306085

শিশু ধ’র্ষণ চেষ্টার মামলা করায় সেই পরিবারকে একঘরে করল সমাজপতিরা

নওগাঁর আত্রাইয়ে শিশু ধ’র্ষণ চেষ্টার মামলা করায় হিন্দু সমাজপতিরা এক পরিবারকে ১০ দিন ধরে একঘরে করে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কতিপয় প্রভাবশালী সমাজপতি ও স্থানীয় দুই গ্রাম পুলিশের সমন্বয়ে এক সালিশী বৈঠকে সুমন চন্দ্র প্রামাণিক নামের একজনকে সপরিবারে একঘরে করার অলিখিত রায় ঘোষণা দিয়েছেন।

জানা গেছে, গ্রামের কেউ তার সাথে কথা বললে তাৎক্ষণিক পাঁচ হাজার টাকা ও সুমনের সাথে কাউকে কথা বলতে দেখা প্রত্যক্ষ স্বাক্ষীকে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে পুরষ্কার করা হবে। সমাজপতিদের এমন কঠোর রায়ে সুমন চন্দ্র প্রামাণিকের পরিবার এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সমাজপতিদের অত্যাচারে অসহায় হয়েও থানা পুলিশের কাছে যেতে পারছেনা।

এলাকাবাসী জানায়, আত্রাই উপজেলার সাহাগোলা ইউনিয়নের সুবর্ণকুন্ডু গ্রামের সুবিধা চন্দ্র প্রামানিকের ছেলে সুমন চন্দ্র প্রামাণিকের শিশু কন্যাকে একই গ্রামের শ্রী জগনাথ প্রামাণিকের ছেলে স্বপন কুমার (১৯) গত ৩ সেপ্টেম্বর লবা প্রামাণিকের বাড়ির পাশে অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলাধূলা করছিলো। এমন সময় স্বপন কুমার ওই শিশু কন্যাকে মোবাইলে ভিডিও দেখার নাম করে একটি খড়ের পালার পিছনে নিয়ে গিয়ে শিশুকে ধ’র্ষণের চেষ্টা করলে তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে স্বপন দৌড়ে পালিয়ে যায়। এ বিষয় নিয়ে ওই দিন তড়িঘড়ি করে গোপনে এক গ্রাম্য সালিশে স্বপনকে চড়-থাপ্পড় মেরে ধ’র্ষণ চেষ্টার ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে ওই সমাজপতিরা।

বিষয়টি আত্রাই থানা পুলিশ গোপন সূত্রে জানতে পারলে ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে স্বপনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। এব্যাপারে শিশুটির বাবা সুমন চন্দ্র বাদী হয়ে স্বপনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করলে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।

আসামী স্বপন চন্দ্র প্রায় একমাস হাজতবাসের পর জামিনে বের হয়ে এসে সমাজপতিদের সাথে গোপন আঁতাত করে উল্টো ২২ নভেম্বর শুক্রবার রাতে নিতাইয়ে খলিয়ানে ওই গ্রামের সমাজপতি ক্ষিতিষ, গ্রাম পুলিশ নিরাঞ্জন ও সুকুমারের নেতৃত্বে শিশুটির বাবা কেন থানায় মামলা করলো, এই অপরাধে এক গ্রাম্য সালিশী রায়ে তাকে সাত দিন ধরে একঘরে করে রাখা হয়েছে। এমনকি ধর্মীয় কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দেওয়াসহ সমাজের কেউ তার সাথে চলাফেরা ও কথাবার্তা বললে উপযুক্ত স্বাক্ষী প্রমাণ সাপেক্ষে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।

সুবর্ণকুন্ডু গ্রামের সমাজপতি ক্ষিতিষ চন্দ্র জানান, সুমনকে আমরা একঘরে করে রাখিনি। তবে এই সমাজের লোকজন তার সাথে কথা বলবে কি বলবে না সেটা তাদের ব্যাপার। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো: শফিকুল ইসলাম বাবু জানান, কাউকে একঘরে করার বিধান নেই। সুমনকে একঘরে করা হয়েছে এটা আমার জানা নেই।

আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মোসলেম উদ্দিন জানান, এমন ঘটনা আমার জানা নেই, তবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত করে এর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

ad

পাঠকের মতামত