277282

বাবা বলেছিলেন আমাকে এই স্কুলে ভর্তি করে দেবেন: প্রধানমন্ত্রী

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে কুমুদিনী কমপ্লেক্সে গিয়ে ছোটবেলার স্মৃতিচারণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এখানে একবার এসেছিলাম, সেটা ৫৬ বা ৫৭ সালে। আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মাসহ সবাই এসেছিলেন। দীর্ঘ সময় এখানে ছিলেন। এই স্কুলটা, হাসপাতাল সব ঘুরে ঘুরে দেখেছেন তারা। খুব ছায়ার মতো আমার এইটুকু স্মৃতি মনে আছে। তবে মনে আছে এই জায়গা এতো সুন্দর দেখে বাবা বলেছিলেন আমাকে এই কুমুদিনী স্কুলে ভর্তি করে দেবেন। তবে হোস্টেলে রেখে পড়ানো আমার মায়ের খুব একটা মনোপুত ছিল না। তাছাড়া এরপর ৫৮ সালে মার্শাল ল হয়। আমার বাবাকে জেলে নিয়ে যায়। আমাদের পড়াশোনা এমনিতেই বন্ধ। পরে আর আসা হয়নি। তবে ৮১ সালে দেশে ফেরার পর আমি অনেকবারই এসেছি।’

মির্জাপুরে কুমুদিনী কমপ্লেক্সে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণপদক প্রদান এবং জেলার ৩১টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে টাঙ্গাইলে যান প্রধানমন্ত্রী। স্বর্ণপদত প্রদানের পর তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে আসতে পেরে আজ সত্যি নিজেকে ধন্য মনে করছি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে গণহত্যা চালিয়েছিল, মা বোনদের ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল, গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়েছিল, সেই একাত্তর সালেই ৭ মে হানাদাররা নারায়ণগঞ্জের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট থেকে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার একমাত্র পুত্র ভবানী প্রসাদ সাহাকে ধরে নিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলে। তাদের পরিবার আর কখনোই তাদের ফিরে পায়নি। স্বজন হারানোর বেদনা যে কত কঠিন, এই বেদনা যে কত যন্ত্রণাদায়ক সেটা আমরা বুঝতে পারি।’

দারবীর রণদা প্রসাদ সাহা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তিনি এক হাতে অর্থ উপার্জন করেতেন, আরেক হাতে বিলিয়ে দিতেন। মেয়েদের শিক্ষায়, চিকিৎসায় তিনি অর্থদান করেছেন। মানুষকে মানুষের মতো বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। কুমুদিনী ট্রাস্ট্রের মাধ্যমে অনেক কাজ করা হচ্ছে। জনগণের সেবায় সবসময় আমাদের সহযোগিতা থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘স্বজন হারানোর বেদনা নিয়েই আমার যাত্রা শুরু। একটাই আলো ছিল, জনগণের ভালোবাসা। সেটা নিয়েই কাজ করেছি। মনে রেখেছি বাবা কী করতে চেয়েছিলেন। মনে রেখেছি তার কাজের একটুকুও যদি আমি করতে পারি সেটাই হবে আমার বড় সাফল্য। বাংলাদেশকে এখন বিশ্ব উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে দেখে। আমরা আরও অনেকদূর এগিয়ে যেতে চাই।’

কুমুদিনী পরিবার ২০১৫ সালে রণদা প্রসাদ স্বর্ণপদক প্রবর্তন করে। এ বছর যে চার বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা স্বর্ণ পদক দেওয়া হলো তারা হলেন- পূর্ব পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (মরণোত্তর), জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম (মরণোত্তর), নজরুল গবেষক প্রফেসর রফিকুল ইসলাম ও বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী শাহবুদ্দীন আহমেদ। সোহরাওয়ার্দীর পক্ষে বঙ্গবন্দু কন্যা শেখ রেহেনা এবং জাতীয় কবির পক্ষে কবির নাতনি খিলখিল কাজী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী জানান, হোসেইন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ছেলে রাশেদ সোহরাওয়ার্দী পুরস্কার নিতে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেন। তাই শেখ রেহানা তার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন।প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্যে ভারতেশ্বরী হোমসের শিক্ষার্থীরা ডিসপ্লে ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রদর্শন করে।এর আগে কুমুদিনী কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী ফলক উন্মোচনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের আনুষ্ঠানিকতা সারেন।কুমুদিনী ট্রাস্টের পরিচালক ভাষা সৈনিক প্রতিভা মুৎসুদ্দি, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ জলিল, কুমুদিনী উইমেন্স মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল হালিম, ভারতেশ্বরী হোমসের অধ্যক্ষ মো. আনোয়ারুল হক এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন: ধেরুয়া রেলওয়ে ওভারপাস; ৩৩/১১ কেভি গ্রিড সাবস্টশেন; রাবনা বাইপাস; ৩৩/১১ কেভি ইনডোর উপকেন্দ্র; ইন্দ্রবলেতা, পোড়াবাড়ী, বাসাইল, দেলদুয়ার, নাগরপুর উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুতায়ন, সখিপুর উপজলো কমপ্লেক্সের প্রশাসনকি ভবন সম্প্রসারণ ও হলরুম উদ্বোধন, কালহাতী (ধুনাইল)-সয়ার হাট উদ্বোধন; মির্জাপুর উপজলো কমপ্লেক্সের সম্প্রসারিত ভবন উদ্বোধন, টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু ভিআইপি অডিটোরিয়ামের উদ্বোধন, মির্জাপুর উপজলো মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স উদ্বোধন এবং উপজলো প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রের উদ্বোধন।

ভিত্তি পেল যেসব প্রকল্প: কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের ভারতশ্বেরী হোমস মাল্টিপারপাস হল এবং ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট নার্সিং কমপ্লেক্স। এলেঙ্গা-জামালপুর জাতীয় মহাসড়ক (এন-৪) প্রশস্তকরণ প্রকল্প (টাঙ্গাইল অংশ), এলেঙ্গা-ভূঞাপুর-চরগাবসারা সড়কে ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত সেতু ও একটি কালভার্ট পুঃননির্মাণ এবং আঞ্চলিক মহাসড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তি স্থাপন, টাঙ্গাইল-দেলদুয়ার জেলা মহাসড়ক, করটিয়া (ভাতকুড়া)-বাসাইল জেলা সড়ক এবং পাকুল্লা-দেলদুয়ার-এলাসিন অংশের প্রশস্তকরণ প্রকল্প, কালীহাতি উপজলো কমপ্লেক্সের প্রশাসনকি ভবন সম্প্রসারণ ও হলরুম নির্মাণ, করটিয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ, বাতেন বাহিনী মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, রসুলপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস, লোকেরপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিস নির্মাণ প্রকল্প।

এছাড়া দেলদুয়ার উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কার্যালয় নির্মাণ, জেলা সদর মডেল মসজিদ নির্মাণ, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণ, বাসাইল উপজলো মডেল মসজিদ নির্মাণ, টাঙ্গাইল সদর উপজলো ভূমি অফিস নির্মাণ, সখিপুর উপজেলা ভূমি অফিস নির্মাণ, মধুপুর উপজেলা ভূমি অফিস নির্মাণ, মির্জাপুর উপজলো ভূমি অফিস নির্মাণ এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজের নতুন ভবন নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।বিকালে একই স্থানে তিনি জেলার সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সফর শেষে বিকালে প্রধানমন্ত্রী রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হন।

ad

পাঠকের মতামত