংলাদেশ বিমানের একটি চার্টার্ড ফ্লাইট কোরিয়ায় পাঠানো হবে। মন্ত্রী আরও বলেন, যেসব প্রবাসীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে অথবা ইকামার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে, তাদের ভিসা/ইকামার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। কোনো কর্মী বিদেশে চাকরিচ্যুত হলে, অথবা নিয়োগকারী কোম্পানি যদি কর্মী ছাঁটাই করে, সে ক্ষেত্রে তাদের দেশে ফেরত না পাঠিয়ে সে দেশের অন্য কোনো কোম্পানিতে নিয়োগের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।’ সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের যাচাই-বাছাই করে বাংলাদেশে ফেরত আনা হবে। তবে তাদের মধ্যে কেউ যদি গুরুতর অপরাধে জড়িত থাকেন, তাহলে তাদের ব্যাপারে অন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। দেশে ফেরত আনা প্রবাসীদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। আন্তমন্ত্রণালয় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহিবুল হক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সেলিম রেজা, সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম, ওয়েজ আরনার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন প্রমুখ। উৎস: বিডি-প্রতিদিন।

ad

পাঠকের মতামত