289049

ভারতে প্রথম ধাপের ভোট আজ

ডেস্ক রিপোর্ট : নির্বাচনী ঘণ্টা বেজেছিল সেই মার্চে। আজ ঠিক এক মাস পর শুরু হল ভোট। ভারতের ছোট-বড় মিলিয়ে কমবেশি দুই হাজার দল অংশ নিচ্ছে আজকের ভোট-উৎসবে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক উৎসব। ভারতের ১৭তম লোকসভা নির্বাচন। নেতাকর্মী, ভোটার-প্রার্থীদের মাসব্যাপী প্রচারযজ্ঞের পর আজ শুরু হল প্রথম ধাপের ভোট। তফসিল অনুযায়ী নির্বাচন হবে মূলত সাত ধাপে। ১৯ মে পর্যন্ত টানা এক মাসেরও বেশি সময় চলবে নির্বাচন। সবকিছু ঠিক থাকলে ২৩ মে ভোট গণনা। ওইদিনই ফলাফল।

দিনশেষে কার মুখে হাসি ফুটবে, কার চোখে জল- সে হিসাব এখনও দূরের পথে। তবে আশায় বুকবেঁধে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর রাজ্যে রাজ্যে প্রতিশ্রুতির খই ফোটানো আর প্রতিদ্বন্দ্বীর বদনাম-দুর্নামে মুখে ফেনা তোলা প্রচার-পোস্টারে এটা নিশ্চিত যে, রীতিমতো জমে উঠেছে এবারের নির্বাচন। ঘড়ির কাঁটা সকাল ৭টা ছুঁতেই বেজে ওঠে ভোটের দামামা। ভারত মহাসাগরের আন্দামান নিকোবর থেকে উত্তরপ্রদেশ; নাগাল্যান্ড থেকে পশ্চিমবঙ্গ- ৫৪৩ আসনের ‘দেশচালক’ নির্বাচনে আজ সারা দিনই ১৮ রাজ্য ও ২টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৯১টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় পরীক্ষায় বসেছে ভারত।

ভোটের পূর্বাভাস বলছে, উত্তরপ্রদেশে মমতা-মায়াবতীর মহাজোট আর ছোট বোনের আঁচল ধরে হাঁটা কংগ্রেসের ‘প্রিয়াংকা লাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগানেও ঠেকানো যাবে না প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জয়রথ। রেলস্টেশনের টং-দোকান থেকে রাজপথ ধরে মেগা শপিংমলের চৌতারা সবখানেই ‘চাওয়ালার’ জয়জয়কার। তবু আশার হাল ছাড়ছে না কেউই। কে জিতবে-কে হারবে, সেই দোলাচলের মধ্যেই শুরু হল ভোটদামামা।

প্রথম ধাপের নির্বাচনে অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুনাচল, গোয়া, গুজরাট, হরিয়ানা, হিমাচল, কেরালা, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, পাঞ্জাব, তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ু, আন্দামান ও নিকোবর, দাদরা ও নাগর হাভেলি, দামান ও দিউ, লাক্ষাদ্বীপ, নয়াদিল্লি, পদুচেরি, চন্ডিগড় ও উত্তরাখণ্ডের ভোটাররা একযোগে ভোট দিচ্ছেন। লোকসভার সঙ্গে সঙ্গে অন্ধ্রপ্রদেশ, সিকিম, অরুনাচল ও ওড়িশা- এ চার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন হচ্ছে। জম্মু-কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের কথা থাকলেও এখনই তা হচ্ছে না।

মার্চের প্রথম সপ্তাহে (১০ মার্চ রোববার) লোকসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন। তফসিলের সঙ্গে সঙ্গেই কার্যকর হয় নির্বাচনী আচরণবিধি। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারগুলো নতুন কোনো প্রকল্প ঘোষণা করতে পারবে না বলে জারি করা হয় নির্দেশনা।

প্রথম ধাপ উতরে গেলেই চলতি মাসের ১৮, ২৩ ও ২৯ এপ্রিল যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের ভোট হবে। এরপর মে মাসের ৭, ১২ এবং ১৯ তারিখে হবে বাকি তিন ধাপের ভোট। সাত ধাপের এ ভোটগ্রহণ শেষ হবে ১৯ মে। ২৩ মে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। দ্বিতীয় ধাপে ১৩টি রাজ্যের ৯৭টি আসনে; তৃতীয় ধাপে ১৪টি রাজ্যের ১১৫টি আসনে; চতুর্থ ধাপে ৭১টি আসনে; পঞ্চম ধাপে ৭টি রাজ্যের ৫১টি, ষষ্ঠ ধাপে ৭টি রাজ্যের ৫৯টি, সপ্তম ধাপে ৮টি রাজ্যের ৫৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হবে।

