298343

এলেন দেখলেন জয় করলেন যে মহাতারকা

আল-আমিন পারভেজ।। ‘দ্য ম্যাট্রিক্স’ ও জন উইক মুভি সিরিজের কল্যাণে কিয়ানু রিভস এখন ঘরে ঘরে এক পরিচিত নাম। বিভিন্ন ঘরানার বিচিত্র সব চরিত্রে অভিনয় করে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয় জয় করে নিয়েছেন এই অভিনেতা। স্বল্পভাষী কিয়ানু রিভস ব্যক্তিগত জীবনে খুবই চাপা স্বভাবের। তারপরও এই গুণী অভিনেতার জীবনের নানা অজানা অধ্যায় খুঁড়ে বের করে এনেছি শুধুমাত্র ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য-

১। কিয়ানু রিভসের বয়স ৫৪। লেবাননের বৈরুতে ১৯৬৪ সালের ২ সেপ্টেম্বর জন্ম হয় তার। রিভসের মা ছিলেন একজন র‍্যাম্প মডেল ও কস্টিউম ডিজাইনার। তার বাবা ছিলেন একজন ভূ-তত্ত্ববিদ। দুঃখজনকভাবে কিয়ানুর বয়স যখন মাত্র ৩, তখনই তার বাবা পরিবারের দায়িত্ব ফেলে চলে যান। মা প্যাট্রিসিয়ার কাছে বড় হয়ে ওঠেন তিনি।

২। কোনো একটি নির্দিষ্ট জায়গায় শৈশব কাটেনি কিয়ানু রিভসের। তাকে নিয়ে তার মা লেবানন থেকে হাওয়াই, সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়া, নিউইয়র্ক হয়ে সবশেষে কানাডায় পাড়ি জমান। কানাডার টরেন্টোতে স্থায়ী হওয়ার পর তার মা রক এন্ড রোল ইন্ডাষ্ট্রির একজন কস্টিউম ডিজাইনার হিসেবে কাজ করতে থাকেন। আশ্চর্যেরও এক ধাপ ওপরের তথ্য হলো কিয়ানুর মায়ের ব্যস্ততার কারণে, কিংবদন্তি রক সঙ্গীত শিল্পী অ্যালিস কুপার তার দেখশোনা (বেবি সিটিং) করতেন।

৩। কানাডাতেই কিয়ানু রিভসের হাইস্কুল জীবন শুরু হয়, তবে পড়াশোনায় মনোযোগ না থাকায় একের পর এক স্কুল থেকে বহিষ্কার হতেন তিনি। এভাবে চারবার স্কুল পরিবর্তনের পর ১৭ বছর বয়সে কিয়ানু নিজেই অভিনয়ের জন্য পড়াশোনার ইতি টানেন।

৪। কিয়ানুর চাচা ‘হেনরি কিয়ানু রিভস’এর নাম অনুকরণে তার নামকরণ করা হয়। হাওয়াইয়ান ভাষায় ‘কিয়ানু’ শব্দের অর্থ পর্বতমালার ওপর থেকে বয়ে যাওয়া ঠাণ্ডা হাওয়া।

৫। কিয়ানু রিভসের মা ছিলেন ইংরেজ, তার বাবার রক্তে মিশে ছিল চাইনিজ-হাওয়াইয়ান, ইংরেজ, আইরিশ ও পর্তুগিজ পূর্বপুরুষের ছোঁয়া।

৬। কিয়ানু একজন কানাডিয়ান নাগরিক ও নিজেকে সবসময় কানাডিয়ান পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

৭। হাইস্কুলে থাকার সময় কিয়ানু কানাডার অলম্পিক টিমের হয়ে আইস হকি খেলতে চাইতেন, কিন্তু মাত্র ১৫ বছর বয়সেই আগ্রহের মোড়টা অভিনয়ের দিকে ঘুরে যায় তার। অভিনয়ের নেশায় মাত্র ১৯ বছর বয়সে কিয়ানু রিভস লস এঞ্জেলসে পাড়ি জমান। হলিউডে এসেই বিভিন্ন বিজ্ঞাপন ও শর্ট ফিল্মে কাজ পেতে থাকেন তিনি।

৮। ১৯৮৬ সালে ‘ইয়াংব্লাড’ সিনেমায় একজন গোল কিপারের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক হয় কিয়ানু রিভসের। তবে কিয়ানু সর্বপ্রথম ‘বিল এন্ড টেড’স এক্সিলেন্ট অ্যাডভেঞ্চার’ সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি অপ্রত্যাশিতভাবে ব্যাপক সাফল্য পায়।

