298444

রাষ্ট্রপতির ক্ষমার ১০ বছর পর মুক্তি পেলেন আজমত আলী

রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমার পরেও দীর্ঘ ১০ বছর কারাভোগ শেষে অবশেষে মুক্তি পেলেন জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলা পাখিমারা গ্রামের বৃদ্ধ আজমত আলী মাস্টার। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে জামালপুর কারাগার থেকে হাইকোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশে তাকে মুক্তি দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামের ইজ্জত উল্লাহ সর্দারের ছেলে আজমত আলী। তিনি টাঙ্গাইল জেলার গোপালপুরের ভেঙ্গুলা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন।

একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার রায় ভোগ করছিলেন আজমত আলী। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে তার পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির করা আবেদনের নিষ্পত্তি করে ২৭ জুন আপিল বিভাগ রায় দেন। ওই আদেশের ভিত্তিতে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দিতে গত ১৫ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার আবু তাহের নির্দেশনা পাঠান। বিশেষ ডাকযোগে নির্দেশনাটি জামালপুরের দায়রা জজ আদালত ও জেল কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হলে যাচাই বাছাই শেষে মঙ্গলবার তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালের ১ এপ্রিল জমি নিয়ে বিরোধের জেরে জামালপুরের সরিষাবাড়ির কলিম উদ্দিনের ছেলে রেজাউল করিম নিহত হন। ওই ঘটনায় একই এলাকার পাখিমারা গ্রামের ইজ্জত উল্ল্যা সর্দারের ছেলে স্কুল শিক্ষক আজমত আলীসহ আরো কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়।

সেই মামলায় ১৯৮৯ সালের ৮ মার্চ জামালপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত আজমত আলীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিলের পাশপাশি রাষ্ট্রপতির কাছেও দণ্ড মওকুফের জন্য আবেদন করে আজমত আলীর পরিবার। রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় ১৯৯৬ সালের ২১ আগস্ট জামালপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান আজমত। আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজার বিরুদ্ধে তিনি যে আপিল করেছিলেন সে আপিলের শুনানি নিয়ে ২০০৫ সালের ২ মার্চ হাইকোর্ট আজমতকে খালাস দিয়ে রায় দেন।

তবে হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০০৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আজমত আলীকে নিম্ন আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। হাজির না হলে ২০০৯ সালের ২৯ অক্টোবর গ্রামের বাড়ি থেকে আজমতকে গ্রেপ্তার করে নিম্ন আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। সেই থেকে তিনি কারাগারে বন্দি জীবনযাপন করছিলেন।

পরের বছর ২০১০ সালের ১১ আগস্ট হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের রায় ঘোষণা করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের রায়ে হাইকোর্টের দেওয়া খালাসের আদেশ রদ করে আজমতের কিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ বহাল রাখেন।

এরই মধ্যে আজমত আলীর মেয়ে বিউটি খাতুন সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয়ে তার বাবার বিষয়ে আইনি সহায়তার জন্য আবেদন করেন। তাতে যাবজ্জীবন সাজা বহাল রেখে আপিল বিভাগে দেওয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হয়। সেই রিভিউ আবেদন নিষ্পত্তি করে অবিলম্বে আজমত আলীকে মুক্তির নির্দেশ দিয়ে রায় দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।

আজমত আলীর কন্যা বিউটি খাতুন হাইকোর্টের আইনী কর্মকর্তাদের সহায়তায় গতকাল মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তাকে নিঃশর্ত মুক্তি দেয়ার নিদের্শ দেন। মুক্তির পর আজমত আলীর কন্যা বলেন, রাষ্ট্রপতির নির্দেশের পর আইনী জটিলতায় বিনা দোষে ১০ বছর কারাভোগ করলেন বাবা। তবুও বাবা মুক্তি পেয়েছেন এতেই আমরা খুশি। আজমত আলী বলেন, বিনাদোষে ১০ বছর কারাভোগ করলাম। এখন প্রার্থনা শুধু একটাই কারো সঙ্গে যেন এমন না হয়। জামালপুর কারাগারের জেল সুপার মকলেছুর রহমান বলেন, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশের কপি পাওয়া মাত্রই তাকে মুক্তি দেয়া হলো। তার মুক্তিতে কারা কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট।

ad

পাঠকের মতামত