পরিসংখ্যান বলছে, এবারের লোকসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন দেশের প্রায় ৯০ কোটি ভোটার। এর অর্ধেকেরও বেশি নারী। গতবারের চেয়ে ভোটার সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ। যোগ হয়েছে ১৩ কোটি নতুন ভোটার। এদের মধ্যে তরুণ ভোটার প্রায় দেড় কোটি। তবে ২০১৪ সালে নতুন ভোটারের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। এবার ভোটারদের দুই-তৃতীয়াংশের বয়স ৩৫ বা তার থেকে কম। ভোটে অংশ নিচ্ছে ১৮৪১টি রাজনৈতিক দল। প্রার্থীর সংখ্যা প্রায় আট হাজার।

ভোট নেয়া হচ্ছে দশ লাখেরও বেশি কেন্দ্রে। শুধু ভারতে নয় গোটা বিশ্বেই এটি রেকর্ড। ১১ লাখ ইভিএমে নিজেদের মত জানাচ্ছেন ভোটাররা। প্রত্যেক ইভিএমের সঙ্গে রয়েছে ভিভিপ্যাট। প্রথমবার ভোটার তথা ১৮-১৯ বছর বয়স এমন ভোটার সংখ্যা দেড় কোটির কাছাকাছি। এ ছাড়া রয়েছে ৩৮ হাজারেরও বেশি রূপান্তরকামী ভোটার। বিভিন্ন সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, এবার ভোটের খরচ প্রায় ৫০০ বিলিয়ন। সে হিসাবে এটাই ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল নির্বাচন।

অন্য চোখে দেখলে, সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনও বটে। শুরু থেকেই সবার টার্গেট বিজেপি। শত্রুও একজন-মোদি। টানা পাঁচ বছর বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতির আগুনে পুড়ে অঙ্গার বিরোধী দলগুলোর পায়ের তলার মাটি পর্যন্ত ছাই হয়ে গেছে মোদির নজরে। নির্বাচনের এই মোক্ষম সুযোগে ভারতের সেই জাতবিদ্বেষের আগুনকেই যেন চিরতরে নিভিয়ে দিতে চাইছেন সব নেতা। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস শিরোমণি মমতা ব্যানার্জি, উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী ও বহুজন সমাজবাদী পার্টির অখিলেশ যাদব-মায়াবতী, তামিলনাড়ুর তেলেগু দেশম পার্টির চন্দ্রবাবু নাইডু সবার তীরেই এক নিশানা। বিজেপি পতন, মোদি নাশ। কংগ্রেস তো আছেই। সবাই এক পাল্লায় আর মোদি অন্য পাল্লায়।

মোদির পুঁজি জাতীয়তাবাদ-কট্টর হিন্দুত্ববাদ আর বিরোধীদের পুঁজি মোদির আকাশছোঁয়া রাফাল কেলেঙ্কারি, আম্বানি দুর্নীতির ফিরিস্তি। জরিপ বলছে, প্রচার-প্রসারে যতই জাতীয়তাবাদ জাদু থাক, মোদির লোকসভার ঝুলিতে আসন এবার কমবে। কৃষকদের পড়তি আয় ও বেকারত্ব বিজেপির জনসমর্থনে লাগাম টেনে ধরতে পারে। তবে এটা ঠিক, ধারণার চেয়েও বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হচ্ছে এবারের লোকসভা নির্বাচন।

নির্বাচন কমিশনের গাড়িতে বিজেপির পতাকা : বিরোধী দলগুলো আগে থেকেই অভিযোগ করে আসছিল, বিজেপির পক্ষে কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে চিঠিও লিখেছেন অন্তত ৬৬ জন অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও কূটনীতিক।

এবার হাতেনাতে যেন সেই অভিযোগের প্রমাণ দিল স্বয়ং কমিশন। কমিশনের গাড়িতে দেখা গেল বিজেপির দলীয় পতাকা। বুধবার পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলে কমিশনের এ কাণ্ডে চক্ষু চড়কগাছ ভারতের আপামর জনগণের। আগামী ২৯ এপ্রিল নির্বাচন হবে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে। তার আগেই শেষ মুহূর্তের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে পৌঁছে গেছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। সেখানেই এমন ভয়াবহ কাণ্ড ঘটায় নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনায় অঙ্গীকারবদ্ধ সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। শুধু গাড়ির সামনে বিজেপির পতাকাই নয়; গাড়িতে বসে ছিলেন বেশ কয়েকজন যুবকও। তাদের গায়েও ছিল বিজেপির উত্তরীয়। সূত্র : যুগান্তর।

ad

পাঠকের মতামত