৯। কিয়ানুর অভিনয় জীবনে টার্নিং পয়েন্ট হয়ে আছে ১৯৯৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘স্পিড’ সিনেমাটি, যে ছবিতে তিনি কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করে ব্যাপক প্রশংসা পান। সেই সাথে স্পিড সিনেমাটিও শেষ বছরের অন্যতম সেরা ব্লকবাস্টার ছবি হিসেবে বক্স অফিসে হিট করে। এই সিনেমাটি কিয়ানু রিভসের ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং তাকে একজন কৌশলী অভিনেতা হিসেবে লিউডে প্রতিষ্ঠা করে। স্পিড সিনেমাটির ব্যাপক সাফল্যের পর অভিনেতা হিসেবে কিয়ানু অনেকটা স্বাধীনভাবে এবং যাচাই-বাছাই করে কাজ করার সুযোগ লাভ করেন।

১০। ১৯৯১ সাল থেকে শুরু করে ২০০২ পর্যন্ত রক ব্যান্ড ডগস্টারের বেজ গিটারিস্ট ছিলেন কিয়ানু রিভস। এই সময়ের মধ্যে তারা বন যোভি, র্যানসিডসহ অনেকের সাথে পারফর্ম করেন এবং আমেরিকা ও এশিয়াতে বেশ কয়েকটি ট্যুর সম্পন্ন করেন। পরে যদিও ব্যান্ডটি ভেঙ্গে যায়।

১১। একটি চলচ্চিত্রের শ্যুটিংয়ের সময় রিভার ফিনিক্সের সঙ্গে কিয়ানু রিভসের বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়। কিয়ানুর হাতে যখন ‘মাই ওন প্রাইভেট আইডাহো’ ছবির স্ক্রিপ্ট আসে, তার মনে হয়েছিল একমাত্র রিভারই এই চলচ্চিত্রের জন্য একদম ‘পারফেক্ট’। বন্ধুর হাতে এই সিনেমার স্ক্রিপ্ট তুলে দিতে তিনি ১ হাজার মাইল মোটরসাইকেল চালিয়ে গিয়েছিলেন! শেষ পর্যন্ত ছবিটির মাইকি ওয়াটার্স চরিত্রে রিভার ফিনিক্স ও স্কট ফেভারের চরিত্রে কিয়ানু রিভস অভিনয় করেছিলেন।

১২। স্পিড সিনেমার ব্যাপক সাফল্যের পর স্পিড-২ ছবিটি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন কিয়ানু! সিনেমার স্ক্রিপ্ট পছন্দ না হওয়াতেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন। ওই সময়ে তিনি ব্যান্ডের ট্যুর নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান ও উইনিপেগ প্রোডাকশনের ব্যানারে হ্যামলেটের মঞ্চায়ন করেন।

১৩। ২০০৫ সালে হলিউড ওয়াক অফ ফেমে জায়গা পান কিয়ানু রিভস।

১৪। মোটরসাইকেলের দারুণ এক ভক্ত হলেন কিয়ানু। এ কারণেই তিনি বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মোটর বাইক তৈরির কোম্পানি‘আর্ক মটরসাইকেল কোম্পানি’ প্রতিষ্ঠা করেন।

১৫। দ্য ডেভিলস অ্যাডভোকেট সিনেমায় আল পাচিনোকে আনার জন্য নিজের প্রাপ্যাংশ থেকে ১ মিলিয়ন ডলার প্রযোজকদের দিয়ে দিয়েছিলেন কিয়ানু! শেষমেশ তার প্রবল আগ্রহের কারণেই আল পাচিনো ওই সিনেমায় কিয়ানুর সহশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন। এছাড়াও বিশ্বখ্যাত ‘দ্য ম্যাট্রিক্স’ সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করা কিয়ানু তার প্রাপ্যাংশ থেকে ৩৮ মিলিয়ন ডলার প্রযোজকদের দিয়ে দিয়েছিলেন, তারা যাতে সিনেমাটির জন্য আরও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারেন।

১৬। ‘দ্য ম্যাট্রিক্স’ সিনেমার সাফল্যের পর কিয়ানু রিভস ওই সিনেমার ১২ জনের স্টান্ট দলের সবাইকে একটি করে হার্লে ডেভিডসন মোটরসাইকেল উপহার দিয়েছিলেন!

১৭। কিয়ানু অমর- এমন একটি গুজব ভক্তমহলে প্রচলিত আছে। তারা দাবি করেন, কিয়ানু অবিকল ১৮৪৭ সালে জন্ম নেয়া ফরাসি অভিনেতা পল মনেটের মতো দেখতে। সেই পল মনেটই এখনকার কিয়ানু, যার বয়স একদমই বাড়ছে না!

ad

পাঠকের মতামত