291698

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিচক্ষণ জীবনসঙ্গিনী খাদিজা (রা.)-এর চারটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য

ইসলাম ডেস্ক।। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিচক্ষণ জীবনসঙ্গিনী হযরত খাদিজা (রা.) ছিলেন বুদ্ধিমতী, উৎসর্গপ্রাণা, নীতিবান, মহৎ হৃদয় ও সম্মোহনী যোগ্যতার অধিকারিণী। রাসূল (সা.) প্রায়ই তাঁর অপর স্ত্রীগণের কাছে খাদিজা (রা.)-এর প্রশংসা করতেন। খাদিজা (রা.) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রথম স্ত্রী এবং তার বেঁচে থাকাকালীন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর একমাত্র স্ত্রী। একইসাথে তিনি ছিলেন প্রথম মুসলমান। তাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বয়ং জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে সালাম পাঠিয়েছিলেন এবং তার জীবদ্দশায় তিনি জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন।

আমাদের মাতা হযরত খাদিজা (রা.) পৃথিবীর সকল মুসলমানের জন্য আদর্শ। নিচে আমাদের শিক্ষার জন্য সংক্ষেপে তার চারটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো-

১. প্রজ্ঞা : রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার আগে খাদিজা (রা.)-এর কাছে আরবের আরও সম্ভ্রান্ত বিভিন্ন পরিবার থেকে বিবাহের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু তিনি সমস্ত প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

কেবল বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়া বা অর্থই তার লক্ষ্য ছিল না। বরং তিনি একজন সৎ ব্যক্তিত্বের খোঁজ করছিলেন এবং তার এই পছন্দের সাথে তিনি কোনো প্রকার আপোস করতে রাজি ছিলেন না। অবশেষে তার পছন্দের অনুরূপ ব্যক্তিত্ব রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাঝে তিনি খুঁজে পান এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে তিনি বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হন।

বিবাহের আগে প্রজ্ঞার সাথে জীবনসঙ্গী নির্বাচন সিদ্ধান্ত একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আপনি শুধু তার সাথেই উত্তমরূপে জীবনযাপন করতে পারবেন, যিনি আপনার প্রশংসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারবেন। শুধু যশ-খ্যাতি দিয়ে এই শ্রদ্ধা অর্জন সম্ভব নয়।

২. সান্ত্বনাদানকারী : রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে যখন প্রথম জিবরাঈল (আ.) ওহী নিয়ে এসেছিলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি তখন কারো কাছে না গিয়ে সরাসরি তাঁর স্ত্রী খাদিজা (রা.)-এর কাছে যান এবং তার কাছে সব খুলে বলেন। রাসূল (সা.) তখন হযরত খাদিজা (রা.)-এর কাছে নিজের জীবন সম্পর্কে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।

হযরত খাদিজা (রা.) তখন তাকে সান্ত্বনা প্রদান করে বলেন, ‘এটি হতেই পারে না। আল্লাহর শপথ, তিনি কখনোই আপনাকে লজ্জিত করবেন না। আপনি আত্মীয়তার হক রক্ষা করেন, সর্বদা সত্য কথা বলেন, মানুষের বোঝা নিজে বহন করেন, অভাবীকে সাহায্য করেন, মেহমানকে আপ্যায়ন করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।’

হযরত খাদিজা (রা.)-এর এই প্রত্যুত্তরে রাসূল (সা.) স্বস্তি পান। রাসূল (সা.) যখনই কোনো বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতেন, তখনই হযরত খাদিজা (রা.) তার পাশে থেকে তাকে সান্ত্বনা প্রদান করতেন।

স্ত্রীর এমন অসাধারণ গুণ স্বামীর যে কোনো কঠিন অবস্থায় তাকে তার স্বামীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ সাহায্যকারী বা ‘পিলার অফ সাপোর্ট’ হিসেবে পরিণত করতে পারে।

৩. উত্তম পরামর্শদাতা : খাদিজা (রা.) ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সর্বাধিক উত্তম পরামর্শদাতা। তিনি সর্বাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.)কে উত্তম ও সঠিক পরামর্শ দিতেন।

ওহী অবতীর্ণ হবার পর তিনিই রাসূলুল্লাহ (সা.)কে পরামর্শ দিয়েছিলেন তৎকালীন মক্কার আসমানি কিতাবে অভিজ্ঞ পণ্ডিত ওয়ারাকাহ ইবনে নওফেলের কাছে যেতে। ওয়ারাকাহ ইবনে নওফেল রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে পুরো ঘটনার যথার্থ ব্যাখ্যা প্রদান করে তার ভীতি দূর করেন।

একজন শিক্ষিত মুসলিমাহ হিসেবে আপনি আপনার জীবনসঙ্গীর যাবতীয় বিষয়ে খেয়াল রাখতে পারেন এবং তার প্রয়োজনের সময় তাকে উত্তম পরামর্শ প্রদান করতে প্রস্তুত থাকতে পারেন।

৪. ত্যাগী ও সহযোগী মনোভাব : রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত খাদিজা (রা.) সম্পর্কে মন্তব্য করেন, ‘যখন সকলেই আমাকে অবিশ্বাস করেছে, সে আমাকে বিশ্বাস করেছে; সকলেই যখন আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে, সে তখন তার সম্পদ দ্বারা আমাকে সাহায্য করেছে। আল্লাহ তার মাধ্যমেই আমাকে আমার সকল সন্তান দান করেছেন।’

রাসূলুল্লাহ (সা.) নবুওয়ত লাভের পর থেকে তাঁর উপর যত প্রকার কঠিন অবস্থা আরোপিত হয়েছে, যত দুর্যোগ বয়ে গেছে, সব অবস্থাতেই হযরত খাদিজা (রা.) তাঁর পাশে ছিলেন। সামাজিক বিদ্রুপ, সম্পদহানী এবং তীব্র আর্থিক সংকট ও ক্ষুধার মধ্যেও রাসূল (সা.)-এর প্রতি হযরত খাদিজা (রা.)-এর শ্রদ্ধা বিন্দু পরিমাণও কমেনি। যতদিন পর্যন্ত হযরত খাদিজা (রা.) জীবিত ছিলেন, ততদিন তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রজ্ঞাবতী, সান্ত্বনাদানকারী, ত্যাগী ও সর্বোপরি সর্বাত্মক সহযোগী বিচক্ষণ জীবনসঙ্গিনী হিসেবেই ছিলেন।

ad

পাঠকের মতামত