312005

দুই যুগ ধরে বিনাবেতনে পড়াচ্ছেন মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন আলী

বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার দেউলী গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন আলী সিকদার। চাকরি পেয়েছিলেন পুলিশে, কিন্তু বাবা-দাদার অনুপ্রেরণায় চাকরি ছেড়ে যোগ দেন শিক্ষকতায়।

১৯৬০ সালে পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার পাঙ্গাসিয়া নলদোয়ানী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ১০ টাকা বেতনে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এরপর আরো সাতটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ৩৬ বছর পর অবসরে যান ১৯৯৬ সালে।

এখন বয়স ৯০ পার হলেও শিক্ষকতা ছাড়তে পারেননি কাঞ্চন আলী সিকদার। অবসরের পরও দুই যুগ ধরে বিনা বেতনে পড়াচ্ছেন তিনি।

পড়ানোতেই যেন তার আনন্দ। সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত কাঞ্চন সিকদার বিদ্যানিকেতন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও বিলকিস জাহান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজে নিয়ম করে ইংরেজি ক্লাস নেন এ মুক্তিযোদ্ধা।

শিক্ষার্থীরাও কাঞ্চন স্যারের ক্লাস থেকে বঞ্চিত হতে রাজি নয়। তাদের দাবি, ইংরেজি এত ভালোভাবে অন্য কোনো স্যার বোঝাতে পারেন না।

মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন আলী সিকদারের সহধর্মিনী বিলকিস জাহানও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। নিজে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করলেও স্বামীর পাশাপাশি জ্ঞানের আলো ছড়ানোর কাজ করেছেন বিলকিস জাহান।

মুক্তিযোদ্ধা কাঞ্চন আলী সিকদার বলেন, ৩৬ বছরের কর্মজীবনে আমি নিয়মিত ইংরেজি ও বাংলা ক্লাস নিয়েছি। আমার পছন্দের বিষয় ইংরেজি। ইংরেজি পড়াতে ভালো লাগে। আজ পর্যন্ত কখনো ক্লাসে দেরি করিনি। ক্লাস নেয়ার সময় কখনো চেয়ারে বসতাম না।

প্রবীণ কাঞ্চন আলীর কাছ থেকে শিখছেন স্থানীয় শিক্ষকরা। কাঞ্চন সিকদার বিদ্যানিকেতন নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মিহির কর্মকার বলেন, শিক্ষকতায় যে এত সম্মান তা স্যারকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। আমরাও চাই স্যারের মতো শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে।

মিহির কর্মকার আরো বলেন, ৯০ বছর বয়সেও কাঞ্চন স্যার দাঁড়িয়ে ক্লাস নেন। অনেক সময় পরপর দুটি ক্লাস নিতে দেখেছি কিন্তু ওনাকে বসতে দেখিনি।

এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লামিয়া আক্তার জানান, তারা অপেক্ষায় থাকেন কখন কাঞ্চন স্যার ইংরেজি ক্লাস নিতে আসবেন।

বিলকিস জাহান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ এস.এম জুবায়ের আলম বলেন, মানুষকে বয়স দিয়ে আটকানো যায় না। উদ্যম ও আগ্রহ থাকলে মানুষ নিজ কর্মগুণে জীবনকে জয় করতে পারে। কাঞ্চন স্যার সেটাই করছেন। তিনি একটানা ৯০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে ক্লাস নেন, যা অবাক করার মতো বিষয়।

ad

পাঠকের মতামত