275661

ভয়ে হাসপাতাল থেকে পালিয়েও বাঁচলেন না ফাহিমা

জেলা প্রতিনিধি: দু’পায়ে পচন ধরা সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের সেই ফাহিমা খাতুন মারা গেছেন। সোমবার বেলা পৌনে ২টার দিকে নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি। অভাবের সংসারে স্ত্রীর চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না স্বামী ফজিজুল ইসলাম।মানবিক এ ঘটনাটি নিয়ে একটি নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। তবে চিকিৎসা নেননি ফাহিমা খাতুন ও তার পরিবার। অবশেষে বিনা চিকিৎসায় মারা গেলেন তিনি।

১ মার্চ ‘ফাহিমার পা দুটি পচে গেছে, কাটার টাকা নেই’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর ফাহিমার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস দেন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক।৪ মার্চ ‘ফাহিমাকে চিকিৎসার আশ্বাস দিলেন ডিসি’ শিরোনামে আরেকটি সংবাদ প্রকাশ হয়।

৫ মার্চ জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধায়নে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ফাহিমাকে। জরুরিভাবে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকরা সম্মিলিত সিদ্ধান্তে ফাহিমাকে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেন। ওইদিন রাতেই জেলা প্রশাসকের সহায়তায় ফাহিমাকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।

পরদিন সকালে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. কাজল সরকারের সঙ্গে ফাহিমা খাতুনের চিকিৎসার পরামর্শ করেন ডিসি মোস্তফা কামাল। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সেখানে ভর্তি করা সেখানে। চিকিৎসকরাও বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখেন এবং পরবর্তী চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয়গুলো জানিয়ে দেন। জেলা প্রশাসকের তত্বাবধায়নে যখন ফাহিমার চিকিৎসা শুরু হয়েছে তখন ৬ মার্চ বুধবার সন্ধ্যার আগে হাসপাতাল থেকে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়িতে চলে আসেন ফাহিমা ও তার পরিবার।

এর আগে ফাহিমা খাতুনের মেয়ে সোনিয়া আক্তার জানিয়েছিলেন, বাবার ভ্যান চালানো উপার্জন দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলে আমাদের। বাবাও অসুস্থ। এক মাস আগে মায়ের পায়ে ব্যথা শুরু হয়। তখন ডাক্তার দেখানো হয়। ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খাওয়ানোর পর থেকে পায়ে পচন ধরেছে। চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়। এখন পায়ের মাংস পচে পুজ বের হচ্ছে। ডাক্তার রোগটির নাম বলতে পারছেন না। তবে ডাক্তার বলেছেন, পা কেটে ফেলতে হবে। আমার বাবার টাকা নেই। পা কাটার টাকা নেই বাবার কাছে।

ফাহিমা খাতুনের মৃত্যুর পর স্বামী ফজিজুল ইসলাম বলেন, ঢাকায় চিকিৎসা হবে না জেনেই আমার স্ত্রীকে বাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। আমার রোগী আমি সব বুঝি। তার হায়াত এ পর্যন্ত ছিল। এখন মারা গেছে আপনারা দোয়া করবেন। এছাড়া কিছু চাওয়ার নেই।

স্থানীয় দেয়াড়া ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা ইউপি সদস্য ও ফাহিমার প্রতিবেশী আকলিমা খাতুন জানান, চিকিৎসার জন্য ঢাকায় গিয়েও সেখান থেকে চিকিৎসা না নিয়ে বাড়িতে চলে এসে আজ মৃত্যুবরণ করতে হলো। সেখানকার চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার পায়ে গ্যাংগ্রীন হয়েছে। এটা দ্রুত শরীরের সবখানে ছড়িয়ে পড়বে। অতি দ্রুত পচন ধরা দুই পা কেটে না ফেললে অল্প দিনের মধ্যেই মারা যাবে ফাহিমা।

তিনি আরও বলেন, তারা পা কেটে ফেলবে জেনে না বলেই হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসলো। গতকাল রাত থেকে গায়ে জ্বালাপোড়া শুরু হয়। কথা বলতে বলতেই আমার হাতের ওপর মারা গেল ফাহিমা।ফাহিমার মৃত্যুর সংবাদ শুনে দুঃখ প্রকাশ করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস.এম মোস্তফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, ঘটনাটি আমার দৃষ্টিতে আসার পর আমি চেষ্টা করেছি ফাহিমাকে সুস্থ করে তোলার। কিন্তু তার পরিবার চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে কোনো সহায়তা করেনি। সহযোগিতা না করলে আমাদের কিছু করার থাকে না বলে জানান তিনি। সূত্র: জাগো নিউজ

ad

পাঠকের মতামত