301032

পুকুরের পাশে সুইমিংপুল বানাচ্ছেন ইউএনও

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হুসেইন খানের বিরুদ্ধে তার সরকারি বাসভবনের পাশে একটি পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে সুইমিংপুল করা এবং এজন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে টিআরের মোটা অঙ্কের টাকা নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গৃহহীন ও বন্যাকবলিতদের জন্য সরকারের দেয়া দুর্যোগসহনীয় ২৫টিসহ মোট ১৪৫টি ঘর নির্মাণের ক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি ও উপজেলা পরিষদের গাছ কেটে বিক্রি করার অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সময় দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়া সাংবাদিকদের সঙ্গেও খারাপ আচরণসহ নানা হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা পর্যায়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

শুধু তাই নয়, শাহজাদপুর আদালত চত্বরের পাশে বসবাসকারী একটি পরিবারকে বাঁশ দিয়ে ঘিরে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ রয়েছে নাজমুল হুসেইন খানের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি তাকে বদলি করা হয়েছে। তার নতুন কর্মস্থল নীলফামারী। সেখানে জেলা পরিষদের সচিব হিসেবে তার যোগদান করার কথা রয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নাজমুল হুসেইন খান বলেন, তার বদলি নিয়মতান্ত্রিক ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে।

তিনি বলেন, যেটিকে সুইমিংপুল বলা হচ্ছে সেটি মূলত একটি কৃত্রিম পুকুর। ওই স্থানে একটি ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত ভবন ছিল। সেটি ভাঙার পর সেখানে গর্ত এবং ঝাড়-জঙ্গলে ভরা ছিল। সেখানেই মূলত পুকুরটি খনন করা হচ্ছে। এজন্য জেলা পরিষদে রেজুলেশন করা হয়েছে এবং স্থানীয় এমপি তিন লাখ টাকা বরাদ্দও দিয়েছেন। সেই টাকায় চলছে কাজ।

ইউএনও নাজমুল হুসেইন খান বলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বলে দেয়া আছে যখন যে সাংবাদিক তথ্য চাবে যেন দেয়া হয়। সাংবাদিকরা যেন কোনোভাবে হয়রানির শিকার না হন, সেটি ভালো বলা আছে। কারও সঙ্গে তিনি খারাপ আচরণ করেননি বলেও জানান।

আপনার বাসভবনের সামনে পৌরসভার একটি বিশাল পুকুর থাকা সত্ত্বেও আলাদা পুকুর করা কতটুকু প্রয়োজন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পৌরসভার পুকুরটি সবার জন্য উম্মুক্ত। সেটি সাঁতার উপযোগী নয়। সরকারি কর্মকর্তার ছেলে-মেয়েরা যেন এখানে সাঁতার শিখতে পারে এজন্য কৃত্রিম এ পুকুরটি খনন করা হচ্ছে।

ইউএনও’র অভিযোগের সূত্র ধরে কথা হয় শাহজাদপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিন্দার আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এসব অভিযোগ ভুয়া। চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে টিআর’র এবং দুর্যোগসহনীয় ঘর বিতরণের জন্য কোনো টাকা নেয়া হয়নি। আপনি একদিন আসেন সরাসরি দেখেন তাহলেই সব বুঝে যাবেন। এসব বিষয়ে মোবাইলে কথা বলা যাবে না বলে জানান তিনি।

চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার অভিযোগের সত্যতা জানতে সরকারের বৃহৎ ওয়েবসাইট (shahjadpur.sirajganj.gov.bd) জাতীয় তথ্য বাতায়নে প্রবেশ করার পর দেখা যায় সেটি পুরনো তথ্যে ভরা। দীর্ঘদিনেও আপডেট করা হয়নি। সাবেক চেয়ারম্যানদের নাম মোবাইল নম্বর দেয়া থাকলেও বর্তমান চেয়ারম্যানদের তালিকা নেই সেখানে।

এসব বিষয়ে জানতে কৈজুরি এবং গাড়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের (দুজনের নাম এক) যোগাযোগ করা হলে তাদের দুজনেরই নম্বর (বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা) বন্ধ পাওয়া যায়।

একই বিষয় কথা হয় ওয়েবসাইটের তালিকায় থাকা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম আজাদ চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা। সাবেক চেয়ারম্যান হলেও তার সঙ্গে আমার যোগাযোগ রয়েছে। তিনি বেশ ভালো এবং উদ্যোগী মানুষ।

এসব প্রসঙ্গে শাহজাদপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আজাদ রহমান বলেন, শুনেছি তিনি একটা সুইমিংপুল করছেন। অথচ তার বাড়ির সামনেই বিশাল একটা পুকুর রয়েছে। এটাও শুনেছি তিনি চেয়ারম্যানসহ এলাকার অনেক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সুইমিংপুল করার জন্য টাকা নিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাহজাদপুরের স্থানীয় এক সংবাদকর্মী বলেন, এই ইউএনও’র দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ উপজেলার মানুষ। টিআরের দুর্নীতির তথ্য জানতে চাওয়ায় তিনি অনেকের সামনে আমাকে মাটিতে গেড়ে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। পরে হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছেন। আরও অনেক সাংবাদিকের সঙ্গে তিনি একই ব্যবহার করেছেন। সুইমিংপুল করার জন্য ইতোমধ্যে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন তিনি। চেয়ারম্যান, ব্যবসায়ী কেউ বাদ পড়ছে না তার চাঁদাবাজি থেকে। শুনেছি এসব ঘটনায় তাকে স্ট্যান্ডরিলিজ করা হয়েছে। বদলি থামাতে লবিংও শুরু করেছেন।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ বলেন, সুইমিংপুল করার বিষয়টি জানা ছিল না। তবে যদি করার নিয়ম থাকে তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। সূত্রঃ জাগো নিউজ

ad

পাঠকের মতামত