315693

চীন সত্যিই কি হারবাল পদ্ধতিতে করোনা নিয়ন্ত্রণ করেছে? নাকি ওষুধ বিক্রির কৌশল

নিউজ ডেস্ক।। ক’রোনাভা’ইরাসের আঁতুড়ঘর চীন। দেশটির হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে প্রথম ছড়িয়েছিল মারণ এই ভা’ইরা’স। সেখান থেকে পরে দুনিয়াজুড়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। তবে এরই মধ্যে কোন এক জিয়নকাঠির ছোঁয়ায় অপ্রতিরোধ্য এই ভাইরাসের দুর্বার গতিতে লাগাম পরাতে সক্ষম হয়েছে শি জিনপিং-এর দেশ।

চীনের চিকিৎসকরা দাবি করেছেন, করোনভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় যখন প্রচলিত ওষুধে কোন ফলাফল আসছিল না তখন তারা ঐতিহ্যবাহী হারবাল চিকিৎসা দিয়ে সুফল পেয়েছেন। তবে চীনের এই দাবিতে একমত নন মহামারি বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। কোভিড-১৯ রোগীর ওপর হারবাল চিকিৎসা পদ্ধতি ব্যবহার করলে হিতে বিপরীত হতে পারে। এতে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

গত মাসে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানিয়েছিল, ডিসেম্বর মাসে প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে কোভিড -১৯-এ আক্রান্ত ৮০ হাজারেরও বেশি লোকের মধ্যে ৯০ শতাংশই দ্রুত সুস্থ হয়ে গেছেন। চীনা ঐতিহ্যবাহী হারবাল চিকিৎসা পদ্ধতিতে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

প্রথাগত চীনা মেডিসিনের স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেক্রেটারি ইউ ইয়ানহং ২৩ শে মার্চ উহানে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি ঐতিহ্যবাহী হারবাল চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় সুফল পাওয়ার কথা বর্ণনা করে বলেন, ‘এটি রোগের লক্ষণগুলি হ্রাস করেছে, ভাইরাসের তীব্রতা হ্রাস করেছে, পুনরুদ্ধারের হারকে উন্নত করেছে এবং মৃত্যুহারকে হ্রাস করেছে।’

যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটারের কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ড. এডজার্ড আর্নস্ট বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস সারাবে এমন কথা বলে চীন বিশ্বজুড়ে হারবাল মেডিসিন রপ্তানি শুরু করেছে। এটা রোগীদের জন্য প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ উভয়ই ক্ষেত্রেই ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠেছে।’

আর্নস্ট বলেছিলেন, ‘হারবাল মিশ্রণগুলি সাধারণ প্রেসক্রিপশন ড্রাগের সাথে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এটা দূষিত বা ভেজাল হতে পারে। এটি রোগীদের সুরক্ষার একটি মিথ্যা ধারণা প্রদান করতে পারে, যা তাদের প্রমাণিত ওষুধগুলি বা থেরাপির অবহেলার দিকে পরিচালিত করে। ফলে রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়।’

ঐতিহ্যবাহী চীনা হারবাল ওষুধগুলি প্রায় তিন হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে রয়েছে। এটি রোগীর নাড়ি,জিহ্বা এবং শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে প্রদান করা হয। জিনসেং,আকুপাংচারের মতো ওষুধিগুলি খাওয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, চীন মুখে খাওয়ার সমস্ত ওষুধের অর্ধেকের বেশি হারবাল। সেখানে ফার্মাসিগুলিতে ৭ হাজারেরও বেশি হারবাল ওষুধ পাওয়া যায়। যেগুলি আবার জাতীয় মেডিকেল পণ্য প্রশাসন কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত হয়।

বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইনিজ মেডিসিনের ক্লিনিকাল এপিডেমলজির অধ্যাপক ড. জিয়ানপিং লিউকে বলেছেন, ‘এটি চীনের আইনগতভাবে স্বীকৃত একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যা পাশ্চাত্যের ওষুধের সাথে সমান্তরাল। চীন ঐতিহ্যবাসী ভেষজ ও প্রচলিত মেডিসিন পদ্ধতির সমন্বয় ঘটিয়ে হারবাল মেডিসিন তৈরি করে থাকে। এখানে অবশ্যই কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়।’ সূত্র- এনবিসি নিউজ।

ad

পাঠকের মতামত