300892

জুয়া থেকে হুইপ শামসুলের আয় ১৮০ কোটি টাকা, দাবি পুলিশ কর্মকর্তার

চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবের জুয়ার আসর থেকে গত পাঁচ বছরে ক্লাবটির মহাসচিব ও জাতীয় সংসদের হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ১৮০ কোটি টাকা আয় করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত একটি সমন্বয় সভায় যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের কাছে সারা দেশে চলমান এ অভিযান নিয়ে ক্ষুব্ধ মনোভাব প্রকাশ করেন তিনি। ওই সভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানও ছিলেন।

একসময় চট্টগ্রাম ছিলেন সাইফ আমিন নামের একজন পুলিশ পরিদর্শক (এসআই)। তুলে ধরলেন হুইপের জুয়ার আসরের তথ্য। গত ২০ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক ওয়ালে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেন তিনি। তিনি এক সময় হালিশহর থানা, চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের হাজতখানাসহ বিভিন্ন থানায় কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি ঢাকায় কর্মরত। ফেসবুকে তিনি যা লিখেছেন তা তুলে ধরা হল:

ক্লাব-জুয়া-সাংসদ এবং ওসি:-ক্যসিনো, ফ্লাশ, হাউজি, হাজারি, কাইট, পয়শা (চাঁন তারা) এগুলো আবহমান কাল থেকেই মহানগর ও জেলা সদরের ওসিদের বিনা ঝামেলায় মোটা টাকা পাওয়ার পথ।মহানগরের ফ্ল্যাটকেন্দ্রিক দেহ ব্যবসা, ম্যাসেজ পার্লারগুলো ওসি সাহেবদের ২য় ইনকাম জেনারেটিং এসিসট্যান্স করে, থানার ক্যাশিয়ার কালেকশন করে ওসির প্রতিনিধি হিসেবে। ক্লাবপাড়ার ওসিরা এই দুই খাত থেকেই দৈনিক ৫ লাখ করে নিলেও মাসে সেটা দেড় কোটিতে পৌঁছায়। এবার আছে থানার সিভিল টিম, সিয়েরা ডে/নাইট, লিমা ডে/ নাইট/ গল্ফ ডে নাইট।

এরপর ডিবি। ডিবি একসঙ্গে নেয় না, তালিকা অনুযায়ী ব্যক্তিগতভাবে সংগ্রহ করা হয়। প্রতি মাসে নিজ নিজ ইউনিট থেকে কর্মরত অফিসারদের তালিকা আপডেট করে হাউজগুলোতে পাঠানো হয়।বাকি থাকে মাদক, ওসিরা এখন মাদকের টাকা নেয় না।

মফস্বলের ওসিরা চায় সারা বছর মেলা। মেলা মানে ধামাকা ধামাকা নৃত্য, জুয়া, হাউজি, ওয়ান/টেন আর ডাব্বা খেলা। দৈনিক ওসির ৫০ হাজার, মাসান্তে ১৫ লাখ, তিন মাস চললে ৪৫। ব্যস! আগের পোস্টিং ফ্রি, আর পরেরটা মজুদ। বাকি দিনে যা পান সব বোনাস।ঢাকায় মেনন সাহেব একটির চেয়ার অলঙ্কৃত করেছেন। দোষের কিছু নাই। রাজনীতি বলে নকশালীরা টাকশালি। অর্থাৎ টাকশালের মালিক তারা হন।

চট্টগ্রামে শামসুল হক মাস্টার (!)। ছিঃ ধিক্কার জানাই। আমার নিজের হিসেবে তিনি আজ ৫ বছর চট্টগ্রাম আবাহনীর জুয়ার বোর্ডের মালিক, তত্ত্বাবধায়ক এবং গডফাদার। দৈনিক সর্বনিম্ন ১০ লাখ করে নিলেও আজ ৫ বছরে শুধু জুয়া থেকে নিয়েছেন প্রায় ১৮০ কোটি টাকা। ক্লাবটি হালিশহর থানায়, এমপি সাহেব ওসির জন্য মাসে হাজার দশেক টাকা পাঠান ছিঁচকে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবী দীঘলের মারফত ( তথাকথিত যুবলীগ নেতা)। টাকার এত অবনয়নে হালিশহরের ওসিরা সেই টাকা নেন না। যদিও ওই থানায় ১৩০০টি দেহ ব্যবসার আলয় আছে। ওসি দৈনিক বাসা প্রতি ৫০০ টাকা করে ৬০ হাজার পান। মাসে এখানে ১৮ লাখ পান, তাই মাস্টারের জুয়ার আখড়া মুফতে চললেও রা করেন না।

