313364

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মনি’র স্বামীর খোলা চিঠি

ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কামরুন নাহার মনির স্বামী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন।

গতকাল বুধবার রাতে নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে মনির স্বামী রাশেদ খান রাজু ওই স্ট্যাটাস দেন। মুজিব বর্ষে একটি ন্যায় বিচারের মাধ্যমে স্ত্রী ও পাঁচ মাস বয়সী কন্যা সন্তানকে ফেরত পাওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো সেই খোলা চিঠি-

বরাবর

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার

বিষয় : মুজিব বর্ষে একটি ন্যায় বিচারের মাধ্যমে আমার নির্দোষ স্ত্রী ও সন্তানকে ফেরত চাই।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মমতাময়ী মা

আসসালামু আলাইকুম,

আজ এমন এক সময় আপনার কাছে লিখছি, যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে লালন করে বাংলাদেশ আপনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে দুর্বার গতিতে। জাতির জনকের হৃদয়ে আঁকা স্বপ্নের বাংলাদেশ আজ খাঁটি সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হয়েছে আপনার হাত ধরে।

আপনার হাতেই রয়েছে মমতার পরশ আর শাসন করার শক্তি। আপনিই যে অসহায়দের জন্য মানবতার উদাহরণ। আর দুষ্টু লোকের জন্য হার না মানা এক ভয়ংকর প্রতীক। আপনার হাত ধরেই হয়েছে অসহায় জর্জ মিয়ার মুক্তি।

মমতাময়ী মা, আমি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী স্বাধীন বাংলাদেশের একজন অতি সাধারণ মানুষ। আমি এই দেশে প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিয়ে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাঁচতে চাই। কিন্তু আমি তা পারছি না। আমি সত্যের কাছে আর ন্যায় বিচারের কাছে হেরে গেছি আপাতত মা।

নুসরাত হত্যা মামলায় আমার নির্দোষ স্ত্রী আর ৫ মাসের দুধের ছোট্ট বাচ্চাসহ (রাথী) বিনাদোষে ফাঁসির দণ্ড মাথায় নিয়ে কারাগারের অভ্যন্তরে মৃত্যুর প্রহর গুণছে।

মমতাময়ী মা, জন্মের পর থেকে মাত্র ১টা দিন স্বল্প সময়ের জন্য আমার মেয়েটাকে কোলে নিতে পেরেছি। আমার মেয়েটার নরম গাল ছুঁয়ে আদর করতে পারিনি আজ প্রায় ৪ মাস। আমার মেয়েটা জানে না ও কোথায়, আর ওর বাবাই বা কোথায়।

মেয়েটা আমার এই নিষ্ঠুরতার কথা জানার আগেই এই দেশ সম্পর্কে খারাপ ধারণা নেওয়ার আগেই আপনি আমাদের সাহায্য করুন মা। ন্যায় বিচারের মাধ্যমে মনিদের মতো অসহায়রা নির্মমতা থেকে বাঁচলে বেঁচে যাবে দেশের হাজার হাজার নির্যাতিত নারী। জয় হবে নারীদের শক্তির।

মমতাময়ী মা, তাই আমরা পুরোপুরি শেষ আস্থাটুকু রাখতে চাই আপনার ওপর। আশা করি আপনি অন্তত আমাদের হতাশ করবেন না। কারণ, আমি জানি আপনি অন্যায়কে কখনোই আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেন নাই।

আপনি যাই করেন-তা এই দেশ ও জনগণের কল্যাণের জন্য করেন। আপনার একটু দৃঢ় পদক্ষেপ এনে দিতে পারে ন্যায় বিচারের আরেকটি মাইলফলক। হবে হয়তো আরও একটি ন্যায় বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন।

মমতাময়ী মা, আমি আমার কলিজার টুকরা রাথীকে জানাতে চাই, দেখাতে চাই একজন নিষ্ঠাবান ও মমতাময়ী প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরেই তোমরা ন্যায় বিচার পেয়েছ। উনার হাত ধরেই নির্মমতা আর নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রক্ষা হয়েছে তোমাদের। আপনিও একজন নারী ও একজন মা। আপনিই নিশ্চয়ই অনুধাবন করতে পারছেন আমাদের কষ্টগুলো। কারণ প্রিয়জন থেকে দূরে থাকার কষ্ট আপনার চেয়ে কেউ বেশি জানার কথা নয় মা।

জানি না আমার মতো একজন সাধারণ মানুষের আবেদন আপনার পর্যন্ত পৌঁছাবে কিনা। কিন্তু আমার মতো অসহায় মানুষের যে-এর চেয়ে আর বড় চেষ্টা থাকতে পারে না।

মনি আর আমার ছোট্ট রাথি যদি অন্ধ আইনের বেড়াজালে পড়ে মিথ্যার কাছে হেরে যায়, তাহলে যে আমার নিজের দেখা সত্যটাই হারিয়ে যাবে। আর হারিয়ে যাবে চিরদিনের মতো আমার বিশ্বাস আর সত্যতা।

জলন্ত প্রমাণের মশাল হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে যদি ন্যায় বিচার না পাই, তাহলে জাতীয় পতাকা গায়ে মুড়িয়ে আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না মা।

মমতাময়ী মা, আল্লাহ আপনাকে ভালো রাখুক, সুস্থ রাখুক। দিন রাত খেটে জনগণের যে স্বপ্ন পূরণের চেষ্টায় আছেন-তা যেন পূরণ হয়। আপনার সকল চেষ্টা আর ইচ্ছে যেন পরিপূর্ণতা পায় সেই দোয়াই করি।

সর্বশেষ বলবো, আমার ছোট্ট রাথীর জন্য ও নারীদের জন্য একটি নিরাপদ বাংলাদেশ চাই মা।

আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে শেষ করছি।

ইতি

মুজিব বর্ষের উপহার প্রত্যাশী

একজন অসহায় পিতা

রাশেদুল আলম খান

ফেনী থেকে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৪ অক্টোবর ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাসহ ১৬ জন আসামির সবাইকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত। সেইসঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।

এর আগে গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে নুসরাতের শ্লীলতাহানি করেন। এ ঘটনায় তার মা শিরিনা আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী থানায় মামলা করলে অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পরে মামলা তুলে না নেওয়ায় ৬ এপ্রিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে নুসরাতের হাত-পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেয় বোরকা পরা পাঁচ দুর্বৃত্ত। ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অগ্নিদগ্ধ নুসরাতের মৃত্যু হয়।

বরাবরমাননীয় প্রধানমন্ত্রীগনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বিষয় : মুজিববর্ষে একটি ন্যায় বিচারের মাধ্যমে আমার নির্দোষ…

Posted by Rashed Khan Raju on Wednesday, 11 March 2020

ad

পাঠকের মতামত