289064

কারা মুক্তি চায় সিরাজের?

নিউজ ডেস্ক।। সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি অগ্নিদগ্ধ হওয়ার প্রকৃত কারণ চার দিনেও বের করতে পারেনি পুলিশ। ইতিমধ্যে ক্লুবিহীন মামলাটির তদন্তে স্থানীয় প্রশাসনের সক্ষমতা ও মাদ্রাসা অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার মুক্তি আন্দোলনের নেপথ্যে কারা তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গত ২৭ মার্চ অগ্নিদগ্ধ রাফিকে অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্নীলতাহানির চেষ্টা করেন মাদ্রাসার অধ্যক্ষ। রাফির মায়ের অভিযোগের পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে ওই দিনই আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে।

জানা গেছে, ওই দিন রাতে মাদ্রাসার ছাত্র ও সাবেক ছাত্ররা সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদ নামে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে। আহ্বায়ক হিসেবে মাদ্রাসার ছাত্রশিবির নেতা নুর উদ্দিন, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন শামিম, শিবির নেতা মহি উদ্দিন শাকিলকে সদস্য সচিব করে ২৪ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শিবির কর্মী নাছির উদ্দিন, নোমান, শরিফ, ইফতেখার উদ্দিন রানা, ইমরান হোসেন, জাবেদ, নুর উদ্দিন, জুবায়ের, জহিরুল ইসলাম, শরিয়ত, উল্যাহ, এরশাদ, সালমান ভুঞা, পিয়াস, রাকিব, সুমন, শামিম, লিজন, নিশাত, তারেক, সৈকত ও ফখরুল।

পরদিন ২৮ মার্চ সকালে অভিযুক্ত অধ্যক্ষের বিচারের দাবিতে রাফির পরিবার ও এলাকার কিছু যুবক পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল করে। এর কিছুক্ষণ পর সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদের সদস্যদের নেতৃত্বে মাদ্রাসা থেকে বিপুল সংখ্যক ছাত্রছাত্রী মিছিল ও মানববন্ধন করে। মিছিলের অগ্রভাগে থেকে তাদের সহায়তা করেন মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সদস্য পৌর কাউন্সিলর আওয়ামী লীগ নেতা মকছুদ আলম। তাদের মানববন্ধনের পাশে কলেজ রোডের সামনে সিরাজ-উদ-দৌলার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোনাগাজী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা মানববন্ধন করে। তাদের সহায়তা করেন মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সাবেক সদস্য পৌর কাউন্সিলর শেখ আব্দুল হালিম মামুন। পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন ও মিছিল চলাকালে সিরাজ-উদ-দৌলার মুক্তির দাবিতে করা মিছিলের ব্যানার কাউন্সিলর মামুন কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করলে অপর কাউন্সিলর মকছুদ আলমের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে মডেল থানার ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে উভয় গ্রুপকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেন।

পরদিন সকালে আবারও সিরাজ-উদ-দৌলা মুক্তি পরিষদের সদস্যরা মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করে। দুপুরে মাদ্রাসার আরবি শিক্ষক জামায়াত নেতা ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হোছাইন আহাম্মদের আয়োজনে মাদ্রাসায় শিক্ষকরা সিরাজ-উদ-দৌলার মুক্তি চেয়ে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। ওই সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাওলানা হোছাইন অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন রয়েছে বলে জানান। প্রশ্ন উঠেছে শ্নীলতাহানির শিকার ছাত্রীর পক্ষে অবস্থান না নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা কেন অভিযুক্ত অধ্যক্ষের পক্ষাবলম্বন করল? কারা এবং কোন উদ্দেশ্যে মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের অধ্যক্ষের পক্ষে মাঠে নামিয়েছে?

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শ্নীলতাহানির শিকার ছাত্রী রাফি ও তার পরিবার ইসলামের শত্রুদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে মাদ্রাসার সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে- এমন প্রচার করে মাদ্রাসার ছাত্রছাত্রীদের উত্তেজিত করে তোলেন মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও অপর শিক্ষক আবচার উদ্দিন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাদ্রাসার এক শিক্ষক জানিয়েছেন, ওই রাতেই মাওলানা হোছাইন, আবচার উদ্দিনসহ জামায়াত সমর্থিত কয়েকজন শিক্ষক, আওয়ামী লীগ নেতা পৌর কাউন্সিলর মকছুদ আলমের সহযোগিতায় মাদ্রাসার বর্তমান ও সাবেক ছাত্ররা মিলে ২৪ সদস্য বিশিষ্ট সিরাজ-উদ- দৌলা মুক্তি পরিষদ গঠন করে। তারা শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করার পাশাপাশি মামলা তুলে নিতে রাফি ও তার পরিবারকে হুমকি এবং বিভিন্ন উপায়ে তাদের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে তারা ও তাদের সহযোগীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাফিকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে আক্রমণ অব্যাহত রাখে। তাদের এসব কর্মকাণ্ডে রাফি ও তার পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

বক্তব্য জানার জন্য রাফি হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি কাউন্সিলর মকছুদ আলমকে ফোন দিলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হোছাইন আহাম্মদ মোবাইল ফোনে সমকালকে বলেন, আমি সিরাজ-উদ-দৌলার শাস্তি দাবি করছি। তাহলে তার মুক্তি পরিষদ কেন গঠন করেছেন এবং কেন তাদের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেছেন এমন প্রশ্নে তিনি নামাজ রয়েছে বলে ফোন কেটে দেন। উৎস: সমকাল।

ad

পাঠকের মতামত