297879

বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দিলো বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্কঃ প্রথমবারেরমত বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল শুধুমাত্র একটি জয়। স্কটল্যান্ডকে হারানো। এডিনবরায় স্বাগতিকদের সেই ম্যাচে হারিয়েছেও বাংলাদেশ। ১৮৬ রান করে জিতেছে ২২ রানের ব্যবধানে। অসাধারণ ব্যাটিং করে সেই ম্যাচের সেরা হয়েছিলেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।

লক্ষ্য পূরণ তো শেষ। বাংলাদেশের পরবর্তী লক্ষ্য কি? কিছুই নেই। পরের দুটি ম্যাচে যতটা সম্ভব ভালো খেলা যায়- এটাই ছিল মূল লক্ষ্য। তাতে অভিজ্ঞতার ঝুলি হয়তো একটু ভারি হবে। এমনকি পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগেরদিন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যারা বিশ্বকাপ খেলেনি, তাদেরকে সুযোগ দেয়া হোক।

সে মতে নিয়ামুর রশিদ রাহুল, শফিউদ্দিন বাবুদের খেলানো হয় নর্দাম্পটনে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন রাতে হঠাৎ করেই কোচ গর্ডন গ্রিনিজকে বরখাস্ত করা হয়। যদিও দল এ ব্যাপারটি জানতেই পেরেছে মাঠে যাওয়ার পর। তবুও ফারুক, নান্নু এবং রফিকরা ঘোষণা দিয়েছিলেন ওটাই তাদের ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। ‘

সুতরাং, ম্যাচ শুরুর আগে গর্ডন গ্রিনিজ আহ্বান জানিয়েছিলেন খেলোয়াড়দের প্রতি, শেষ ম্যাচটা নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেলতে। তাতে ভালো কিছু আসলেও আসতে পারে। অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল সতীর্থদের বলেছিলেন, ‘ভায়েরা ফারুক ভাই, নান্নু ভাইদের জন্য হলেও আমরা ভালো কোনো কিছু করতে পারি কি না সে চেষ্টা করবো।’

দিনটি ছিল ১৯৯৯ সালের ৩১ মে। নর্দাম্পটনে পাকিস্তানের মুখোমুখি হলো বাংলাদেশ। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আখতার, ইনজামাম, মঈন খান, সাঈদ আনোয়ার, আফ্রিদি, সাকলায়েন মোস্তাকদের নিয়ে গড়া পাকিস্তানের সম্ভবত সর্বকালের সেরা একাদশ। তাদের সামনে ক্রিকেটের নবীন দেশ, বাংলাদেশ।

পাকিস্তানের সুপার সিক্স নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। গ্রুপ পর্বের আগের চার ম্যাচের একটিতেও হারেনি ওয়াসিম আকরামের দল। সেই দলটির সামনে বাংলাদেশ। নিশ্চিতভাবেই উড়ে যাওয়ার কথা বুলবুলদের। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে কি না বাংলাদেশই ম্যাচ জিতে গেলো ৬২ রানের ব্যবধানে। হারিয়ে দিলো পাকিস্তানের মত পরাক্রমশালী দেশকেও।

যদিও কেউ কেউ এর মাঝে ষড়যন্ত্রের গন্ধও খুঁজেছিলেন! অনেকেই বলেছিলেন, বাংলাদেশকে হয়তো বা পাকিস্তান ম্যাচটা ছেড়ে দিয়েছিল। কেউ কেউ ফিক্সিংয়ের গন্ধ খুঁজেছিলেন। দলটার নাম পাকিস্তান বলেই হয়তো এমন গুজব ছড়িয়েছিল! যদিও শেষ পর্যন্ত সেসব আর ধোপে টেকেনি।

বিশ্বসেরা বোলারদের নিয়ে বাংলাদেশকে বেধে ফেলতে টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নিয়েছিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম। তাকে ভুল প্রমাণ করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মেহরাব হোসেন (৯) এবং শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ (৩৯)। ১৬ ওভারের মধ্যেই তারা তুলে ফেলেন ৬৯ রান।