এই হক মাস্টারের অর্থশালী হয়ে ধরা কে সরা জ্ঞান করার অন্য কারবার হলো ইয়াবা ট্রানজিট। সরকারের কড়াকড়ি আরোপের আগ পর্যন্ত টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবার ৮০ ভাগ তার পটিয়ায় ট্রানজিট নিতো এবং র‍্যাবের এনকাউন্টারে মাস্টার সাবের ইয়াবা উইং কমান্ডার নিহত হলে দীর্ঘ একযুগ পর চট্টগ্রামের স্টেশন কলোনি ইয়াবা ব্যবসা বন্ধ করতে বাধ্য হয়। শত অভিযান আর আন্তরিকতা স্বত্বেও যা বন্ধ করতে পারেননি সিএমপির সাবেক কমিশনার জনাব মো. সফিকুল ইসলাম, জনাব জলিল, জনাব ইকবাল বাহার চৌধুরী। অথচ হক মাস্টার ধোয়া তুলশী রয়ে গেলেন।

জুয়া দিয়ে এবং নিয়ে দেশময় প্রায় একই অবস্থা। আগের সরকারে করেছেন খোকা, আব্বাস, ফালু, এখন করছেন মেনন, শামসু মাস্টার, খালিদ। কিন্তু সব আমলেই কমন আছেন ব্রাত্য ওসি সাহেব।

*ফিরে আসি হুইপের গতকালের কথায়:-‘চট্টগ্রামে শতদল, ফ্রেন্ডস, আবাহনী, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধাসহ ১২টি ক্লাব আছে। ক্লাবগুলো প্রিমিয়ার লিগে খেলে। ওদের তো ধ্বংস করা যাবে না। ওদের খেলাধুলা বন্ধ করা যাবে না। প্রশাসন কি খেলোয়াড়দের পাঁচ টাকা বেতন দেয়? ওরা কীভাবে খেলে, টাকা কোন জায়গা থেকে আসে, সরকার কি ওদের টাকা দেয়? দেয় না। এই ক্লাবগুলো তো পরিচালনা করতে হবে।’ এক নাগাড়ে বলে যান হুইপ।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শামসুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিকেরা প্রেসক্লাবে বসে তাস খেলেন। এটা কি জুয়া হলো? জুয়া হলে তো আপনারা প্রেসক্লাবেও বসতে পারবেন না। তাস খেললেও জুয়া। তাস ধরলেই জুয়া। আর অভিযানে ক্যাসিনো বের করতে পারলে তাদের বাহবা দেয়া যেত। এ সময় তিনি ঘুষের ব্যবসাও বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রশাসনকে বলব, ঘুষের ব্যবসা যারা করেন তাদের ধরেন। ঘুষ যারা নেন, তাদের ধরেন। যারা দেন, তাদেরও ধরেন।’

হুইপ বলেন, ক্লাবের তাস খেলা বন্ধ করে কোনো লাভ হবে না। তাস খেলা বন্ধ করলে ছেলেরা রাস্তায় ছিনতাই করবে। এটা বন্ধ করে লাভ হবে না। এখানে কোনো ক্যাসিনো নেই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ক্যাসিনো এবং মদের ব্যবসা যারা করেন, তাদের ধরতে বলেছেন।

আজ সোমবার সচিবালয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, অবৈধ ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। ‘অপরাধী যেই হোক কেউই ছাড় পাবে না। সরকার আটঘাট বেধেই নেমেছে। দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, মাদক, সন্ত্রাসী কার্যক্রম যতদিন চলবে ততদিন অভিযান চলবে।’ প্রধানমন্ত্রী দেশে না থাকলেও চলমান অভিযানে আপোষ না করার নির্দেশ দিয়ে গেছেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, অপরাধীরা যখনই আমাদের নজরে আসছে তখনই ধরা হচ্ছে। যারাই অবৈধ কাজে জড়িত তথ্য পেলে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।

মন্তী বলেন, ‘এখানে চুনোপুঁটি বা রাঘব বোয়াল বলে আমাদের কাছে কিছু নাই। রাঘব বোয়ালও যদি অপরাধ করে থাকে আমরা তাকেও ধরছি। আমাদের সংসদ সদস্যরাও বাদ যাচ্ছেন না, নির্বাচিত সংসদ সদস্যরাও সেই আইনের আওতায় চলে আসছেন। কাজেই রাঘব -বোয়াল বলে আমাদের কাছে কিছু নেই।’
সূত্র” সময় টিভি

ad

পাঠকের মতামত