296180

নবজাতকের পা ধরে টানতে গিয়ে ছিড়ে এলো দেহ, ‘মৃত্যুঝুঁকিতে’ মা

গাইবান্ধার সাঘাটায় উপজেলায় সন্তান প্রসব করাতে গিয়ে নবজাতকের মাথা দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলার অভিযোগ উঠেছে আজগর আলী নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। গত শনিবার উপজেলা সদর বোনারপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে। ওই নারীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় গাইবান্ধা শহরে নিয়ে এসে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ওই নারী মৃত্যু ঝুকিতে রয়েছেন।

জানা গেছে, সাঘাটা উপজেলার ভরতখালি ইউনিয়নের লিমন মিয়ার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রশিদা বেগমকে গত শনিবার সকাল ১০টায় প্রসবব্যথা নিয়ে উপজেলার বোনারপাড়ার প্রাইভেট ক্লিনিক ‘মাতৃসদন কেন্দ্রে’ ভর্তি করানো হয়। সেখানে থাকাকালে ডাক্তার ও নার্স ছাড়া বিনা চিকিৎসায় সারা দিন সেখানে রাখা হয়। এর একপর্যায়ে প্রসূতির শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে বিকেল ৪টার দিকে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মালিক আজগর আলী নিজেই একটি রুমে নিয়ে গিয়ে প্রসব করানোর চেষ্টা করেন।

একপর্য়ায়ে নবজাতকের পা বের হয়ে আসলে তা ধরে ব্যাপক টানাটানি করা হয়। এতে নবজাতকের মাথা আটকে গেলে গলা থেকে দেহ ছিঁড়ে আসে। এতে রোগীর ব্যাপক রক্তক্ষরণ হলে বেকায়দায় পড়ে ক্লিনিকের মালিক আজগর আলী প্রসূতিকে গাইবান্ধা অথবা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। এদিকে প্রসবের সময় বাচ্চার পা ধরে টানাহেঁচড়া করায় গলা থেকে ছিঁড়ে দেহ আলাদা হয়ে গেলে ছেঁড়া অংশ ভেতরে পুনরায় ঢুকিয়ে দেয়ায় প্রসূতি মৃত্যু যন্ত্রণায় কাৎরাতে থাকেন। পরিস্থিতির অবনতি হলে শনিবার রাত ১০টায় কোনো ছাড়পত্র ছাড়াই রোগীকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়।

পরে ক্লিনিকের দরজায় তালা লাগিয়ে সটকে পড়েন মালিক আজগর আলীসহ সবাই। প্রসূতি রশিদা বেগমের অভিভাবকরা তাকে নিয়ে তখন জেলা সদরে ‘গাইবান্ধা ক্লিনিকে’ এনে ভর্তি করায়। এখানে চিকিৎসকরা চেষ্টা করে মাথা এবং দেহ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় মৃত শিশুটিকে বের করে বাড়িতে দাফনের জন্য পাঠিয়ে দেন। এ বিষয়ে কথা হলে মাতৃসদন ক্লিনিকের মালিক কথিত চিকিৎসক আজগর আলী বলেন, ‘রোগীর লোকজনের অনুরোধেই বাচ্চা বের করার চেষ্টা করি।’ তবে আগে থেকেই পেটের ভেতর বাচ্চা মৃত ছিল বলে তার দাবি।

আজগর আলী মূলত একজন মেডিকেল অ্যাসিসটেন্ট। নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিয়ে এই ক্লিনিকটি চালাচ্ছেন। এ ঘটনায় সিভিল সার্জন, সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে গত রোববার অভিযোগ দেওয়া হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সাদুল্যাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু আহম্মদ আল মামুনকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত টিম গঠন করে দেন গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম আবু হানিফ।

ওই তদন্ত টিম সাত কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে আজ মঙ্গলবার মুঠোফোনে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. এ বি এম আবু হানিফ। এ বিষয়ে আজ মুঠোফোনে সাঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাসুদ পারভেজ বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মেডিকেল অ্যাসিসটেন্টরা কোনোভাবেই নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিয়ে চিকিৎসা করতে পারে না। কথিত ডাক্তার এবং ক্লিনিক মালিক আজগর আলী এখন পলাতক। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সাঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি।

ad

পাঠকের মতামত