এরপর সে ধারাকে আরও বেগবান করেন আকরাম খান ৬৬ বলে ৪২ রান করে। শেষের দিকে খালেদ মাহমুদ ৩৪ বলে ২৭ রান তুললে বাংলাদেশের স্কোর দাঁড়ায় ৯ উইকেটে ২২৩ রান। সাকলায়েন মোশতাক ৩৫ রানের বিনিময়ে ৫টি এবং ওয়াকার ইউনিস ৩৬ রানে পেয়েছিলেন ২ উইকেট।

জয়ের জন্য ২২৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের আনকোরা বোলিংয়ের বিপক্ষে খেই হারিয়ে ফেলে সাঈদ আনোয়ার, আফ্রিদি, সেলিম মালিক, ইজাজ আহমেদ, ইনজামাম-উল হকদের নিয়ে গড়া বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ। ৪২ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে শুরু করে পাকিস্তান।

শেষের দিকে ওয়াসিম (২৯) এবং আজহার মাহমুদ (২৯) পাকিস্তানকে উদ্ধার করার চেষ্টা করেছিলেন বটে কিন্তু বাংলাদেশি বোলারদের সামনে তাদের সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে সাকলায়েন মোস্তাককে খালেদ মাসুদ পাইলট যখন রান আউট করলেন, তখন সেটা থার্ড আম্পায়ারের কাছে পাঠানো হয় সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। কিন্তু ততক্ষণে দর্শকরা নেমে আসেন মাঠে এবং বিজয় উদযাপন শুরু করে দেন।

যদিও শেষ পর্যন্ত থার্ড আম্পায়ার আউটেরই ঘোষণা দেন। ৩১ রানে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজন। ব্যাট হাতে ২৭ রানের পাশাপাশি বল হাতে ৩ উইকেট নেয়া সেরার পুরস্কারও ওঠে সুজনের হাতে।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকিস্তানকে পরাজিত করে যেমন বিজয় উদযাপন করেছিল বাংলাদেশ, ৩১ মে ১৯৯৯ সালের মধ্য রাতেও প্রায় একইভাবে বিজয় উদযাপন করলো বাংলাদেশের মানুষ। ঢাকার রাস্তায় রঙ ছিটিয়ে, পতাকা হাতে মানুষ নেমে আসে দলে দলে। নেচে-গেয়ে উদযাপন করে সেই বিজয়।

এরপরই আইসিসির কাছে জোর দাবি তোলা হলো বাংলাদেশকে টেস্ট খেলার মর্যাদা দেয়ার জন্য। বলার অপেক্ষা রাখে না বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে পর্যদুস্ত করা ওই জয়ই ২০০০ সালে বাংলাদেশকে টেস্ট স্ট্যাটাস পাইয়ে দিতে বড় ভূমিকা রেখেছিল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর কার্ড-বাংলাদেশ : ২২৩/৯, ৫০ ওভার (আকরাম ৪২, শাহরিয়ার ৩৯, মাহমুদ ২৭, আমিনুল ১৫, মাসুদ ১৫*, মিনহাজুল ১৪, নাঈমুর ১৩, মেহেরাব ৯, রফিক ৬, শফিউদ্দিন ২, নিয়ামুর ১। সাকলাইন ৩৫/৫, ওয়াকার ৩৬/২, আফ্রিদি ২৬/১, ওয়াসিম ৩৫/১)।

পাকিস্তান : ১৬১/১০, ৪৪.৩ ওভার (ওয়াসিম ২৯, আজহার ২৯, সাকলাইন ২১, মঈন ১৮, ওয়াকার ১১, আনোয়ার ৯, ইনজামাম ৭, সেলিম মালিক ৫, আফ্রিদি ২, শোয়েব আখতার ১, ইজাজ ০। মাহমুদ ৩১/৩, নিয়ামুর ২০/১, শফিউদ্দিন ২৬/১, রফিক ২৮/১, মিনহাজুল ২৯/১)।

ফল : বাংলাদেশ ৬২ রানে জয়ী। ম্যান অব দ্য ম্যাচ : খালেদ মাহমুদ সুজন।

ad

পাঠকের মতামত